লাইফস্টাইল ডেস্ক : সন্তানকে সঠিকভাবে গড়ে তুলতে শৃখলাবোধ শিখানোর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। একটা বাচ্চাকে যথার্থভাবে মানুষ করা মানে আপনার ধৈর্যের পরীক্ষা। তবে প্রথম কয়েক বছর ধৈর্য ধরলে আখেরে লাভ কিন্তু আপনার থুরি আপনার সন্তানেরই।
1. সবসময় “না” বলবেন না:
জানেন তো, নিষিদ্ধ জিনিসের ওপর মানুষের কৌতূহল বেশি। ছোট হলে কী হবে, ওই বাচ্চাগুলোর এসব জ্ঞান টনটনে। ওদের কোনও কাজের বিরোধিতা বকে ধমকে করলে বা সরাসরি না বললে ওদের জেদ আরও বেড়ে যায়। তাই সরাসরি “না” বলবেন না। মিষ্টি কথায় অন্যভাবে চেষ্টা করুন।
2. বাচ্চার মতো করে ভাবুন:
বাচ্চাকে বাচ্চার মতো করে বুঝুন। ওই একরত্তির কাছে সবকিছু নতুন। সবকিছু নেড়ে ঘেঁটে আপাদমস্তক দেখার বাসনা ওর মধ্যে। মায়ের কোল থেকে বেরিয়ে সবে নতুন চিনছে বাইরের জগত। কাজেই ওর এবং আপনার দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে আকাশ-পাতাল ফারাক থাকবে বই কি! বাচ্চার অনুভূতিকে গুরুত্ব দিন। ওকে নিয়ম বোঝান আদর করে। ধরুন, বাচ্চা কিছুতেই ব্রাশ করতে চায় না। জোর করে কোলে নিয়ে মুখে ব্রাশ না ঘষিয়ে ওকে বলুন “ব্রাশ না করলে মুখের মধ্যে পোকারা বাসা বাঁধে এবং রোজ দুবেলা ব্রাশ করা একটা নিয়ম। আমারও ভালো লাগে না কিন্তু পোকার ভয়ে রোজ ব্রাশ করি।” এতে বাচ্চার ওপর জোর করে কিছু চাপানো হল না আবার ও ব্রাশের গুরুত্ব বুঝে গেলো।
3. বদল আনুন বোঝানোর ভঙ্গিমায়:
মেরেধরে, চেঁচিয়ে, রাগ করে কিন্তু বাচ্চা মানুষ হবে না। সাময়িক ভাবে এসবে কাজ হয়ে গেলেও এইসব অশান্তির ফলে ভবিষ্যতে মা এবং বাচ্চার মধ্যের সমীকরণ বিগড়ে যেতে পারে। তাই আদর করে বোঝান। বারবার বোঝান। আপনার বাচ্চাকে সবথেকে ভালো চেনেন আপনি। তাই ও যেভাবে পছন্দ করে সেভাবেই বোঝান।
4.পরিস্থিতির গুরুত্ব বিচার করে কাজ করুন:
বাচ্চারা বড় হওয়ার সময় অনেক আবদার করে, যার দু-একটা মেনে নিলে বিশাল কোনও ক্ষতি হয়ে যায় না। আর সবসময় বাচ্চাকে শাসনও করতে হয় না। যে কাজগুলো করা অশোভন, সেগুলো কিছুতেই যেমন মেনে নেবেন না; সেরকম সবসময় শিশুকে চোখ রাঙাবেন না। কখনও কখনও একটু বাচ্চার মতোই ছেড়ে দিন ওকে।
5.মোটামুটি একটা রুটিন মেনে চলুন:
রেগুলার কাজগুলোকে একটা রুটিনের মতো মেনে চলুন। বাচ্চার সাথে সাথে নিজেরাও। এই নিয়ম তৈরি করুন সহবত শেখানোর ক্ষেত্রেও। বাচ্চাকে বোঝান যে, রোজ খাবার খাওয়া, ব্রাশ করা, ঘুমনো যেমন আমাদের রুটিন; ঠিক সেরকমই কয়েকটা সহবত আমাদের মানা উচিত। উদাহরণ হিসেবে বলতে পারি, কারও সামনে নাক না খোঁটা, কারও গায়ে পা না দেওয়া বা বাড়িতে কেউ এলে সবার আগে তাকে হাসিমুখে আপ্যায়ন করা। এই সহবতগুলো ছোট থেকেই ঢুকিয়ে দিন শিশুর মধ্যে।
6.উত্তেজনার পরিস্থিতি থেকে শিশুকে সরিয়ে আনুন:
বাচ্চা যদি কোনও কারণে প্রচণ্ড উত্তেজিত হয়ে যায় বা ভীষণ ঝোঁক শুরু করে। চেষ্টা করুন সেই জায়গা বা পরিস্থিতি থেকে ওকে সরিয়ে আনতে। ওর মন অন্যদিকে ঘুরিয়ে দিন কোনও জিনিস দেখিয়ে বা ছেলেভোলানো গল্প বলে।
