অলি আহমেদ, ইউএনবি: দেশি-বিদেশি পর্যটকদের কাছে বাংলাদেশের দর্শনীয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম আকর্ষণের জায়গা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি রাঙামাটি। তবে বিভিন্ন সমস্যা ও সমন্বয়হীনতার কারণে সফলভাবে এগোচ্ছে না এখানকার পর্যটন শিল্প।
পার্বত্য জেলা রাঙামাটির বিশাল অংশ জুড়েই রয়েছে এশিয়ার বৃহত্তম কৃত্রিম হ্রদ কাপ্তাই। এছাড়া রয়েছে জেলা শহর সংলগ্ন দর্শনীয় ফুরোমন পাহাড়, পাহাড়ে মেঘের রাজ্য সাজেক ভ্যালিসহ অনেক দর্শনীয় স্থান।
পর্যটন ব্যবসার সাথে সংশ্লিষ্টরা জানান, শীতের শুরু থেকে বছরের পাঁচ মাস জেলায় পর্যটন ব্যবসা ভালো চললেও বাকি সাত মাস তাদের অনেকটা অলস সময় কাটাতে হয়। এ জন্য রাঙামাটিতে পর্যটন শিল্পে তেমন একটা দৃশ্যমান উন্নয়ন না হওয়া ও সরকারি বিভিন্ন সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতাকে দায়ী করেন তারা।
রাঙামাটি ট্যুরিস্ট বোট-মালিক সমিতির সহ-সভাপতি মো. রমজান আলী বলেন, ‘পর্যটন এলাকায় আসা পর্যটকদের নির্বিঘ্নে চলাচল এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ট্যুরিস্ট পুলিশ সর্বাত্মকভাবে সহায়তা করে যাচ্ছে। তবে বছরের মাত্র কয়েকটি মাস আমাদের ভালো ব্যবসা হলেও বেশিরভাগ সময়ই বেকার থাকতে হয়।’
বিষয়টি স্বীকার করে রাঙামাটি পর্যটন করপোরেশনের ব্যবস্থাপক সৃজন বিকাশ বড়ুয়া বলেন, ‘পাঁচ মাস ভালো ব্যবসা আর বাকি সাত মাস কম ব্যবসা করে পর্যটনকে এগিয়ে নেয়া খুবই মুশকিল, এ অবস্থার উত্তোরণ ঘটাতে হবে।’
জেলার পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে যেসব রাইড প্রয়োজন সেগুলোসহ শিশু বিনোদনের কোনো রাইড গড়ে তোলা হয়নি উল্লেখ করে তিনি বলেন, পর্যটকদের আবাসন সুবিধার জন্য ভবনের পাশাপাশি পর্যটকবান্ধব নিরিবিলি নৈসর্গিক পরিবেশ গড়ে তোলা খুবই জরুরি। এসব অবকাঠামো গড়ে তুলতে পারলে এখানকার পর্যটন শিল্প অনেকটাই এগিয়ে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
তবে সরকারিভাবে রাঙামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের আওতাধীন পর্যটন কমপ্লেক্সে নতুন কিছু ভবন নির্মাণ এবং হ্রদের ওপর ঝুলন্ত সেতু ছাড়া পর্যটন এলাকায় দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন করা হয়নি। জেলা পর্যটন কমপ্লেক্সের বিশাল এলাকাজুড়ে পরিকল্পিত উদ্যোগ নিতে পারলে এখানকার পর্যটন শিল্পে আমূল পরিবর্তন আসবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
রাঙামাটিতে সেনাবাহিনী, পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যটন খাতে কিছু দৃশ্যমান উন্নয়ন করা হয়েছে। এসব স্থানেই মূলত পর্যটকদের বেশি ভিড়। পুলিশ বিভাগের নিয়ন্ত্রণাধীন পর্যটন এলাকা পলওয়ে পার্কের ব্যাপক উন্নয়ন করে সবার কাছে প্রশংসিত হয়েছেন জেলা পুলিশ সুপার মো. আলমগীর কবীর।
তিনি বলেন, ‘রূপের রানি রাঙামাটি সারা দেশের পর্যটকদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ এলাকা। এ শিল্পকে এগিয়ে নিতে এখানে ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। রাঙামাটিতে পর্যটকরা সব সময় আসতে পারেন। কিন্তু দেখা যায় বছরের সব সময় এখানে পর্যটকরা বেড়ানোর জন্য আসেন না।’
বর্ষা মৌসুমে রাঙামাটিকে সবচেয়ে আকর্ষণীয় লাগলেও তখন পাহাড় ধসসহ বিভিন্ন কথা বলে পর্যটকদের অনাগ্রহী করে তোলা হয় জানিয়ে তিনি এসব বিষয়ে অযথা বিভ্রান্তি ছড়ানো বন্ধ করাসহ ব্যাপক প্রচারণা চালিয়ে পর্যটন শহর রাঙামাটিকে দেশ-বিদেশের মানুষের মাঝে তুলে ধরার জন্য সবাইকে আহ্বান জানান।
পাহাড়ে পর্যটন খাতের উন্নয়নসহ এ শিল্পকে এগিয়ে নিতে সমন্বিত উদ্যোগের প্রয়োজন বলে মনে করেন রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মো. মামুনুর রশিদ।
তিনি বলেন, এখানে পৌরসভা, জেলা পরিষদ, জেলা প্রশাসন ও পর্যটন করপোরেশন রয়েছে। ‘আমরা যদি এখানে সমন্বিতভাবে কাজ করি তবে এ রাঙামাটি শহরকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার পাশাপাশি পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় করে তোলার মতো অনেক কিছুই করা সম্ভব। এখন প্রয়োজন এ শিল্পকে এগিয়ে নিতে সবাইকে এক জায়গায় এসে সমন্বিতভাবে কাজ করা।’ সূত্র: ইউএনবি
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।