সব হারিয়ে পেট্রোলপাম্পে কাজ নেন ঐশ্বরিয়ার সেই ‘তরুণ’ হার্টথ্রব নায়ক

ঐশ্বরিয়ার সেই 'তরুণ' হার্টথ্রব নায়ক

নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময়টা ছিল তামিল চলচ্চিত্রের গুরুত্বপূর্ণ সময়। রজনীকান্ত ও কমল হাসানের মতো তারকারা তখন চল্লিশের কোঠায়, রোমান্টিক সিনেমা বা বলা যায়, ‘তরুণ’ হার্টথ্রব নায়কের চরিত্রে তাদের গ্রহণযোগ্য কম ছিল।

ঐশ্বরিয়ার সেই 'তরুণ' হার্টথ্রব নায়ক

এর ফলে বিজয়, অজিত কুমার, অরবিন্দ স্বামী এবং আর মাধবনসহ নতুন প্রজন্মের তারকাদের উত্থান ঘটে। সকলেই পরবর্তী তিন দশক ধরে রুপালি পর্দায় ম্যাজিক দেখিয়ে চলেছেন। কিন্তু এই তারকাদের ভিড়ে আরও একজন ছিলেন, যিনি ক্যারিয়ারের শুরুতে কামাল করলেও ভাগ্যের ফেরে হারিয়ে যান লাইমলাইট থেকে।

তার নাম মির্জা আব্বাস আলি। পশ্চিমবঙ্গে জন্ম হয়েছিল আলির। কলেজে পড়ার সময়, ১৯৯৪ সাল নাগাদ মডেলিং শুরু করেন। ১৯৯৬ সালে তিনি তামিল চলচ্চিত্র কাধাল দেশম দিয়ে অভিনয়ে আত্মপ্রকাশ করেছিলেন, যা বাণিজ্যিক সাফল্য পায়, একইসঙ্গে ফিল্মিবোদ্ধদেরও মন জিতে নেয়।

মিডিয়া তাৎক্ষণিকভাবে আব্বাসকে ‘হার্টথ্রব’ বলে অভিহিত করে, রাতারাতি স্টার হয়ে যান তিনি। ঝুলিতে আসে একের পর এক ছবির অফার।

এরপর তেলুগু ভাষায় প্রিয়া ও প্রিয়া, রাজা এবং তামিল ভাষায় কান্নেঝুথি পোট্টুম থোট্টু, পাদায়াপ্পা এবং সুয়াম্বরমের মতো ছবিতে অভিনয় করেন। রাহুল রায়ের মতো ‘ওয়ান ফিল্ম ওয়ান্ডার’ ছিলেন না বঙ্গভূমে জন্ম নেওয়া এই অভিনেতা।

এই সব ছবিই দক্ষিণের বক্স অফিসে দারুণ সাফল্য পেয়েছিল। কমল হাসান ও শাহরুখ খান অভিনীত ‘হে রাম’-এ ছোট্ট একটি চরিত্রে অভিনয় করার পর আব্বাস কান্ডুকোন্ডেইন কান্ডুকোন্ডেইনের সঙ্গে তার সবচেয়ে বড় ব্রেক পান। এই রোমান্টিক ছবিতে তিনি ঐশ্বরিয়া রাইয়ের বিপরীতে অভিনয় করেছিলেন এবং মামুট্টি, অজিত কুমার এবং টাবুও ছিলেন ছবির অন্যতম চরিত্র।

পরের বছর, তার আরও একটি ছবি, মিনালে বক্স অফিসে হিটের তকমা পায়। ২০০২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘অংশ’ ছবির মাধ্যমে বলিউডে পা রাখেন তিনি, কিন্তু সেটি বক্স অফিসে সাফল্য পায়নি। ২০০০-এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে, আব্বাসকে তামিল চলচ্চিত্রের অন্যতম ভরসাযোগ্য অভিনেতা হিসাবে বিবেচনা করা হয়।

তবে ২০০৬ সালের দিকে আব্বাসের ক্যারিয়ার থমকে যায়। হিন্দি সিনেমায় অভিনয়ের জন্য তিনি বেশ কয়েকটি তামিল চলচ্চিত্র ছেড়েছিলেন। কিন্তু তার দুটি হিন্দি ছবি ‘অংশ’ ও অউর ফির ব্যর্থ হয়। তিনি যে অন্যান্য ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হয়েছিলেন সেগুলিও শেষ পর্যন্ত বন্ধ হয়ে যায়। ফলস্বরূপ আচমকাই যেন আব্বাসের সোনালি ক্যারিয়ার থমকে যায়।

কাছের মানুষের পরামর্শের বিরুদ্ধে গিয়ে আব্বাস তামিল এবং তেলুগু চলচ্চিত্রে পার্শ্ব চরিত্রের কাজের অফর লুফে নেন, তার চেয়ে কম জনপ্রিয় অভিনেতাদের পাশে দ্বিতীয় হিরোর রোলও করেছেন সেই সময়। পরবর্তী কয়েক বছর ধরে, আব্বাসকে তেলুগু চলচ্চিত্রে ক্যামিও এবং সহায়ক অভিনেতার চরিত্রে অভিনয় করতে দেখা গিয়েছিল। কিন্তু আর সেই স্টারডম ফিরে পাননি।
২০১১ সালের পর ফিল্মি ক্যারিয়ারের পতনের বোঝা নিয়েই টেলিভিশন শোতে কাজ করেন। কয়েক বছর পর, ইউটিউব চ্যানেল রেডনুলের সাথে কথা বলার সময়, তিনি জানান, ওই সময় অভিনয় নিয়ে অসন্তুষ্ট ছিলেন এবং তাই সব ছেড়ে নিউজিল্যান্ডে চলে যান।

২০১৫ সাল নাগাদ আব্বাস নিউজিল্যান্ডে পৌঁছেছিলেন নতুন জীবন গড়ার আশা নিয়ে। তবে সমস্ত অর্থ নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার পর ছোটখাটো চাকরি করতে হয় একসময় দক্ষিণী ইন্ডাস্ট্রি কাঁপানো এই তারকাকে।

রেডনুলিন ২০২২-এর সাথে একটি সাক্ষাত্কারে তিনি বলেন, একটি নির্মাণ সাইটে কাজ করা থেকে মেকানিক হিসেবে প্রশিক্ষণ নেওয়া এবং এমনকি বছরের পর বছর সেখানে একটি পেট্রোল পাম্পেও কাজ করেছেন তিনি।

সোশ্যাল মিডিয়ায় খোলামেলা ভিডিওতে উত্তাপ ছড়াচ্ছে অভিনেত্রী এনা

অবশেষে মোটিভেশনাল স্পিকার হয়ে ওঠেন আব্বাস। ২০২৩ সালে ভারতে ফিরে আবার অভিনয়ে ফেরার আগ্রহ প্রকাশ করেন। তবে এখনও নতুন কোনো প্রজেক্টে চুক্তিবদ্ধ হননি তিনি। পরিবারের সঙ্গে চেন্নাইয়ে থাকেন এই অভিনেতা।