ইনেস পোল, ডয়চে ভেলে: প্রতিবেদন প্রকাশের উপর নিষেধাজ্ঞা, রুটি-রুজি বন্ধ করা ও কারাদণ্ড সাধারণত স্বৈরাচারী রাষ্ট্রের আচরণের মধ্যে পড়ে। এভাবে তারা স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের অধিকার সঙ্কুচিত করতে চায়।
ইতোমধ্যে এমন সব বিপদ দেখা যাচ্ছে, যা সহজে বোঝা যায় না। তার মধ্যে সবার আগে রয়েছে ইন্টারনেটের ভাইরাল কাঠামো। মানুষ এবং ইদানীংকালে আরো বেশি যন্ত্র মিথ্যা, কারচুপি করা ভিডিও ও ছবি ছড়িয়ে দিচ্ছে৷ সুপরিকল্পিতভাবে জনমত প্রভাবিত করাই এর উদ্দেশ্য৷ ‘ফেক নিউজ’, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মিথ্যা ছড়ানোর অভিযান, অপবাদ ও হুমকি দৈনন্দিন জীবনের অঙ্গ হয়ে উঠেছে৷ আনাড়ি লোকের কাঁচা কাজ নয়, বরং পেশাদারি সংবাদমাধ্যমও আরো বেশি করে এমন কাজ করছে৷ রাশিয়া টুডে এবং দুর্ভাগ্যবশত আল জাজিরাও এমন কাজে লিপ্ত হচ্ছে৷ তাদের সংবাদ পরিবেশনের ধারা বেশ মনোরম মনে হতে পারে৷ এমনকি কখনো কখনো বেশ মজাদার ও তীক্ষ্ণ রসে ভরা৷ জটিল এক জগতে তারা বিষয়বস্তুগুলি দর্শকদের জন্য সহজ করে উপস্থাপন করার টোপ দিয়ে থাকে৷ তাছাড়া একাধিক দেশের সরকার খোলামেলা ইন্টারনেটে রাশ টেনে দেশবাসীর জন্য সেন্সর করে এক ইন্ট্রানেট কাঠামো গড়ে তোলার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে৷ আমরা ইরান, চীন, রাশিয়া ও তুরস্কে এমনটা লক্ষ্য করছি৷
এমন প্রচেষ্টার একটি মাত্র জবাব হতে পারে৷ মানুষকে সত্য ও মিথ্যার মধ্যে পার্থক্য করা শিখতে হবে৷ এই ক্ষমতা স্কুলশিক্ষার পাঠক্রমের অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ করে তুলতে হবে৷ প্রাপ্তবয়স্কদের জন্যও এমন শিক্ষার আকর্ষণীয় পাঠক্রমের ব্যবস্থা করতে হবে৷ এর মাধ্যমে মানুষকে বোঝাতে হবে যে, শেষ পর্যন্ত শুধু সংবাদ মাধ্যমের অধিকার হুমকির মুখে পড়ছে না৷ রাষ্ট্রের দমন নীতির ভয় না করে পরিচিত পরিবেশে স্বাধীনভাবে নিজস্ব মত প্রকাশের অধিকারও বিপন্ন হয়ে উঠছে৷
রাজনৈতিক নেতাদের দায়বদ্ধতা: জার্মানি ও ইউরোপসহ গোটা বিশ্বের গণতান্ত্রিক নেতারা চীনকে তোয়াজ করতে পরস্পরের মধ্যে প্রতিযোগিতায় নেমেছেন৷ সে দেশে সংবাদ মাধ্যমের অধিকারের কোনো অস্তিত্ব নেই৷ ডয়চে ভেলের মতো নিরপেক্ষ বিদেশি সংবাদমাধ্যমও সেখানে বাধার মুখে পড়ে৷ কিন্তু তাতে তাঁদের কিছুই এসে যায় না৷ অর্থনীতি জগতও চীনের ক্ষেত্রে বড় ব্যবসাকে অগ্রাধিকার দেয়৷ সে ক্ষেত্রে মানবাধিকারের কোনো ভূমিকা নেই৷
ইরানের ক্ষেত্রেও অর্থনৈতিক মাপকাঠি নিয়ে আলোচনা হয়৷ সে দেশের রেভোলিউশনরি গার্ড বাহিনীর কুখ্যাত কারাগারে নিপীড়িত ২০ জনেরও বেশি সাংবাদিকদের কথা ভাবা হয় না৷ বাংলাদেশ ও পাকিস্তানে ব্লগাররা নিজেদের জীবন বিপন্ন করে নিজেদের দেশে উগ্র ইসলামপন্থিদের উত্থানের চিত্র তুলে ধরেন৷ বিদেশ থেকে যথেষ্ট সহায়তা তাঁরা পান না৷ সৌদি আরবে নারীরা সিনেমা হল ও স্টেডিয়ামে যাবার এবং গাড়ি চালানোর অধিকার পেয়েছেন বলে গোটা বিশ্ব সে দেশের যুবরাজের প্রশংসায় পঞ্চমুখ৷ কিন্তু ব্লগার রাইফ বাদাউয়ি যে এখনো কারাবন্দি রয়েছেন, তা নিয়ে কোনো উচ্চবাচ্য নেই কেন?
