জুমবাংলা ডেস্ক : সরকারি মজুদে জন্মনিয়ন্ত্রণসামগ্রীর সংকট দীর্ঘদিনের। মুখে খাওয়ার পিলের মজুদও ফুরিয়ে আসছে। মজুদ আছে মাত্র কয়েক মাসের। কালবেলাসহ বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়। জরুরি ভিত্তিতে মুখে খাওয়ার পিল কেনার উদ্যোগ নেয় পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর। অধিদপ্তর পাঁচটি লটে প্রায় ২৪২ কোটির বেশি টাকার মুখে খাওয়ার পিল কেনাকাটার উদ্যোগ নেয়। উন্মুক্ত দরপত্রে সাতজন সরবরাহকারী দরপত্র সংগ্রহ করে। শেষ পর্যন্ত তিনটি প্রতিষ্ঠান নির্দিষ্ট সময়ে দরপত্র জমাও দেয়। সবছিলো ঠিকঠাক। বিপত্তি ঘটে কাজটি পাইয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে। অভিযোগ ওঠে, তড়িঘড়ি করে দরপত্র যাচাই বাছাই শেষ করে কর্তৃপক্ষ। সর্বোনিম্ন দরদাতাকে বাদ দিয়ে পছন্দের সরবরাহকারীকে কাজ পাইয়ে দিতে ভেতরে ভেতরে চলছে কাজ। সব ঠিক থাকলে অল্প সময়ের মধ্যে পছন্দের সরবরাহকারীকে নোটিফিকেশন অফ অ্যাওয়ার্ড (কার্যাদেশ) দেওয়ার কথা রয়েছে। জনস্বাস্থ্যবিদেরা মনে করেন, স্বাস্থ্যখাতে অনিয়ম এখন নিয়মে পরিণত হয়েছে। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর ব্যতিক্রম নয়। তবে এ খাতের অনিয়ম রোধ করা সম্ভব না হলে দেশের জনসংখ্যার ওপর বিরুপ প্রভাব পরতে পারে।
সরকারের ওয়েবসাইটে (সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট পোর্টাল) দেখা যায়, দেশের প্রায় ৩৮টি উপজেলায় মুখে খাওয়ার মুজদ নেই। অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা জানান, মজুদ থাকা মুখে খাওয়া বড়িতে আর মাত্র চারমাস কার্যক্রম চলতে পারে।
মুখে খাওয়ার বড়ি কেনাকাটার নথি বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ফিল্ড সার্ভিসেস ডেলিভারি(এফএসডি/জিডি)-৪ এর আওতায় জিওবি (উন্নয়ন) আরপিএ ( জিওবি) খাতের অর্থায়নে ৫টি লটের মাধ্যমে মুখে খাওয়ার জন্মনিরোধক পিল কেনাকাটার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। গত ২৭ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত দরপত্র কিনে সাতটি সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান অংশ নেয়। শেষ পর্যন্ত নির্দিষ্ট সময়ে (২৮ ফেব্রুয়ারি) ঔষধ উৎপাদক প্রতিষ্ঠান রেনেটা, টেকনো ড্রাগস লিমিটেড ও পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস দরপত্র জমা দেয়। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর প্রতি ইউনিট মুখে খাওয়ার বড়ি ৫০ দশমিক ৫০ টাকার মধ্যে কেনার উদ্যোগ নেয়। সেই হিসেবে ৪৮ মিলিয়ন সাইকেল পিল কেনায় ব্যয় ধরা হয়েছে ২৪২ কোটি ৪০ লাখ টাকা। দরপত্রে অংশ নিয়ে টেকনো ড্রাগস প্রতি ইউনিট মুখে খাওয়ার পিলের দাম ধরে ৪৬ দশমিক ৮৫ টাকা। পপুলার ফার্মাসিউটিক্যালস ও রেনেটা প্রতি ইউনিটের দাম ধরে ৪৯ দশমিক ৭৫ টাকা।
অভিযোগ রয়েছে, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপকরণ ও সরবরাহ ইউনিটের পরিচালক জাকিয়া আখতারের বিরুদ্ধে। তিনি নিজেই দরপত্র উন্মুক্তকরণ কমিটির সভাপতি। তার ইচ্ছোয় সর্বোনিম্ন দরদাতা হয়েও কাজটি পাচ্ছে না টেকনো ড্রাগস নামের সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান। পরিচালকের পছন্দের প্রতিষ্ঠান রেনেটাকে কাজটি পাইয়ে দিতে অন্তরালে সব আয়োজন ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে। পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, পাঁচটি লটের ৪৮ মিলিয়ন সাইকেল মুখে খাওয়ার পিল কেনাকাটায় অধিদপ্তরের পরিচালক রেনেটাকে এককভাবে নির্বাচন করে রেখেছেন। এতে একদিকে সরবরাহকারী লাভবান হবে। সঙ্গে উপকরণ ও সরবরাহ ইউনিটের পরিচালকও। অপচয় হবে রাষ্ট্রের অতিরিক্ত অর্থ।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের উপকরণ ও সরবরাহ ইউনিটের পরিচালক এবং দরপত্র উন্মুক্তকরণ কমিটির সভাপতি জাকিয়া আখতার বলেন, টেন্ডার ইভ্যালুয়েশন (দরপত্র পুনর্মূল্যায়ন) চলছে। চলমান একটি প্রক্রিয়া নিয়ে আমি মন্তব্য করতে চাই।
জনস্বাস্থ্য সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক ডা. ফয়জুল হাকিম বলেন, স্বাস্থ্যখাতে সরকারি কেনাকাটায় দুর্নীতি নিয়মিত ব্যাপার হয়ে গেছে। প্রয়োজনীয় জিনিসের সংকট বছরের পর বছর লেগে থাকে। কেনাকাটার সবক্ষেত্রে অনিয়ম যেনো নিয়ম। পরিবার পরিকল্পনা খাত ব্যতিক্রম নয়। এখানে কেনাকাটায় খতিয়ে দেখা দরকার। অভিযোগ প্রমাণ হলে প্রকল্প সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানাই।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।