জুমবাংলা ডেস্ক: রাবেয়া খাতুন। বয়স ৭০ বছর। সব সন্তানরা এ বয়সে মাকে দেখে শুনে রাখে। কিন্তু রাবেয়ার সেই আশা পূরণ হয়নি। ছেলে বিয়ে করে মাকে ফেলে ঢাকা শহরে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। খোঁজ রাখেন না মায়ের।
যে সন্তানকে তিলে তিলে বড় করে তুলেছেন, সেই সন্তানের কাছে ঠাঁই না পেয়ে বাধ্য হয়ে আবারও নেমে পড়েন রাস্তায়। গ্রামে-গঞ্জে ঘুরে ঘুরে দেশি হাঁস-মুরগির ডিম বিক্রি করেন। সবাই তাকে ‘ডিম দাদি’ নামেই চেনেন। পাবনার চাটমোহর উপজেলার গুনাইগাছা ইউনিয়নের পৈলানপুন গ্রামে সংগ্রামী রাবেয়ার বাস।
জাতীয় দৈনিক যুগান্তরের অনলাইন সংস্করণে গত ২২ ডিসেম্বর প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, খুব ছোটবেলায় রাবেয়া খাতুনের বিয়ে দিয়েছিলেন পরিবারের লোকজন। স্বামী আলিমুদ্দিন কৃষিকাজ করে যা উপার্জন করতেন, তাই দিয়ে সুখেই কাটছিল দিন। বিয়ের বছর খানেকের মাথায় রাবেয়া খাতুন জন্ম দেন কন্যা সন্তানের। নাম রাখেন আজিরন খাতুন। এর কিছু দিন পর আবারও গর্ভবর্তী হন তিনি। সংসারে অভাব থাকলেও সুখের কমতি ছিল না তাদের। তবে সেই সুখ বেশি দিন টেকেনি রাবেয়া খাতুনের কপালে।
মতের অমিল হওয়ায় স্বামী আলিমুদ্দিন তাকে ছেড়ে অন্যত্র চলে যান। এর পর ভূমিষ্ঠ হয় ছেলে সন্তান। নাম রাখেন ফরহাদ হোসেন। দুই সন্তানকে নিয়ে সংসার চালাতে দিশেহারা হয়ে পড়েন রাবেয়া। গ্রামে ঘুরে ঘুরে শুরু করেন পাউরুটি বিক্রি।
অনেক কষ্টে ছেলে-মেয়েকে বড় করে তোলার পর বিয়ে দেন। ভেবেছিলেন শেষ বয়সে একমাত্র ছেলে তাকে দেখে শুনে রাখবে। কিন্তু সেই আশাও পূরণ হয়নি তার।
স্থানীয়রা জানান, হাসিনুর রহমান নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি রাবেয়া খাতুনকে ১০০ টাকা ধার দেন। সেই ধারের টাকা দিয়ে গ্রামে-গঞ্জে ঘুরে ঘুরে দেশি হাঁস-মুরগির ডিম কিনে শহরে বিক্রি করা শুরু করেন।
দীর্ঘ প্রায় ৩০ বছরেরও অধিক সময় ধরে পায়ে হেঁটে পৌর শহরের অলিগলি ঘুরে ঘুরে ডিম বিক্রি করে আসছেন রাবেয়া। ডিম বিক্রির টাকা দিয়ে সংসার চালানোর পাশাপাশি ৫ শতক জমি কিনেছেন। কয়েক শতক জমিও লিজ রেখেছেন।
গত রবিবার সকালে হাড় কাঁপানো ঠাণ্ডায় কোলে একটা ঝুড়ির মধ্যে বেশ কিছু দেশি হাঁস ও মুরগির ডিম নিয়ে পায়ে হেঁটে শহরে বিক্রি করতে আসছিলেন জীবন-সংগ্রামে হার না মানা এই বৃদ্ধা। সপ্তাহে চার দিন বিভিন্ন গ্রাম থেকে ডিম কেনেন। বাকি দিনগুলো শহরে এসে ডিম বিক্রি করেন।
৩৫ টাকা হালি ডিম কিনে বিক্রি করেন ৪০ টাকা দরে। গড়ে একদিনে প্রায় ৫০০ হালি ডিম বিক্রি করেন তিনি। মাঝে মধ্যে ডিম ফেটে গেলে বা পচা বের হলে লোকসান গুনতে হয় তাকে। তবে আক্ষেপ একটিই– ছেলের কাছে ঠাঁই হয়নি তার; খোঁজ রাখেন না মেয়েও। তাই জীবনের শেষ দিনও যেন কর্মের মধ্য দিয়ে শেষ হয়-এমনটিই আশা রাবেয়া খাতুনের।
গুনাইগাছা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল ইস’লাম বলেন, রাবেয়া খাতুনের মতো নারী বর্তমান সমাজে খুঁজে পাওয়া যাবে না। তিনি একজন সংগ্রামী নারী। পরিষদের পক্ষ থেকে তাকে একটা ভাতার কার্ড করে দেয়া হয়েছে। তবে এমন মায়ের জন্য গর্ব করা উচিত সন্তানদের।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।