জুমবাংলা ডেস্ক : সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ পালন করেছেন এমন ব্যক্তিদের কাছে ফোনকল করা হয় ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হিসাবরক্ষক পরিচয় দিয়ে। তারা ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কাছে ৭৫ হাজার টাকা পাওনা রয়েছেন, এমনটাই বলা হয় মোবাইলের অপর প্রান্ত থেকে। এসময় হাতিয়ে নেওয়া হয় ব্যাংকের ডেবিট, ক্রেডিট কার্ডের তথ্য। এভাবে কৌশলে অর্থ আত্মসাৎ চক্রের মূলহোতাসহ দুই জনকে গ্রেফতারের তথ্য জানিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সিটি সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন।
বৃহস্পতিবার (২৭ জুলাই) ফরিদপুর সদরের চর কমলাপুর এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয় বলে জানানো হয়েছে। গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিরা হলেন—কথিত চক্রের ‘মূলহোতা’ সিরাজুল ইসলাম ওরফে শুভ (২৯) ও তার সহযোগী শরীফুল ইসলাম (২৯)। গ্রেফতারের সময় তাদের কাছ থেকে পাঁচটি মোবাইল ফোন, সিমকার্ড জব্দ করার কথাও জানিয়েছে পুলিশ।
সিটি সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনের সহকারী পুলিশ কমিশনার মো. আরিফুল হোসেইন তুহিন এ তথ্য জানান। তিনি বলেন, এ বছর সরকারি ব্যবস্থাপনায় যারা হজ পালন করতে গিয়েছিলেন তাদের মোবাইল নম্বরসহ তালিকা সরকারি একটি ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। প্রতারক চক্রটি ওয়েবসাইটের তালিকার তথ্য ব্যবহার করে বিভিন্ন মোবাইল ফোন নম্বরের মাধ্যমে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের হিসাবরক্ষক পরিচয় দেয়। একপর্যায়ে হজের খরচ থেকে উদ্বৃত্ত টাকা ফেরত দেওয়ার কথা বলে তাদের ব্যাংকের ডেবিট, ক্রেডিট (মাস্টার/ভিসা) কার্ড নম্বর এবং সিডিসি/সিভিভি নম্বর সুকৌশলে সংগ্রহ করে চক্রটি।
পরে চক্রটি এসব কার্ডের নম্বর ব্যবহার করে অবৈধ ট্রানজেকশন করতে চাইলে রিয়েল টাইমে ব্যাংকের সার্ভার থেকে তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে ওটিপি গ্রাহকের মোবাইলে চলে আসে। এ পর্যায়ে চক্রটি গ্রাহকের সঙ্গে ফোনে কথা বলে জানায়, ব্যাংক থেকে আপনার কাছে আপনার আবেদন করা সিরিয়াল নম্বর পাঠানো হয়েছে। ওই নম্বরটি আমাদের জানান। আসলে ওই নম্বরটিই ট্রানজেকশনের স্বয়ংক্রিয় ওটিপি, যা ব্যবহার করে প্রতারকরা ওই গ্রাহকের ডেবিট, ক্রেডিট (মাস্টারকার্ড/ভিসা) কার্ডের সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নিয়ে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিয়ে লেনদেনটি সম্পন্ন করে থাকে।
তিনি আরও বলেন, এ বিষয়ে সিটিটিসি সাইবার ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন ডিভিশনে একটি অভিযোগ আসে। সেই অভিযোগের ভিত্তিতে ছায়াতদন্তে নেমে চক্রটির সদস্যদের শনাক্ত করে গ্রেফতার করা হয়।
আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে পুলিশ কর্মকর্তা জানান, চক্রের মূল হোতা সিরাজুল ইসলাম ওরফে শুভ তার সহযোগীদের যোগসাজশে এ বছর সরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ পালন করে এসেছেন এমন হাজিদের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ২৫ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছে।
তিনি জানান, চক্রটি গত ১০ বছরের বেশি বিভিন্ন ধরনের ইলেক্ট্রনিক প্রতারণার সঙ্গে জড়িত। তারা মূলত সরকারি বিভিন্ন ওয়েবসাইট থেকে সরকারি সেবা গ্রহীতাদের তথ্য সংগ্রহ করে প্রতারণার জাল বিস্তার করে। বিধবা ভাতা, বয়স্ক ভাতা, উপবৃত্তি, সরকারি বিভিন্ন কল্যাণ ভাতা থেকে অনুদানসহ সরকার ঘোষিত সুবিধাপ্রাপ্তদের টার্গেট করেই বছরের পর বছর একের পর এক প্রতারণা করেছে তারা। এরমধ্যে শরীফুল ইসলামের বিরুদ্ধে একাধিক প্রতারণার মামলা রয়েছে। তিন মাস আগেই সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের কল্যাণ অনুদানের সুবিধাভোগীদের অর্থ আত্মসাৎ করার মামলায় ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে শরীফুল গ্রেফতার হয়। এক মাস আগে জামিনে বের হয়ে আবার সে প্রতারণা শুরু করে। তবে এক দশকের বেশি সময় ধরে অপরাধ করেও গ্রেফতার এড়িয়ে চলতে পেরেছিল চক্রের মূল হোতা সিরাজুল ইসলাম ওরফে শুভ।
গ্রেফতাকৃরতদের পল্টন থানায় দায়ের করা মামলায় সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।