লাইফস্টাইল ডেস্ক: মার্ক জাকারবার্গ, স্টিভ জবস, বিল গেটস, উইলিয়াম ফোর্ড কিংবা জ্যাক মা, যারা নিজ নিজ ক্ষেত্রে সফলতার উচ্চ শিখরে আরোহণ করেছেন তারা কেউই অলৌকিক কোনো ক্ষমতার অধিকারী ছিলেন না। আসলে সফলতার জন্য মানুষের মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন আনা জরুরি।
লাইফস্টাইল সম্পর্কিত বিখ্যাত ওয়েবসাইট ‘লাইফ হ্যাক’ এ প্রকাশিত কেশাভ ভাট এর নিবন্ধ ‘সিক্রেটস টু বিকাম সাকসেসফুল এট এনিথিং ইউ ক্যান ইমাজিন’ উঠে এসেছে কিভাবে কিছু মনস্তাত্ত্বিক পরিবর্তন সফলতা অর্জনে আপনার কাজকে ব্যাপক ভাবে প্রভাবিত করে। আপনাদের সুবিধার্থে নিবন্ধটি তুলে ধরা হলো।
১. পরিবেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার: বিখ্যাত মনোবিজ্ঞানী কার্ট লিউইন একটি সমীকরণের মাধ্যমে আমাদের ব্যবহারের সাথে পারিপার্শ্বিক পরিবেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পর্ক অত্যন্ত চমৎকার ভাবে তুলে ধরেছেন। সমীকরণটি হলো P = F(P,E) অর্থাৎ কোন ব্যক্তির ব্যবহার কেমন হবে তা নির্ভর করে তার আশেপাশের পরিবেশের উপর।
উদাহরণস্বরূপ: আপনি যদি একটি ধর্মীয় পরিবেশে বেড়ে উঠেন, আপনি কম বেশী ধার্মিক হয়ে উঠবেন। আপনি যদি সাংস্কৃতিক পরিবেশে বেড়ে উঠেন আপনি সংস্কৃতিমনা হয়ে উঠবেন। আপনি যদি একটি সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হতে চান, আপনাকে নিয়মিত জিমে গিয়ে এমন পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিতে হবে যেখানে সবাই স্বাস্থ্য সচেতন। আপনি নিজেকে যেভাবে গড়ে তুলতে চান সেরূপ পরিবেশ আপনাকে আগে নিশ্চিত করতে হবে।
২. কতটা উন্নতি করছেন তার চেয়ে বড় বিষয় উন্নতি করছেন কিনা? : আমারা কোন বিষয় নিয়ে খুব আগ্রহের সাথে কাজ করা শুরু করি কিন্তু কয়েকদিন পর সেই সমান আগ্রহ বা চেষ্টা কোনটাই ধরে রাখতে পারি না। এর কারণটা হলো আমরা কয়েকদিন কাজ করেই অনেক বেশী পরিবর্তন আশা করে ফেলি আর আশানুরূপ ফলাফল আমরা যখন দেখতে পাইনা আমরা অনেকটা হতাশ হয়ে পরি এবং যে আগ্রহ বা চেষ্টা নিয়ে শুরু করেছিলাম সেটিও বাদ দিয়ে দেই।
আমাদের যে বিষয়টা মনে রাখতে হবে আমরা কি প্রতিদিন ১% করেও উন্নতিও করছি কিনা। এই ১% করেই আমরা ধীরে ধীরে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছানো সম্ভব। বেশী উন্নতি করার চেয়ে যে বিষয়টি বেশী জরুরি উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখা। তাই অল্প কয়েকদিনে বেশী কিছু আশা না করে পরিশ্রমের ধারাবাহিকতা রক্ষা করায় মনোনিবেশ করা প্রয়োজন।
৩. কঠোর পরিশ্রম নয় কাজকে খেলার মত উপভোগ করুন: এটা সত্যি যে কোন কাজে সফলতা অর্জন করতে হলে আপনাকে পরিশ্রম করতে হবে, সেই কাজে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় দিতে হবে, অনেক ত্যাগ শিকার করতে হবে। এটাই কঠিন বাস্তবতা। তবে মানুষের বৈশিষ্ট্যটাই এমন যে কোন কষ্টকর কাজে সে দীর্ঘসময় লেগে থাকতে পারে না। পরিশেষে হাল ছেড়ে দেয়।
কাজকে কঠিন মনে না করে খেলা হিসেবে নেয়া জরুরি। কাজকে ভালোবাসা, কাজকে উপভোগ করা, কাজে মাঝে আনন্দ খুঁজে পাওয়াটা জরুরি। তাহলে অনেক কঠিন কাজও আপনার কাছে খেলার মতো মনে হবে।
৪. আপনি সবকিছু একা করতে পারবেন না: আমরা অনেক সময়ই একটা বিষয় ভুলে যাই কোন মানুষই একা একা সফল হতে পারে না। প্রতিটি সফল মানুষের পেছনে রয়েছে অনেক মানুষের অবদান। আমরা হয়তো শুধু মার্ক জাকারবার্গকেই চিনি তবে তিনি একা ফেসবুককে এত সফল প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে পারেতেন না। স্টিভ জবস বা বিল গেটস কেউই একা একা সফলতার চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌছাতে পারে নি। তাদের সাথে ছিল অনেকের সহায়তা।
আপনি একই সাথে অনেক বিষয়ে দক্ষ হতে পারবেন না। আপনাকে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ কারো শরণাপন্ন হতে হবে। আপনি যদি ভাষার দক্ষটা বাড়াতে চান যিনি এ ব্যাপারে বিশেষজ্ঞ এবং যার এ বিষয়ে পর্যাপ্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে। আপনি স্বাস্থ্য ভাল রাখতে চাইলে আপনাকে জিমের ইনসট্রাক্টরের নির্দেশনা মানতে হবে। আর যারা আপনাকে সহযোগিতা করছেন তাদের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকাও একান্ত কর্তব্য।
৫. ফিক্সড মাইন্ডসেট নাকি গ্রোথ মাইন্ডসেট : ফিক্সেড মাইন্ডসেটের ব্যক্তিরা নিজেদের সামর্থ্য বা মেধা নিয়ে একটি স্থায়ী মাপকাঠি দিয়ে ফেলেন। তাদের ধারণা থাকে যে এটি আমাকে দিয়ে হবে না। আমি কখনোই ক্লাসে প্রথম হতে পারবো না। ধূমপান ছেড়ে দেয়া আমার পক্ষে অসম্ভব। এমন মন মানসিকতার ব্যক্তিরা কখনই নিজেদের অবস্থার পরিবর্তন করতে পারে না।
গ্রোথ মাইন্ডসেট বা পরিবর্তিত মানসিকতা থাকাটা খুব জরুরি। আমাদের মেধা, স্বাস্থ্য বা যে কোন সামর্থ্য কোনটাই স্থায়ী নয়, জ্ঞান অর্জন, পরিশ্রম, ট্রেনিং এর মাধ্যমে উন্নতি করা সম্ভব। আবার চর্চার অভাবে আমাদের বর্তমান দক্ষতা কমেও যেতে পারে।
উল্লেখ্য, নিবন্ধটি আংশিক পরিমার্জিত। ‘লাইফ হ্যাক’ থেকে অনুবাদ করেছেন মেহেদী হাসান দ্বীপ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।