নিজস্ব প্রতিবেদক, গাজীপুর: গাজীপুরের কালিয়াকৈর থেকে শ্রীপুরের মাওনা পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার দীর্ঘ আঞ্চলিক সড়কটি দুই পাশে সারি সারি গজারি গাছ আর সবুজ বনভূমির সৌন্দর্যে যাত্রীদের দৃষ্টি কাড়ে। তবে এই সৌন্দর্যের আবরণে ঢাকা পড়ে আছে এক ভয়ঙ্কর বাস্তবতা—প্রতিনিয়ত মৃত্যুর মিছিল।
গত দেড় মাসে সড়কটিতে ঘটেছে অন্তত ৫০টি সড়ক দুর্ঘটনা, প্রাণ হারিয়েছেন ২৫ জনের বেশি। আহত হয়েছেন শতাধিক মানুষ। স্থানীয়দের ভাষায়, “রাতে ডাকাতি, দিনে দুর্ঘটনা”—এই এখন সড়কটির বাস্তব চিত্র।
সড়কটির প্রস্থ মাত্র ২০ থেকে ২৫ ফুট। আঞ্চলিক সড়ক হলেও প্রতিদিন অসংখ্য বাস, ট্রাক, সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মোটরসাইকেল চলাচল করে। কালিয়াকৈর বাজার বাসস্ট্যান্ড থেকে শুরু হয়ে ফুলবাড়িয়া হয়ে মাওনা পর্যন্ত যাওয়া যায় এই পথে। আবার মাওনা থেকে সহজেই পৌঁছানো যায় ময়মনসিংহে।
এই দীর্ঘ পথে রয়েছে ১৮টি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক। প্রতিটি বাঁকের পাশেই রয়েছে ঘন শালবন ও ঝোপঝাড়। ফলে বিপরীত দিক থেকে আসা যানবাহন দেখা যায় না। ফলে হঠাৎ মুখোমুখি সংঘর্ষে ঘটছে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা।
শুক্রবার (১৮ জুলাই) বড়চালা এলাকায় ঘটে যাওয়া এক দুর্ঘটনায় একই পরিবারের তিনজনসহ পাঁচজন প্রাণ হারান। রবিবার সকালেও ঘটে আরেকটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনা, যেখানে সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও হাইয়েস গাড়ির সংঘর্ষে প্রাণ হারান একজন।
স্থানীয়দের ভাষ্য মতে, এই সড়কে যানবাহনগুলো অতিরিক্ত গতি নিয়ে ছুটে চলে। ফাঁকা রাস্তা, গভীর বন আর অপর পাশে কিছু না দেখতে পাওয়ার ফলে চালকরা নিয়ন্ত্রণ হারান বাঁকে গিয়ে। সবচেয়ে বেশি দুর্ঘটনার শিকার হয় সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও মাটিবাহী ট্রাক।
প্রায়ই দেখা যায়, ট্রাক থেকে মাটি পড়ে সড়কে জমে থাকে। এরপর বৃষ্টির পানিতে পিচ্ছিল হয়ে যায় সড়ক, যা নতুন করে ডেকে আনে দুর্ঘটনা।
এছাড়া, সন্ধ্যার পর সড়কটিতে যাত্রীদের পড়তে হয় ডাকাতের কবলে। গভীর বনবেষ্টিত ও জনবিরল এই অঞ্চল রাতের বেলায় রীতিমতো ভয়ংকর হয়ে ওঠে।
নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের গাজীপুর জেলা সভাপতি রাকিব হাসান বলেন, “দ্রুত সড়কটিতে সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল বন্ধ করতে হবে। পাশাপাশি ১০ মিনিট পরপর যাত্রীবাহী বাস চালুর ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। প্রতিদিন এই সড়কে মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে, এটা এখন মরণফাঁদ।”
কালিয়াকৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাউছার আহামেদ জানান, “সড়কটির নিরাপত্তা নিশ্চিতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। চালকদের সচেতন করা হয়েছে এবং প্রতিটি বাঁকে গতি নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে বিশেষভাবে বলা হয়েছে।”
এই সড়কে নিয়ন্ত্রণহীন গতি, ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক এবং অপরিকল্পিত যানবাহন চলাচলের সমন্বয়েই জন্ম নিচ্ছে ভয়াবহ দুর্ঘটনা। স্থানীয়রা চান দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ—উন্নত সড়ক ব্যবস্থাপনা, নিরাপত্তা টহল এবং পরিবহন নীতিমালা বাস্তবায়ন। না হলে এই মৃত্যুর সড়ক প্রতিদিনই কেড়ে নেবে আরও অনেক তাজা প্রাণ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।