দেশজুড়ে অর্থনৈতিক চাপে মানুষের জীবনযাত্রা যখন দিন দিন কঠিন হয়ে উঠছে, তখন একটি ইতিবাচক পদক্ষেপের আভাস পাওয়া যাচ্ছে—সঞ্চয়পত্র কেনার প্রক্রিয়া আরও সহজ হতে চলেছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) আগাম বাজেটে এমন একটি পরিবর্তনের কথা ভাবছে, যা সাধারণ জনগণের জন্য সঞ্চয়পত্র কেনাকে আগের চেয়ে সহজ করে তুলবে। আগের মতো শুধু কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) দিয়েই সঞ্চয়পত্র কেনার সুযোগ মিলতে পারে। এটি মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য বিশাল স্বস্তির কারণ হতে পারে, যারা করযোগ্য আয়ের আওতায় না পড়লেও বিনিয়োগ করতে চায়।
সঞ্চয়পত্র কেনার নিয়ম ও পরিবর্তনের পটভূমি
বর্তমানে সঞ্চয়পত্র কিনতে গেলে পাঁচ লাখ টাকার উপরে হলে আয়কর রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র (পিএসআর) দেখানো বাধ্যতামূলক। এই নিয়ম অনেককে জটিলতায় ফেলেছে, বিশেষত যাদের বার্ষিক আয় করযোগ্য নয়। তাদের জন্য প্রতিবছর শূন্য রিটার্ন জমা দিতে হয়, যা সময়সাপেক্ষ ও হয়রানিমূলক। এনবিআর এবার ভাবছে এই বাধ্যবাধকতা তুলে দেওয়ার বা নির্দিষ্ট পরিমাণ সঞ্চয়পত্র পর্যন্ত শিথিল করার। অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ আগামী বাজেট ঘোষণায় এই সিদ্ধান্ত জানাতে পারেন।
Table of Contents
জাতীয় সঞ্চয় অধিদপ্তর বর্তমানে চার ধরনের সঞ্চয়পত্র বিক্রি করে থাকে: বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্র, তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্র, পরিবার সঞ্চয়পত্র এবং পেনশনার সঞ্চয়পত্র। এর মধ্যে পরিবার সঞ্চয়পত্র সবচেয়ে জনপ্রিয়, যেটি শুধুমাত্র নারীদের জন্য উন্মুক্ত।
নতুন নীতিমালায় সম্ভাব্য প্রভাব
নতুন নীতিমালা বাস্তবায়িত হলে নিম্ন-মধ্যবিত্ত, অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, বিধবা নারীসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের জন্য সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ অনেক সহজ হবে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এতে সরকার যেমন অভ্যন্তরীণ ঋণ গ্রহণে স্বাচ্ছন্দ্য পাবে, তেমনি জনগণের সঞ্চয় অভ্যাসও বাড়বে।
বর্তমানে উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কমেছে এবং অনেকে সঞ্চয়পত্র ভেঙে ফেলছেন খরচ সামলাতে। এতে করে সরকারের নিট ঋণ ঋণাত্মক হয়ে পড়েছে। গত সাত মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রির পরিমাণ ৩৬ হাজার ৪৬৩ কোটি টাকা, যেখানে একই সময়ে ভাঙানো হয়েছে ৪৩ হাজার ৪৭৬ কোটি টাকা। ফলে সরকারের নিট ঋণ ৭ হাজার কোটি টাকা ঋণাত্মক হয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে নতুন নীতিমালা চালু হলে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে উৎসাহ বাড়বে। গত জানুয়ারিতে সঞ্চয়পত্রের সুদহার বাড়ানোর পর কিছুটা উন্নতি দেখা গেছে। আগামী অর্থবছরে ২০ হাজার কোটি টাকা ঋণ নেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে সঞ্চয়পত্র বিক্রির মাধ্যমে।
