আন্তর্জাতিক ডেস্ক : দশ কোটি বছর আগের একটি দৈত্যকার সামুদ্রিক সরীসৃপ প্রাণির কঙ্কাল আবিষ্কার হয়েছে। চলতি বছরের আগস্টে অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডে কঙ্কালটি খুঁজে পান একদল জীবাশ্ম গবেষক। ৬ মিটার লম্বা (১৯ ফুট) কঙ্কালটি প্লেসিওসর নামে এক প্রজাতির প্রাণীর।
কঙ্কালটি আবিষ্কারে উচ্ছ্বসিত গবেষকরা বলছেন, এর মাধ্যমে প্রাগৈতিহাসিক জীবন সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া যেতে পারে। সিএনএনের প্রতিবেদন মতে, তিন অপেশাদার জীবাশ্ম গবেষক পশ্চিম কুইন্সল্যান্ড আউটব্যাকের একটি গবাদি পশু খামারে মাঝারি বয়সের লম্বা-গলাযুক্ত প্লেসিওসরের দেহাবশেষটি খুঁজে পান।
কুইন্সল্যান্ড মিউজিয়ামের প্যালিওন্টোলজির সিনিয়র কিউরেটর এসপেন নুটসেন এই কঙ্কাল আবিষ্কারের বিষয়টিকে রোসেটা পাথর আবিষ্কারের সঙ্গে তুলনা করেছেন। ১৭৯৯ সালে গ্রানাইটের প্রাচীন মিশরীয় ব্লক (নুটসেন রোসেটা) পাওয়া যায়। যা বিশেষজ্ঞদের হায়ারোগ্লিফিক্সের রহস্যভেদ করতে সাহায্য করেছিল।
এক বিবৃতিতে এসপেন নুটসেন বলেন, ‘অতীতে আমরা এই প্রাণির দেহ ও মাথা একসঙ্গে পাইনি। তাই এই ক্ষেত্রে ভবিষতে গবেষণা অব্যাহত থাকতে পারে। এটি জীবাশ্মবিদদের এ অঞ্চলের ক্রিটেসিয়াস যুগের উৎস, বিবর্তন এবং বাস্তুবিদ্যা সম্পর্কে আরও বেশি অন্তর্দৃষ্টি দিতে পারে।’
তিনি আরও বলেন, এর আগের প্লেসিওসরগুলোর দুই-তৃতীয়াংশ ঘাড় ছিল। প্রায়ই মৃত্যুর পরে মাথাটি শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত। ফলে উভয়কে একসঙ্গে সংরক্ষণ করে এমন একটি জীবাশ্ম খুঁজে পাওয়া খুব কঠিন হয়ে যায়।
ইলাসমোসর ৮ থেকে ১০ মিটারের মধ্যে লম্বা হতো। মূলত ইরোমাঙ্গা সাগরে এরা বাস করতো। ইরোমাঙ্গা সাগর প্রায় ১৫ কোটি বছর বছর আগে ৫০ মিটার গভীরতা নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার অভ্যন্তরীণ অংশ জুড়ে বিস্তৃতি ছিল।
নুটসেন বলেছেন, ইলাসমোসর যখন মারা যেত, তখন তার পচনশীল দেহটি গ্যাসের কারণে ফুলে যেত, যা এটিকে পানির ওপরে নিয়ে আসতে সাহায্য করতো। তাছাড়া শিকারের পদ্ধতির কারণে এগুলোর মাথা প্রায়ই বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত। ফলে সম্পূর্ণ দেহ পাওয়া কঠিন হয়ে যায়।
প্লেসিওসর নামে একটি প্রাণী প্রাগৈতিহাসিককালে সাঁতরে বেড়াত আমাদের পৃথিবীর সমুদ্রে। ১০ কোটি বছর পর হারিয়ে যায় সেই প্রাণী, অস্তিত্ব নেই অনেক সমুদ্রেরও। অস্ট্রেলিয়ার এমনই একটি শুকিয়ে যাওয়া সমুদ্রে মিলেছে ডায়নাসোর যুগে বাস করা প্লেসিওসরের ফসিল। এ প্রথম গোটা একটি প্লেসিওসরের কঙ্কাল পাওয়া গেল।
প্লেসিওসর একটি সরীসৃপ প্রাণী। অর্থাৎ এরা বুকের ওপর ভর করে চলে। এদের গলা জিরাফের গলার মতো লম্বা, আর দেহ ও পাখনা দেখতে সামুদ্রিক কচ্ছপের মতো। দেহ আর পাখনা কচ্ছপের মতো হলেও, প্লেসিওসরের আকার বিশাল আর তাদের খোলসও নেই। এরা দৈর্ঘ্যে প্রায় ৫০ ফুট পর্যন্ত হতে পারত। অস্ট্রেলিয়ার কুইন্সল্যান্ডে পাওয়া এই প্রাণীটি লম্বায় প্রায় ২২ ফুট।
অস্ট্রেলিয়ার এই অঞ্চলটি এক সময় সমুদ্র ছিল। সেখানে পানির নিচে ঘুরে বেড়াত বিশাল বিশাল প্রাণী। কালের বিবর্তনে সেটি এখন শুষ্ক সমতল ভূমি। আর সেখানে ঘুরে বেড়ায় মানুষ। গবেষকরা এ প্রাণীর অক্ষত ফসিল দেখে সত্যিই খুব অবাক হয়েছেন।
তারা এটিকে সামুদ্রিক জীবাশ্মবিদ্যার ‘রোসেটা পাথর’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন। ১৭৯৯ সালে মিশরের রশিদ শহরে এই প্রস্তরখন্ড খুঁজে পান ফরাসি সৈন্যদলের এক প্রকৌশলী। পাথরটি এখন ব্রিটিশ জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।