7. মাঝে মাঝে একদম পাত্তা দেবেন না:
কখনও কখনও পাতি এড়িয়ে যেতে শিখুন। বাচ্চা জেদ করুক, কাঁদুক, অন্যায় আবদার কখনই মেনে নেবেন না। এক্ষেত্রে আপনাকে একটু শক্ত হতেই হবে। বাচ্চারা বেশিরভাগ সময় কিন্তু মনোযোগ আকর্ষণ করতেই ইচ্ছে করে কাঁদে। সেরকম বুঝলে কাঁদতে দিন বাচ্চাকে। বাচ্চা কাঁদলেই যদি ওর হাতের কাছে সব চলে আসে, তা হলে বাচ্চা মজা পেয়ে যাবে। যে কোনও কিছুতে কান্নাই হবে ওর একমাত্র অস্ত্র।
8. প্রাণ খুলে প্রশংসা করুন:
ভরে ভরে আদর করুন এবং প্রশংসা করুন। বাচ্চা কোনও ছবি এঁকেছে (হয়তো সেটা কতগুলো হিজিবিজি দাগ); তাতে শুধু ভীষণ ভালো হয়েছে এটা না বলে বলুন, “তুমি যেভাবে লাইনগুলো দিয়েছ বা রং আলাদা আলাদা করেছ, সেটা খুব অন্যরকম ভালো হয়েছে। আমাকে একটু শিখিয়ে দেবে?” বাচ্চা এতে নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করে. আপনি তার কাছে শিখতে চাইলে সে হয়তো তার বাচ্চা মনের মাধুরী মিশিয়ে আরও সৃজনশীল হয়ে আপনাকে শেখাতে চেষ্টা করবে। বাচ্চার কাজের প্রাণখোলা প্রশংসা করলে বা তার সামনে অন্যের কাজের সমাদর করলে বাচ্চা দরাজ মনের হয়। ভবিষ্যতে সেও অন্যের গুণের সম্মান করবে।
9. উদাহরণের সাহায্য নিন:
না, তুলনা করতে বলছি না এক্কেবারে। উদাহরণ মানে তুলনা টেনে বকাবকি নয়। বাচ্চার প্রিয় কোনও মানুষের ভালো গুণ বা তার বন্ধুর কোনও ভালো দিক ওকে উদাহরণ দিয়ে বোঝান। কীভাবে বোঝাবেন? “দেখেছিস, তোর বন্ধু কেমন রোজ হোম ওয়ার্ক করে আসে, তোর মতো বদমাইশ নয়।” -এই পদ্ধতি সম্পূর্ণ ভুল। ওকে বলুন এভাবে, “কাল মিস তোমার বন্ধুকে খুব আদর করছিলেন, ও রোজ নিজের হোম ওয়ার্ক করে আসে। তুমি রোজ হোম ওয়ার্ক করলে তোমাকে আরও বেশি আদর করবে সব্বাই।” পুঁচকে মানুষ আদরের লোভেই হয়তো সব কাজ করে ফেলবে।
10. প্রয়োজনে শাসন করুন:
সবসময় আদরে বাঁদর করার কিন্তু কোনও প্রয়োজন নেই। দরকারে শাসন করবেন অবশ্যই। বাচ্চা যাতে বুঝতে পারে যে, অন্যের ভাবনা বা অনুভূতিরও সম্মান করা প্রয়োজন। তবে শাসন মানে ওই ছোট্টটাকে মারধর নয়। ওর সাথে কথা বলবেন না কয়েক ঘণ্টা বা খেলবেন না, আদর তো ভুলেও না। ও যাতে বুঝতে পারে, মায়ের ইচ্ছেরও সম্মান করা উচিত। আপনাকে ভালোবেসেই হয়তো সুড়সুড় করে যা বলবেন তাই করবে ও।
বাচ্চাকে সহবত শেখানো বা শৃঙ্খলা পরায়ণ করে তোলা কিন্তু সহজ কাজ নয়। আবার বাচ্চা বিশেষে এর ব্যতিক্রমও আছে। কেউ জলদি সব শিখে যায়, আবার কেউ সময় নেয়। তাই বাবা মায়েদের বলছি, ধৈর্য ধরুন। বাচ্চার বয়স মাথায় রেখে আপনার এক্সপেকটেশন তৈরি করুন। প্রত্যেক বাচ্চা একটা নিজস্ব ব্যক্তিত্ব এবং ভাবধারা নিয়ে জন্মায়। সেটাকে গড়েপিটে নিতে হবে বাবা মাকেই। অতিরিক্ত শাসনে বাঁধতে গিয়ে বাচ্চার নিজস্বতা যেন হারিয়ে না যায়। তবেই বাচ্চা পরিপূর্ণ, রুচিশীল এবং সুন্দরভাবে মানুষ হয়ে উঠবে।
প্রথমবারের মতো ক্যামেরায় রানি মুখার্জির মেয়ে, কিউটনেস-এ টেক্কা দেবে তৈমুরকে
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।