জুমবাংলা ডেস্ক : সরকারি আয়-ব্যয়ের হিসাব নিরীক্ষা নিয়ে মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দুই সংস্থা জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) ও অডিট বিভাগ। প্রস্তাবিত আইনে ভ্যাট-ট্যাক্স, ঋণসহ সংযুক্ত তহবিলের অর্থ সঠিক নিয়মে সরকার পাচ্ছে কি-না, তা খতিয়ে দেখার সর্বোচ্চ ক্ষমতা চায় মহাহিসাব নিরীক্ষকের কার্যালয়। আর একেই সংবিধানের লঙ্ঘন হিসেবে দেখছে এনবিআর। তবে অডিট বিভাগের আশ্বাস- রাজস্ব বোর্ড অনিয়ম না করলে কোনো হস্তক্ষেপ করবেন না তারা। এমন দাবি-পাল্টা দাবির মধ্যে ব্যবসায়ীরা বলছেন, ভোগান্তি বাড়াবে নতুন আইন।
পাবলিক অডিট বিল- ২০২৪ নামে প্রস্তাবিত আইনের ওপর মতামত চেয়ে গত বছরের ১৫ ডিসেম্বর ওয়েবসাইটে প্রকাশ করে অর্থ মন্ত্রণালয়। ব্যবসায়ী মহলে প্রশ্ন উঠেছে, সরকারি আয়-ব্যয়ের হিসাব নিরীক্ষায় নতুন আইন কেনো দরকার?
এ বিষয়ে উপ-মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, সরাসরি অডিট করার জন্য যেহেতু সংবিধানে বিস্তারিত বলা নেই, তাই কেউ কেউ এটিকে গ্রহণ করেন, আবার কেউ কেউ এটি নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।
সংবিধানের ৮৪ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, সরকারের রাজস্ব, ঋণ ও ঋণ পরিশোধ থেকে পাওয়া অর্থ একটি তহবিলে জমা হবে- যাকে বলা হবে সংযুক্ত তহবিল। এর বাইরে সরকারি কোষাগারে জমা হওয়া অর্থকে সরকারি হিসাব বলা হবে। সংবিধানের ১২৮ অনুচ্ছেদে, এই সরকারি হিসাব নিরীক্ষার ক্ষমতা মহাহিসাব নিরীক্ষককে দেয়া হলেও সংযুক্ত তহবিল নিরীক্ষার দায়িত্ব দেয়া হয়নি। যার সবচেয়ে বড় অংশ দেখভাল করে এনবিআর।
এবার সরকারি হিসাবে, সংযুক্ত তহবিলকে যুক্ত করে তা নিরীক্ষা করতে চায় অডিট বিভাগ। সেভাবেই আইন করার প্রস্তাব দিয়েছেন তারা। সংবিধানের ৮৪ ও ৮৬ অনুচ্ছেদকে এক করে বানানো হয়েছে পাবলিক অডিট বিলের ২’র জ ধারা। যা নিয়ে আপত্তি তুলেছে রাজস্ব বোর্ড।
এনবিআরের দ্বিতীয় সচিব (মূসক আইন ও বিধি) ব্যারিস্টার মো. বদরুজ্জামান মুন্সী বলেন, যে আইনগুলো এনবিআর প্রয়োগ করে থাকে সেগুলোতেও কিছু সাংঘর্ষিকের জায়গা রয়ে গেছে। তাই সুপষ্টভাবে বলা হয়েছে যে এগুলো সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
তবে অডিট বিভাগের দাবি স্পষ্ট, সংবিধান মেনেই করা হচ্ছে নতুন আইন। উপ-মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, সংবিধানে সবকিছু বলা থাকে না। সংবিধানের ১২৭ থেকে ১৩২ অনুচ্ছেদে সম্পূর্ণ কাজটি অন্তর্ভুক্ত করার জন্যই এটি করা হচ্ছে।
এর আগে সংবিধানের ১২৮’র ৩ অনুচ্ছেদ আমলে নিয়ে ১৯৭৪ সালে মহাহিসাব নিরীক্ষকের ক্ষমতা বাড়ানো হলেও তাকে দেয়া হয়নি সংযুক্ত তহবিলে হাত দেয়ার অধিকার। সংবিধান সংশোধন না করে এবার তা করা যাবে কি-না; সেই প্রশ্ন তুলেছেন আইনজীবীরা।
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সৈয়দ মাহসিব হোসেন বলেন, সংবিধানের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে যেন আইনটি করা হয়, সেজন্য আরও কাজ করতে হবে। না হলে আইনটি নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাবে।
আইনি এমন যুক্তি-তর্কের মধ্যে সংযুক্ত তহবিলের যোগানদাতা ব্যবসায়ীরা বলছেন, স্বচ্ছতা নিশ্চিতের নামে প্রস্তাবিত আইন পাশ হলে ভোগান্তি বাড়বে তাদের। বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি ফজলে শামীম এসহান বলেন, অডিটের ওপর অডিট করা হচ্ছে। এতে দুর্নীতি কমবে না, বরং ভোগান্তি বাড়বে। তাই এটিকে ডিজিটালাইজড করা যেতে পারে।
যদিও এই শঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছে অডিট বিভাগ। উপ-মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মো. শরীফুল ইসলাম বলেন, কারও কোনো কাজে হস্তক্ষেপ করার জন্য অডিট করা হয় না। বরং কাজে সহায়তার জন্যই অডিট করা হয়।
এদিকে, সংযুক্ত তহবিল নিরীক্ষার জন্য দেশে আলাদাভাবে অডিট আইনের দরকার নেই বলেও মনে করে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।