বিউটি আক্তার, পেশায় একজন সাংবাদিক। বড় পরিবারে সবল উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তিনি। শুধু চাকরির বেতন দিয়ে ব্যয় মেটানো সম্ভব হয় না। উচ্চ মূল্যস্ফীতির দুর্দিনে কয়েক লাখ টাকার সঞ্চয়পত্রই ছিল ভরসা। এখনো ভরসা এই সঞ্চয়পত্রেই। কিন্তু গতকাল সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমানোর সিদ্ধান্তে একটু উদ্বেগেই রয়েছেন তিনি। শুধু তিনিই নন, সঞ্চয়পত্রের আয়ে ভরসা করা দেশের মধ্যবিত্তরা বড় উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন।
দেশের মধ্যবিত্তদের ওপর নতুন চাপ সৃষ্টি হয়েছে সঞ্চয়পত্রে সুদের হার কমানোর খবরে। তিন বছরের বেশি সময় উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সঞ্চয়পত্রই ছিল মধ্যবিত্তের অন্যতম ভরসার জায়গা। সব ধরনের সঞ্চয়পত্রে মুনাফার হার কমিয়ে চলতি বছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ের জন্য নতুন হার নির্ধারণ করেছে সরকার। সরকারের নতুন সিদ্ধান্তে মুনাফার সর্বোচ্চ হার ধরা হয়েছে প্রায় ১১ দশমিক ৯৮ শতাংশ, আর সর্বনিম্ন হার হবে ৯ দশমিক ৭২ শতাংশ। এতদিন মুনাফার সর্বনিম্ন হার ১০ দশমিক ১৩ শতাংশ ও সর্বোচ্চ ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ ছিল।
তবে কয়েকটি স্কিমে বিদ্যমান মুনাফার হার বহাল থাকবে। ওয়েজ আর্নার ডেভেলপমেন্ট বন্ড, ইউএস ডলার প্রিমিয়াম বন্ড, ইউএস ডলার ইনভেস্টমেন্ট বন্ড ও ডাকঘর সঞ্চয় ব্যাংক সাধারণ হিসাব–এই চার ধরনের স্কিমে বিদ্যমান মুনাফার হার বহাল থাকবে।
এর আগে সবশেষ গত জানুয়ারি মাসে ছয় মাসের জন্য মুনাফার হার ঘোষণা করা হয়েছিল। সরকার প্রতি ছয় মাস অন্তর অন্তর সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার নির্ধারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সে অনুযায়ী মুনাফার নতুন হার ঠিক করে জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর সোমবার প্রজ্ঞাপন জারি করে।
আগামী ছয় মাসে যারা নতুন সঞ্চয়পত্র কিনবেন, তাদের ক্ষেত্রে মুনাফার নতুন হার প্রযোজ্য হবে। তবে আগে যারা সঞ্চয়পত্র কিনে রেখেছেন, তাদের ক্ষেত্রে ক্রয়কালীন সুদহার প্রযোজ্য হবে।
বিউটি আক্তার আমার দেশকে বলেন, আমার দুই ধরনের সঞ্চয়পত্র ছিল। একটি পাঁচ বছর মেয়াদি, আরেকটি পারিবারিক সঞ্চয়পত্র, যেটি থেকে প্রতি মাসেই মুনাফা তোলা যায়। সরকারের নতুন সিদ্ধান্তে এখন তা তুলে ফেলতে হবে। আর আগে থেকেই তা তুলে ফেলতে হবে। এখনো আস্থা তৈরি হয়নি।
তিনি বলেন, যেহেতু বেসরকারি খাতে চাকরির কোনো নিশ্চয়তা নেই। তাই সঞ্চয়পত্র থেকে সামান্য কিছু আয় হতো প্রতি মাসে। সেটিই ছিল বাড়তি আয়। এখন বাড়তি আয়েও যদি টান পড়ে তাহলে আমাদের মতো পরিবারগুলোর জন্য অবশ্যই দুশ্চিন্তার।
পরিবার সঞ্চয়পত্রের বেশকিছু সুবিধা আছে। যেমন প্রতি মাসেই মুনাফার টাকা তোলা যায়। যে কোনো সময় নমিনি বা মনোনিত নির্বাচন, পরিবর্তন ও বাতিল করা যায়। সঞ্চয়পত্রের ক্রেতার মৃত্যুর পর নমিনি সঙ্গে সঙ্গে সঞ্চয়পত্র নগদায়ন করে টাকা উত্তোলন করতে পারেন অথবা মেয়াদ পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত যথারীতি মাসে মাসে মুনাফা উত্তোলন করতে পারেন।
পুনর্নির্ধারিত হারের ক্ষেত্রে ৫ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের প্রথম ধাপের বিনিয়োগকারীদের বর্তমান সুদহার ১২ দশমিক ৪০ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১১ দশমিক ৮৩ শতাংশ পর্যন্ত হয়েছে। আর দ্বিতীয় ধাপের বিনিয়োগকারীদের সুদহার ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ থেকে কমে ১১ দশমিক ৮০ শতাংশ। পাঁচ বছর মেয়াদি বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র কিনতে গেলে প্রথম বছরে সুদ পাওয়া যেত ১০ দশমিক ১৩ শতাংশ হারে, সেখানে নতুন হার ৯ দশমিক ৭৪ শতাংশ করা হয়েছে।
৩ মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রের সুদহার প্রথম ধাপের বিনিয়োগকারীদের জন্য ১২ দশমিক ৩০ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ১১ দশমিক ৮২ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপের জন্য এ হার ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে ১১ দশমিক ৭৭ শতাংশে নেমে আসবে।
পেনশনার সঞ্চয়পত্রে সুদহার ১২ দশমিক ৫৫ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ১১ দশমিক ৯৮ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। দ্বিতীয় ধাপের বিনিয়োগে সুদহার ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ থেকে নেমে ১১ দশমিক ৮০ শতাংশ হয়েছে। নতুন হার অনুযায়ী প্রথম বছরে এ স্কিমে সুদহার নির্ধারণ করা হয় ৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ, যা আগে ছিল ১০ দশমিক ২৩ শতাংশ।
এছাড়া পারিবারিক সঞ্চয়পত্রের সুদহারও কমছে। এ স্কিমের সুদহার প্রথম ধাপের বিনিয়োগের জন্য ১২ দশমিক ৫০ শতাংশ থেকে কমে ১১ দশমিক ৯৩ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়েছে। দ্বিতীয় ধাপের ক্ষেত্রে ১২ দশমিক ৩৭ শতাংশ থেকে কমে এ সুদের হার ১১ দশমিক ৮০ শতাংশ ঠিক করা হয়।
সর্বশেষ পোস্ট অফিস ফিক্সড ডিপোজিটের সুদহার প্রথম ধাপের জন্য ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে কমিয়ে ১১ দশমিক ৭৭ শতাংশে আনা হয়েছে। আর দ্বিতীয় ধাপের বিনিয়োগের জন্য ১২ দশমিক ২৫ শতাংশ থেকে কমে ১১ দশমিক ৫৭ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।