সঞ্জীব চন্দ বিল্টু, বাসস: সরকারের সুদূরপ্রসারী উন্নয়নে বদলে যাচ্ছে শেরপুর। এখন জেলায় সড়ক যোগাযোগ ও সেতুখাতে দৃশ্যমান উন্নয়ন হয়েছে। সেই সঙ্গে বেড়েছে এলাকার ভূমি মূল্যসহ অধিবাসীদের কর্মসংস্থান। কৃষিসহ আর্থ-সামাজিক অবস্থার হয়েছে পরিবর্তন। পাল্টে গেছে মানুষের জীবনমান।
অন্যদিকে সহজতর যোগাযোগ ব্যবস্থায় সীমান্তের গারো পাহাড়সহ শেরপুর অঞ্চলের বিভিন্ন ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় এলাকায় বেড়েছে পর্যটকদের যাতায়াত। বর্তমান শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের উন্নয়ন অভিযাত্রার এক দশকে সড়ক ও জনপথ, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল, জেলা পরিষদ ও শেরপুর পৌরসভাসহ চারটি পৌরসভার অধীনে উন্নয়নের চিত্র পাওয়া গেছে শেরপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে।
জেলায় সওজ, এলজিইডি, জেলা পরিষদ ও চারটি পৌরসভার অধীনে গত ২০০৯ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত এক দশকের সময়কালে সরকারের সুদূরপ্রসারী উন্নয়ন পরিকল্পনার আওতায় সড়ক যোগাযোগ ও সেতু খাতেই ব্যয় হয়েছে প্রায় ২ হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে কেবল সওজ বিভাগের অধীনে প্রায় ৮২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রায় ১৮ শ’ মিটারের সর্বমোট ২২০টি বড় ও মাঝারি ব্রিজ নির্মাণ এবং নকলা-নালিতাবাড়ী নাকুগাঁও স্থলবন্দর সড়ক উন্নয়নের মেগা প্রকল্পসহ প্রায় ১১৮ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণ ও পুনর্র্নিমাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে।
সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসান উদ্দিন আহমদ জানান, এসব প্রকল্পের মধ্যে ২৩৯ কোটি ৫৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ২৮.৯০ কিলোমিটার দৈর্ঘের নকলা-নালিতাবাড়ী-নাকুগাও স্থলবন্দর সড়ক ২ লেনে প্রশস্ত করা হয়েছে। ওই প্রকল্পের আওতায় সড়কের দুপাশের ভূমি অধিগ্রহণ ও সড়কে নির্মাণ করা হয়েছে বেশ কয়েকটি বড় ও মাঝারি ব্রিজ-কালভার্ট। একই সময়ে ৮১ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘের সীমান্ত সড়কের শেরপুর অংশে প্রশস্ত করা হয়েছে। ৬৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৪.৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘের বনগাঁও-নন্নী সড়ক প্রশস্ত ও মজবুতিকরণ হয়েছে। ১১ কোটি ২০ লাখ টাকা ব্যয়ে ২০.১৩ কিলোমিটার দৈর্ঘের শেরপুর-নকলা-ফুলপুর-ময়মনসিংহ সড়ক মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণ করা হচ্ছে। বৃহত্তর ময়মনসিংহ জেলার দুটি সড়ক উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় ৩৫ কোটি ৩৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ১২.৩০ কিলোমিটার দৈর্ঘের শেরপুর-শ্রীবরদী-বকশীগঞ্জ সড়ক প্রশস্তকরণ, ৬৩ কোটি ৬৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৩.৮২ কিলোমিটার দৈর্ঘের বনগাঁও-নন্নী-হাতিপাগার সড়ক উন্নয়ন করা হয়েছে। প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘের নালিতাবাড়ী-পাপিয়াঝুড়ি সড়ক উন্নয়ন, ৫ কোটি ৭৭ লাখ টাকা ব্যয়ে ২ কিলোমিটার দৈর্ঘের নকলা-শিববাড়ী সড়ক উন্নয়ন, নকলা-সীমান্ত সড়কের ভোগাই নদীর ওপর ১৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৮৬ মিটার দৈর্ঘের ভোগাই সেতু ও ৪ কোটি ৭২ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪৭ মিটার দৈর্ঘের বগাডুবি সেতু নির্মাণ করা হয়েছে। অন্যদিকে ১৩৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ৩৪.