জুমবাংলা ডেস্ক : সরকারি চাকরি সংশোধন অধ্যাদেশ ২০২৫ সম্প্রতি জারি হওয়ার পর থেকেই সচিবালয়ের পরিবেশ উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে। আন্দোলন, মিছিল, এবং তীব্র প্রতিবাদে মুখর হয়ে উঠেছেন বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। অধ্যাদেশটির মূল বিষয়বস্তু এবং এর বিরুদ্ধে উঠে আসা বিরোধিতার কারণ খতিয়ে দেখলে বোঝা যায়, এটি সরকারি চাকরিজীবীদের জীবনে এক নতুন শৃঙ্খলা কাঠামো তৈরি করতে যাচ্ছে যা একদিকে যেমন নিয়ন্ত্রণমূলক, অন্যদিকে তা বিভ্রান্তি এবং ভয়েরও জন্ম দিচ্ছে।
Table of Contents
সরকারি চাকরি সংশোধন অধ্যাদেশ ২০২৫ জারি: কী রয়েছে এই আইনে
সরকারি চাকরি সংশোধন অধ্যাদেশ ২০২৫, সংক্ষেপে যাকে বলা হচ্ছে “সংশোধন অধ্যাদেশ”, এটি ২০১৮ সালের সরকারি চাকরি আইন সংশোধন করে প্রণীত হয়েছে। এই আইনের মাধ্যমে একটি নতুন ধারা সংযোজন করা হয়েছে—ধারা ৩৭ক—যার আওতায় সরকারি কর্মচারীদের আচরণ এবং শাস্তির বিষয়কে নতুন করে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে।
এই ধারা অনুসারে, নিচের চারটি কাজ এখন থেকে সরকারি চাকরিতে অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে:
- অনানুগত্যমূলক আচরণ বা অন্য কর্মচারীদের মধ্যে অনানুগত্য সৃষ্টি করা।
- বিনা ছুটিতে বা যৌক্তিক কারণ ছাড়া কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকা।
- অন্য কর্মচারীকে দায়িত্ব পালনে বাধা দেওয়া বা উসকানি দেওয়া।
- কারো কর্তব্য পালনে বাধাগ্রস্ত করা।
এই অপরাধগুলোর শাস্তি হিসেবে থাকছে:
- নিম্নপদে বা বেতন গ্রেডে অবনমিতকরণ
- চাকরি থেকে অপসারণ
- চাকরি থেকে বরখাস্ত
নির্বাহী আদেশ দ্বারা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ অভিযোগ গঠন করতে পারবে এবং ৭ কার্যদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর নোটিশ প্রদান করা হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট দণ্ড কার্যকর করা হবে, আর এর বিরুদ্ধে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে আপিল করা যাবে। তবে রাষ্ট্রপতির আদেশের বিরুদ্ধে শুধুমাত্র পুনর্বিবেচনার আবেদন করা সম্ভব, আপিল নয়।
কেন প্রতিবাদে উত্তাল সচিবালয়
এই অধ্যাদেশের বিরুদ্ধে সচিবালয়ে টানা তৃতীয় দিনের মতো চলছে বিক্ষোভ। কর্মচারীরা দাবি করছেন, এই আইনটি নিবর্তনমূলক ও সাংবিধানিক অধিকারের পরিপন্থী।
এক কর্মচারী বলেন, “ছুটি না নিলে বা অনুপস্থিত থাকলে কোনো নোটিশ ছাড়াই বরখাস্ত করা যাবে—এটা আমাদের স্বাধীনতাকে খর্ব করে।”
অন্য একজন বলেন, “আমাদের গেটে অবস্থান নিতে হচ্ছে যাতে সরকারের কানে পৌঁছে এই কালো আইন বাতিল হয়।”
সরকারের তরফে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জানিয়েছেন, “২০১৮ সালে নির্বাচন কারসাজির জন্য আনা সংশোধন বাতিল করে আগের অবস্থায় ফিরিয়ে আনা হয়েছে।” কিন্তু কর্মচারীরা বলছেন, বর্তমান ধারা আরও কঠিন ও দমনমূলক।
সরকার বলছে, রাষ্ট্রপতির ৯৩(১) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী পরিস্থিতির গুরুত্ব বিবেচনায় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তবে কর্মচারীরা এই অধ্যাদেশকে ‘কালোধারা’ হিসেবে আখ্যায়িত করে তা বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ করছেন।
দেখা যাচ্ছে, আইনের ফাঁক-ফোকর ও ব্যাখ্যার অস্পষ্টতা কর্মীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা ও আতঙ্ক তৈরি করছে।
আইনের সংক্ষিপ্ত বিবরণ ও আপিল প্রক্রিয়া
নোটিশ ও শুনানি প্রক্রিয়া
অভিযোগ উঠলে ৭ দিনের মধ্যে কারণ দর্শানোর সুযোগ থাকবে। অভিযুক্ত ব্যক্তিগত শুনানিতে অংশগ্রহণ করতে চাইলে সে সুযোগও থাকবে। নোটিশ ইমেইল, পত্রিকা বা অফিসিয়াল বিজ্ঞপ্তি দ্বারা প্রদান করা হবে।
আপিল ও পুনর্বিবেচনা
আদেশ পাওয়ার পর ৩০ দিনের মধ্যে আপিল করা যাবে। রাষ্ট্রপতির আদেশ চূড়ান্ত হলেও, তা ধারা ৩৬ এর আওতায় পুনর্বিবেচনার জন্য আবেদনযোগ্য।
তীব্র বিরোধিতা ও ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা
আইনটি এখনো কার্যকর হলেও এর বাস্তব প্রয়োগ এবং আপিল ব্যবস্থার সুষ্ঠুতা সময়ই বলে দেবে। সচিবালয়ের আন্দোলন আপাতত আইন বাতিল না হওয়া পর্যন্ত চলবে বলেই জানা গেছে।
যদি সংলাপের মাধ্যমে সমাধানে পৌঁছানো না যায়, তাহলে এই অধ্যাদেশ বাংলাদেশের প্রশাসনিক কাঠামোতে একটি বড় ধরনের দ্বন্দ্বের জন্ম দিতে পারে।
FAQs
- সরকারি চাকরি সংশোধন অধ্যাদেশ ২০২৫ কী?
এটি ২০১৮ সালের চাকরি আইন সংশোধন করে প্রণীত একটি অধ্যাদেশ যা কর্মচারীদের আচরণ ও শাস্তি নির্ধারণে নতুন বিধান যুক্ত করেছে। - এই আইনে কী কী অপরাধ ধরা হয়েছে?
অনানুগত্য, অনুপস্থিতি, উসকানি, ও কর্তব্যে বাধাদান—এই চারটি কাজকে অপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। - শাস্তি কী কী হতে পারে?
অবনমিতকরণ, অপসারণ এবং বরখাস্ত—এই তিনটি শাস্তি দেওয়া যেতে পারে। - এই আইনের বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে?
হ্যাঁ, তবে রাষ্ট্রপতির আদেশ চূড়ান্ত হলেও পুনর্বিবেচনার আবেদন করা যাবে। - কেন এই আইন বিতর্কিত?
কর্মচারীদের মতে, এই আইন স্বাধীনতা হরণ করে এবং তা সংবিধানের পরিপন্থী।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।