সাধারণ মানুষের জন্য এই পরিবর্তনের তাৎপর্য
অনেক অবসরপ্রাপ্ত কর্মচারী এবং নিম্নআয়ের মানুষ তাদের শেষ সঞ্চয় হিসেবে সঞ্চয়পত্রে ভরসা রাখেন। তবে রিটার্ন জমা দেওয়ার জটিলতা এবং অনলাইনে রিটার্ন ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা তাদের জন্য এটি কঠিন করে তোলে। এনবিআরের সাবেক সদস্য সৈয়দ আমিনুল করিম বলেন, “এটি হলে সাধারণ মানুষ স্বস্তি পাবে। বিশেষত বিধবা নারী, অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা যারা করযোগ্য আয়ের আওতায় পড়েন না, তাদের জন্য এটি একটি বড় সুবিধা।”
এই সিদ্ধান্তটি শুধু একটি আর্থিক পরিবর্তন নয়, এটি একটি সামাজিক কল্যাণমূলক উদ্যোগ হিসেবেও বিবেচিত হতে পারে। সরকারের পক্ষ থেকে বাস্তবমুখী এই পদক্ষেপ সাধারণ মানুষের আস্থাকে আরও মজবুত করবে।
অন্যান্য প্রাসঙ্গিক বিবেচনা
- বর্তমানে ৪৫টি সরকারি-বেসরকারি সেবা গ্রহণে পিএসআর বাধ্যতামূলক।
- ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৮৩ হাজার ৫০০ কোটি টাকার সঞ্চয়পত্র বিক্রির লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে।
- সর্বশেষ করবর্ষে ১৬ লাখ রিটার্ন জমা পড়েছে, যার মধ্যে দুই-তৃতীয়াংশ শূন্য রিটার্ন।
বিশ্লেষকদের মতে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেটে এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে সাধারণ মানুষের সঞ্চয় প্রবণতা যেমন বাড়বে, তেমনি সরকারের অর্থনৈতিক ভারসাম্য রক্ষায়ও সহায়তা করবে।
এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে, “সঞ্চয়” আবারও সাধারণ মানুষের কাছে একটি ভরসার প্রতীক হয়ে উঠবে।
আজকের আবহাওয়ার খবর: তাপপ্রবাহ-বৃষ্টি নিয়ে পূর্বাভাসে যা জানা গেলো
প্রশ্নোত্তর (FAQs)
সঞ্চয়পত্র কিনতে এখন কি রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক?
বর্তমানে পাঁচ লাখ টাকার বেশি সঞ্চয়পত্র কিনতে হলে রিটার্ন জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক। তবে এটি ভবিষ্যতে পরিবর্তিত হতে পারে।
কে কে পরিবার সঞ্চয়পত্র কিনতে পারেন?
পরিবার সঞ্চয়পত্র শুধুমাত্র নারীরা কিনতে পারেন। এটি তাদের জন্য একটি বিশেষ সুবিধা হিসেবে গৃহীত।
সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ কতটা নিরাপদ?
সঞ্চয়পত্র সরকারি নিরাপত্তায় পরিচালিত হওয়ায় এটি অত্যন্ত নিরাপদ একটি বিনিয়োগ মাধ্যম।
সঞ্চয়পত্রে মুনাফা কতদিন পর পর দেওয়া হয়?
তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক সঞ্চয়পত্রে প্রতি তিন মাসে একবার মুনাফা প্রদান করা হয়।
সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগে করছাড় পাওয়া যায় কি?
নির্দিষ্ট পরিমাণ বিনিয়োগে সঞ্চয়পত্রে আয়কর ছাড়ের সুযোগ রয়েছে, তবে তা নির্ভর করে মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ও সঞ্চয়পত্রের ধরন অনুযায়ী।
সরকারি ঋণের ক্ষেত্রে সঞ্চয়পত্রের ভূমিকা কী?
সরকার অভ্যন্তরীণ ঋণের একটি বড় অংশ সঞ্চয়পত্র বিক্রির মাধ্যমে সংগ্রহ করে থাকে। এটি বাজেট ঘাটতি মেটাতে সহায়ক।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।