নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: গাজীপুরের শ্রীপুরে বনভূমি জবরদখল করে মার্কেট স্থাপনা ও ঘরবাড়ি নির্মাণের মহাউৎসবে মেতে উঠেছে বনখেকোরা। যত্রতত্র বনভূমি জবরদখল যেন একটি উৎসবে রূপ নিয়েছে। বনভূমি জবরদখল বনের গাছপালা উজারে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভাবে সহযোগিতা করছে রাজনৈতিক দলের নেতারা। এতে করে সহজ হচ্ছে বনভূমি জবরদখল করে মার্কেটসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণে। বেশিরভাগ বনভূমি জবরদখল হচ্ছে রাস্তা ঘেঁষে থাকা বনের দামি জমি। বনভূমি উদ্ধারে গিয়ে প্রতিনিয়ত হামলা ও মারধরের শিকার হচ্ছে বন কর্মীরা। গত একমাসে রেকর্ড পরিমাণ বনভূমি জবরদখল হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট বন কর্মকর্তা। এভাবে বনভূমি জবরদখল হতে থাকলে পরিবেশের জন্যও মারাত্মক হুমকি বলে মনে করছেন পরিবেশবাদীরা। দ্রুত সময়ের মধ্যে বনভূমি জবরদখল বন্ধ না করতে পারলে পরিবেশ বিপর্যের পরিস্থিতি দেখছেন তারা।
সরজমিন ঘুরে ও সংশ্লিষ্ট বন বিভাগের রেঞ্জ সূত্রে জানাযায়, গত একমাসে শ্রীপুর রেঞ্জের ৭টি বিটে কমপক্ষে ২৪ বিঘা জমি জবরদখল করে গড়ে তুলা হয়েছে মার্কেটসহ নানান স্থাপনা। সবচেয়ে বেশি জবরদখল হয়েছে শ্রীপুর সদর বিট, কাওরাইদ, রাথুরা।
সরজমিনে খোঁজ খবর নিয়ে দেখাযায়, বন বিভাগের শ্রীপুর রেঞ্জের অধীনে ৭টি বিট অফিস রয়েছে। গত একমাসে প্রায় সকল বিটে রেকর্ড পরিমাণ বনভূমি জবরদখল হয়েছে। সবচেয়ে বেশি জবরদখল হয়েছে শ্রীপুর সদর, রাথুরা ও কাওরাইদ বিটে। এছাড়াও গোসিঙ্গা, সদর, শিমলাপাড়া, সিংড়াতলী বিটে রেকর্ড পরিমাণ বনভূমি জবরদখল করে গড়ে তুলা হয়েছে মার্কিটসহ বিভিন্ন স্থাপনা। বেশিভাগ বনভূমি জবরদখল হয়েছে রাস্তা ঘেঁষে থাকা দামি জমি। রাস্তার পাশে নির্মাণ করা হয়েছে মার্কেট। ইতিমধ্যে বিভিন্ন বিটে বনভূমি জবরদখল করে গড়ে তুলা হয়েছে মার্কেট। রাতদিন চলছে কর্মযজ্ঞ। বন বিভাগের কর্মকর্তাদের তোয়াক্কা না করে তাদের সামনে চালাচ্ছে কর্মযজ্ঞ। চোখের সামনে নির্মাণ হচ্ছে শতশত পাকাবাড়ি, দোকানপাটসহ বিভিন্ন স্থাপনা। কোন কোন স্থাপনার কাজ শুরু হয়েছে। কোন কোন স্থাপনার কাজ অর্ধেক, আবার কোন কোন স্থাপনা পুরোপুরি শেষ। হচ্ছে ঢেউ টিনের ছাউনির কাজ। বনভূমিতে দেখা যায় হাজার হাজার ইটের স্তুপ। এছাড়াও বন বিভাগের বিভিন্ন গাছপালা কেটে উজার করা হচ্ছে বনভূমি।
ভাওয়ালগড় বাঁচাও আন্দোলনের মহাসচিব রিপন আনসারী বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বনভূমি জবরদখলের চিত্র দৃশ্যমান। বনভূমি রক্ষায় গিয়ে হামলার শিকার হচ্ছে বন কর্মকর্তারা। বিষয়টি খুবই আশ্চর্যের। বনভূমি জবরদখল করে বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণের ফলে পরিবেশের উপর এর প্রভাব পড়ছে। অবৈধ দখলদারদের কারণে বনের মূল্যবান শাল গজারিসহ নানান বৃক্ষ ধ্বংস হচ্ছে এবং সেই সাথে বন্যপ্রাণীর বাসস্থান হুমকির মুখে পড়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে বনভূমি রক্ষার কার্যকর পদক্ষেপ জরুরি।
শ্রীপুর সদর বিট কর্মকর্তা মো. আলাল খান বলেন, গত ৯ আগস্ট শ্রীপুর রেঞ্জের সদর বিটের কেওয়া এলাকায় বনভূমি জবরদখল হচ্ছে এমন খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গেলে জবরদখলকারীরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে তেড়ে আসে। আমরা এসময় প্রাণ রক্ষা করে চলে আসি।
কাওরাইদ বিট কর্মকর্তা গণি শাহাদাত বলেন, কাওরাইদ বিটের সবচেয়ে বেশি জবরদখল হচ্ছে নয়াপাড়া গ্রামের কাশেমপুর বাজার ও তার আশপাশে। এখানে জবরদখল প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করতে রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীরা। আমরা ভয়ে তাদের নামও উচ্চারণ করতে পাচ্ছি না। তবুও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে উর্ধতন কতৃপক্ষকে সঙ্গে নিয়ে দুএকটি মার্কেট স্থাপনা ভেঙে গুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। আমরা সব সময় হুমকির উপর আছি।
শ্রীপুর রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. মোকলেছুর রহমান বলেন, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হওয়ার পর রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মী পরিচয় দিয়ে বনভূমি জবরদখল করে মার্কেট নির্মাণ বসতবাড়ি নির্মাণ করে বনভূমি জবরদখল করছে। বিভিন্ন বিট থেকে বনের শাল গজারি গাছ কেটে নিয়ে বন উজার করছে। ইতিমধ্যে আমরা সব বিটের বনকর্মীদের সহযোগিতায় উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করছি। অনেক জায়গায় হামলার শিকার হতে হচ্ছে। জবরদখলকৃত বনভূমি উদ্ধারে আমরা সেনাবাহিনীর সহযোগিতা চেয়েছি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।