৭০ কিলোমিটার দৈর্ঘের জামালপুর-শেরপুর-বনগাঁও সড়ক প্রশস্ত ও মজবুতিকরণ এবং ৪৯ কোটি ৭১ লাখ টাকা ব্যয়ে ১১.৬০ কিলোমিটার দৈর্ঘের নকলা বাইপাস সড়ক প্রশস্ত ও মজবুতিকরণসহ ৫ কোটি ৬৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ৪৩ মিটার দৈর্ঘ্যরে দুগধা সেতু নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। তাছাড়া ৮২ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৪.৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘের শেরপুর (আখেরমামুদের বাজার)-লঙ্গরপাড়া-শ্রীবরদী-মামদামারী জেলা সড়ক, ৪৯ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ব্যয়ে ২.৬০ কিলোমিটার দৈর্ঘের কানাশাখোলা-অষ্টমীতলা সংযোগ সড়ক, ৪১ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘের নালিতাবাড়ী-বড়–য়াজানি-বাঘাইতলা-হালুয়াঘাট সড়ক, ৪৬ কোটি ২৫ লাখ টাকা ব্যয়ে ১৯.৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘের শ্রীবরদী-ভায়াডাঙ্গা-ঝিনাইগাতী সড়ক, ৮ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে ১২.৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘের জুলগাও-ঝিনাইগাতী-সন্ধ্যাকুড়া সড়ক, ৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ১১.৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘের বনগাঁও-নালিতাবাড়ী সড়ক এবং ২৫৭ কোটি ৫৩ লাখ টাকা ব্যয়ে ময়মনসিংহ (রঘুরামপুর)-ফুলপুর-নকলা-শেরপুর (আর-৩৩১) আঞ্চলিক মহাসড়ক উন্নয়নে পৃথক ও বৃহৎ সাতটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। ওইসব প্রকল্পগুলো বাস্তবায়িত হলে শেরপুরে সড়ক বিভাগের আওতায় উন্নয়ন ক্ষেত্রে আরও দৃশ্যমান উন্নয়ন হবে।
স্থানীয় সরকার নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান জানান, ২০২৩ সালের মধ্যে শেরপুর জেলায় যোগাযোগ ব্যবস্থা ও কৃষি জমিতে সেচ ব্যবস্থার ব্যপক উন্নয়ন হবে। এবং শেরপুর একটি মডেল জেলা হিসেবে পরিচিতি লাভ করবে।
শেরপুর পৌর মেয়র গোলাম কিবরিয়া লিটন বলেন, নগর উন্নয়ন প্রকল্পের অধীনে শেরপুর পৌরসভাকে আধুনিককরণের কাজ চলছে। ইতিমধ্যে রাস্তা-ঘাট ও বিদ্যুৎ উন্নয়নসহ আধুনিক পৌরসভা হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছে। চলমান কাজ শেষ হলে দেশের যেকোন পৌরসভা থেকে শেরপুর পৌরসভা একটি পরিচ্ছন্ন ও আলোকিত শহর হিসেবে নজর কারবে।
শেরপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি হুইপ আতিউর রহমান আতিক বাসসকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে শেরপুর জেলার রাস্তাঘাট, কৃষি, তথ্য প্রযুক্তি, শিক্ষা ও স্বাস্থ্য ব্যবস্থা নিয়ে আমরা যে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছিলাম তা অক্ষরে অক্ষরে পালন করে যাচ্ছি। শেরপুরে যে উন্নয়নের কাজ হয়েছে তার ধারাবাহিকতা বজায় রাখার চেষ্টা করছি। ভবিষ্যতে শেরপুর একটি আধুনিক মডেল জেলা হিসেবে গড়ে গড়ে তুলতে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।