এই তালিকা আরো দীর্ঘ হতে পারে৷ এই তালিকা বিষণ্ণতায় ভরা৷ সংবাদমাধ্যমের অধিকার খর্ব করার বেড়ে চলা প্রবণতার বিরুদ্ধে রাজনৈতিক নেতারা কী করছেন, সে বিষয়ে প্রশ্ন তোলার জন্য আজকের দিনটি অত্যন্ত উপযুক্ত৷ তাঁরা কি স্বৈরাচারী শাসকদের সামনে যথেষ্ট স্পষ্টভাবে আমাদের মূল্যবোধ তুলে ধরছেন? সেই মূল্যবোধ লক্ষণীয়ভাবে লঙ্ঘন করলে তাঁরা কি ব্যবসা-বাণিজ্যের স্বার্থ বলি দিতে প্রস্তুত? উন্নয়ন সাহায্য দেবার ক্ষেত্রে মানবাধিকার ও সংবাদ মাধ্যমের পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে পারবেন কি তাঁরা?
সাংবাদিকরাই মূল চালিকা শক্তি: সংবাদমাধ্যমের অধিকার শুধু উপর থেকে রক্ষা করা হয় না৷ আইনি কাঠামো একটি বিষয়৷ তবে প্রত্যেক সাংবাদিকের নিজস্ব মনোভাবও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ বিশেষ করে যেসব দেশে সংবাদ মাধ্যম যথেষ্ট স্বাধীনতা ভোগ করে, সেসব দেশের সাংবাদিকদের এ ক্ষেত্রে আদর্শ ভূমিকা পালন করতে হবে৷ যাঁরা কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে কাজ করে চলেছেন, তাঁদের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে উঠতে হবে৷
আমার কাছে সাংবাদিক হওয়ার অর্থ নিজস্ব বিশ্বাস অথবা সহকর্মীদের ভাবনাচিন্তার ক্ষেত্রেও সন্দেহ প্রকাশ করা৷ এমনকি নিশ্চিত হলেও প্রশ্ন তুলতে হবে৷ ভুল দিক থেকে করতালির ভয় থাকলেও চলবে না৷ জার্মানিতে দক্ষিণপন্থি পপুলিস্ট এএফডি দলের রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে আদৌ কথা বলা উচিত কিনা, এমন আলোচনা সম্পর্কে আমি নিজে অত্যন্ত সন্দিহান৷ কোনো রাজনৈতিক শিবির, অপ্রীতিকর রাজনৈতিক নেতা অথবা আমাদের অপছন্দের অন্য কোনো ব্যক্তিত্বকে এড়িয়ে চলি, তাহলে এমন এক শূন্যস্থান সৃষ্টি হবে, যা পূরণ করতে অন্যরা এগিয়ে আসবে৷
এমনটা করলে শেষ পর্যন্ত সংবাদমাধ্যমের অধিকারের ক্ষতি হবে, আজকের দিনে যা আমরা তুলে ধরার চেষ্টা করছি। সূত্র: ডয়চে ভেলে
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।