বিনোদন ডেস্ক : সন্তান জন্ম দেওয়ার এত দরকার কেন? মেয়েরা, এমনকি প্রতিষ্ঠিত, সমাজের নানা নিয়ম ভেঙে ফেলা সাহসী মেয়েরাও, ৩০ পার হলেই সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে ওঠে। এই ব্যাকুলতা কতটা নিজের জন্য, কতটা পুরুষতান্ত্রিক রীতিনীতি মানার জন্য?
চলচ্চিত্র নায়িকা পরিমণির মা হওয়ার খবরের পর ফেসবুকে এক স্ট্যাটাসে এই প্রশ্ন তুলেছেন বিদেশে বসবাসরত বাংলাদেশি লেখিকা তসলিমা নাসরিন। তবে তিনি তার স্ট্যাটাসে পরীমণিকে উদ্দেশ্য করে কিছু লেখেননি। গতকাল রাতে তসলিমা ফেসবুকে এই স্ট্যাটাস দেন। তার স্ট্যাটাসটি এখানে হুবহু তুলে ধরা হলো…
আমি কিন্তু মনে করি নিজের জন্য নয়, মেয়েরা সন্তান জন্ম দিতে চায় সমাজের দশটা লোকের জন্য। বাল্যকাল থেকে দেখে আসা শিখে আসা শুনে আসা ‘মাতৃত্বেই নারীজন্মের সার্থকতা’ জাতীয় বাকোয়াজ বাক্য মস্তিষ্কে কিলবিল করে বলেই মনে করে ইচ্ছেটা বুঝি নিজের।
সন্তান জন্ম দেওয়ার ইচ্ছে মানুষের ভেতর আপনাতেই জন্ম নেয় না, প্রক্রিয়াটি প্রাকৃতিকভাবে সম্পন্ন হয়ে যায় না। মানুষ ইচ্ছে করলেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, লাগাম টেনে ধরতে পারে গর্ভধারণের যাবতীয় বিষয়াদির। এখানেই পশুর সঙ্গে মানুষের পার্থক্য। মানুষ ভাবতে পারে, সিদ্ধান্ত নিতে পারে, সন্তান জন্ম দেওয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে পারে। যারা মূল্যবান কাজ করছে জীবনে, তাদের উচিত নয় অহেতুক শিশু জন্ম দিয়ে নিজের মূল্যবান সময় নষ্ট করা।
প্রতিপালনেই তো ব্যয় হয়ে যায় জীবনের অনেকটা সময়। এমন তো নয় যে এই গ্রহে মানুষ নামক প্রাণীর এত অভাব যে অচিরে বিলুপ্ত হয়ে যাবে এই প্রজাতি। বিলুপ্ত হওয়া থেকে প্রজাতি বাঁচানোর দায়ই বা কেন আমাদের নিতে হবে! পৃথিবীতে মানুষের সংখ্যা প্রায় ৮০০ কোটি। এত ভিড়ের পৃথিবীতে আপাতত কোনো নতুন জন্ম কাঙ্ক্ষিত হওয়ার কথা নয়। কিন্তু মেয়েরা যদি ভেবে নেয় জন্ম না দিলে তাদের জীবনের কোনো অর্থ নেই, তাহলে তারা যে ভুল তা তাদের বোঝাবে কে!
সন্তানের জন্ম তারা দিতেই পারে যদি এমনই তীব্র তাদের আকাঙ্ক্ষা, তার পরও এ কথা ঠিক নয়, জন্ম না দিলে তাদের জীবনের কোনো অর্থ নেই। কোনো কোনো মানুষ তাদের জীবনকে শখ করে অর্থহীন করে। তা ছাড়া কারো জীবনই অর্থহীন নয়। বরং যে ভ্রূণ আজও জন্মায়নি, সে ভ্রূণ অর্থহীন। পৃথিবীর শিক্ষিত, স্বনির্ভর, সচেতন মেয়েরা সাধারণত বিয়ে করে না, সন্তান জন্মও দেয় না।
- তসলিমা নাসরিনের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেইজ থেকে
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।