
জুমবাংলা ডেস্ক : ভালোই চলছিল দিনমজুর আলামিন ও দুলালী খাতুনের তিন বছরের সংসার জীবন। কিন্তু সন্তান জন্মের পরই ঘটে বিপত্তি! স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন যখন বুঝতে পারেন আদরীর গর্ভে জন্ম নেয়া সন্তান প্রতিবন্ধী, তখন থেকেই তার ওপর নেমে আসে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন। বের করে দেয়া হয় বাড়ি থেকে।
তবে মেয়েকে ফেলে দিতে পারেননি মা খইচন বেওয়া। ঠাঁই দেন নিজের কাছে। তিন বছর ধরে দুলালী নীরবে-নিভৃতে অসুস্থ সন্তানকে নিয়ে বাবার কুঁড়ে ঘরে অর্ধাহারে-অনাহারে দিন কাটালেও মন গলেনি স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজনের। তাদের এমন অমানবিক আচরণের বিচার চেয়ে গ্রাম প্রধানদের কাছে গেলেও অজ্ঞাত কারণে মেলেনি কোনো প্রতিকার। এমনই এক অমানবিক ঘটনা ঘটেছে পাবনার চাটমোহর উপজেলার ডিবিগ্রাম ইউনিয়নের কাঁটাখালী গ্রামে।
সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, ছোট বেলায় মারা যান দুলালীর বাবা আবুল হোসেন। এরপর মা খইচন বেওয়া মানুষের বাড়িতে কাজ করে মেয়েকে মানুষ করেন। তিন বছর আগে কাঁটাখালি কান্দিপাড়া গ্রামের রব্বান মোল্লার ছেলে দিনমজুর আলামিনের সঙ্গে বিয়ে হয় দুলালীর। এনজিও থেকে কিস্তি নিয়ে বিয়েতে যৌতুক হিসেবে দেয়া হয় নগদ ১০ হাজার টাকা, একটি বাইসাইকেলসহ নানা জিনিসপত্র। কিনে দেয়া হয় একটি ব্যাটারি চালিত অটোভ্যান। বিয়ের কিছুদিন পর দুলালী ছেলে সন্তানের জন্ম দেন। নাম রাখেন দুর্জয়। জন্মের পরেই দুর্জয় অসুস্থ হলে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু মায়ের অপুষ্টির কারণে সন্তান শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েছে বলে জানান চিকিৎসক।
বিষয়টি আলামিন জানার পরই স্ত্রীকে মানসিক ও শারীরিক নির্যাতন করা শুরু করেন। এর সঙ্গে যোগ দেন শ্বশুর-শ্বাশুড়িও। শুধু তাই নয়, আলামিনকে কৌশলে চট্টগ্রামে দিনমজুরের কাজ করতে পাঠিয়ে দেন তার বাবা-মা। আর দুলালীকে বাবার বাড়ি চলে যেতে বলা হয়। কিন্তু দুলালী যেতে না চাইলে তার হাতে যৌতুকের নগদ টাকা ধরিয়ে দিয়ে টেনে-হিঁচড়ে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া হয়। রাস্তায় ফেলে দেয়া হয় বিয়ের স্মৃতি মাখানো লেপ-তোষকসহ নানা জিনিসপত্র।
বাধ্য হয়ে দুলালী ফিরে আসেন বাবার বাড়িতে। সেই থেকে তিনটি বছর কেটে গেলেও খোঁজ রাখেন না স্বামী ও শ্বশুর বাড়ির লোকজন! গ্রাম প্রধানদের কাছে বিচার দিলেও মেলেনি কোনো প্রতিকার। ধার দেনা করে সন্তানের চিকিৎসা করাতে গিয়ে এখন নিঃস্ব তারা। তবে ছেলেকে সুস্থ করতে চাইলে ঢাকায় ভালো কোনো চিকিৎসককে দেখানোর পরামর্শ দেন পাবনার শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. নীতিশ কুমার। কিন্তু অভাবে সন্তানের চিকিৎসা করাতে পারছেন না দুলালী। অসুস্থ সন্তানের চিকিৎসার জন্য বিত্তবানদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও মেলেনি কোনো সহযোগিতা।
দুলালী বলেন, প্রতিবন্ধী সন্তান জন্ম দেয়া কী অপরাধ? মাঝে মধ্যে মনে হয়, আত্মহত্যা করি, কিন্তু ছেলের মুখের দিকে তাকিয়ে পারি না। ওর বাবা (আলামিন) মুখ ফিরিয়ে নিলেও আমার জীবনটা এই ছেলের মধ্যে। আমি ছাড়া কে দেখবে দুর্জয়কে?’ তিনি আরও বলেন, ছোট বেলায় বাবা মারা গেলেন। মা অনেক কষ্টে মানুষের বাড়িতে কাজ করে বিয়ে দিলেন। কিন্তু কোনো দিকেই সুখ পেলাম না!
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন শ্বশুর রব্বান মোল্লা। পরে তিনি বলেন, আমি ছেলেকে বের করে দিয়েছিলাম। ছেলের বউকে নয়। তবে আমি বৌমাকে ফেরানোর চেষ্টা করেছি। কিন্তু সে (দুলালী) আসেনি। ছেলে এখন চট্টগ্রামে থাকে। সে আমার ফোন ধরে না। এখানে আমার করার কিছু নেই।
ইউপি সদস্য হাফিজুল ইসলাম বলেন, কয়েকমাস আগে রাগের মাথায় আলামিন স্ত্রী দুলালীকে মুখে মুখে ছেড়ে দিয়েছিল। পরে আমরা গ্রাম প্রধানদের নিয়ে বসে সেটা মীমাংসা করে দিয়েছিলাম। কিন্তু পরে কী হয়েছে তা জানি না। ওরা কেউ আসেনি আমার কাছে।
ডিবিগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব নবীর উদ্দিন মোল্লা বলেন, বিষয়টি আমার জানা নেই। তবে এমন ঘটনা হয়ে থাকলে জঘন্য অপরাধ করেছে ছেলেপক্ষ। এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।