জুমবাংলা ডেস্ক: মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলম ছিলেন ষোড়শ মুঘল সম্রাট। ১৭৮৮ এর ১৫ জুলাই আফগানরা দিল্লি দরবার সম্পূর্ণ নিজেদের কব্জায় নিয়ে আসতে সমর্থ হয়েছিল। সে সময় মুঘল সম্রাটের প্রাসাদরক্ষীরা সব পালিয়ে যায়। ৩০ জুলাই সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলমকে সিংহাসনচ্যুত করে বিদর বখত নামের এক যুবরাজকে সিংহাসনে বসানো হয়।
সবচেয়ে ভয়ংকর ঘটনা ঘটে ১৭৮৮ এর ১০ আগস্ট মাসে। সে সময় খোদ দ্বিতীয় শাহ আলমের চোখ নিজের হাতে উপড়ে ফেলে এই আফগান রোহিলা। দুজন রাজকর্মচারী বাধা দিতে এলে তাদেরকেও কেটে ফেলা হয়। দরবারের চিত্রকরকে দিয়ে অন্ধ প্রাক্তন সম্রাটের ছবি আঁকানো হলো। মুঘল সম্রাটদের ইতিহাসে এমন ভয়ানক অপমানের ঘটনা অভূতপূর্ব। অন্ধ সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলম ১৮০৬ সালে মৃত্যুবরণ করেন।
প্রাসাদ আর ধনী ব্যক্তিদের আবাসে একের পর এক হানা দেওয়া হয়। বাদ গেল না হারেমের নারীরাও। রাজকন্যাদেরকে ধর্ষণ করে, অন্তঃপুর তছনছ করে, গোলাম কাদির অন্যায়ের চূড়ান্ত করে ছাড়েন। রাজপরিবারের মোট ২১ জন নারী ও শিশু ক্ষুধা-তৃষ্ণায় মরে যায়। যুবরাজদের চাবুক মেরে কারাগারে পাঠানো হয়। সে সময় অপমানিত নারীরা অনেকেই যমুনায় আত্মঘাতী হন।
মুঘল সম্রাট দ্বিতীয় শাহ আলম ছিলেন দ্বিতীয় আলমগিরের পুত্র। শাহ আলম একটি ভেঙ্গে পড়া মুঘল সাম্রাজ্যের সম্রাট হন। তার রাজত্বকালে তার ক্ষমতা এতটাই কমে গিয়েছিল যে ফার্সি ভাষায় ‘সুলতানাত ই শাহ আলম আজ দিল্লী তা পালাম’এর অর্থ ‘শাহ আলমের সাম্রাজ্য দিল্লি থেকে পালাম’, পালাম দিল্লির একটি শহরতলী।
শাহ আলমের রাজত্ব দিল্লি থেকে পালাম পর্যন্ত। পালামের অবস্থান দিল্লির উপকণ্ঠে। সে সময় প্রচুর আফগান উত্তর ভারতে বসবাস করতো, এদেরকে রোহিলা আফগান বলা হতো। তারা উত্তর ভারতে যে আবাসভূমি গড়ে তুলেছিল একে বলা হতো রোহিলাখণ্ড। মূলত কৃষিজীবী হলেও রোহিলারা ছিল দুর্ধর্ষ যোদ্ধা, অনেকেই ভাড়াটে সৈন্য হিসেবে কাজ করত।
ক্ষমতায় আসীন হওয়ার পর থেকেই শাহ আলম অনেক আক্রমণের সম্মুখীন হন। শাহ আলম দ্বিতীয় একমাত্র এবং পূর্ণ হকদার সম্রাট হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু মারাঠা সেনাপতি মহাদাজী শিন্ডের তত্ত্বাবধানের কারণে ১৭৭২ সাল পর্যন্ত তিনি দিল্লি ফিরতে পারেননি। বক্সারের যুদ্ধে তিনি ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির বিরুদ্ধেও যুদ্ধ করেন। শাহ আলম তার নিজস্ব দিওয়ান (কবিতা) রচনা করেন এবং আফতাব ছদ্মনামে প্রকাশ করেন। তার কবিতাগুলো মির্জা ফাখির মাকিন পরিচালিত, সংকলিত ও সংগৃহীত।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।