মানবদেহ সর্বোচ্চ কী পরিমাণ মহাকর্ষ বলের বিরুদ্ধে টিকে থাকে পারবে, তা জানতে ক্রোয়েশিয়ার জাগরাব বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নিকোলা পোলজাক ও তাঁর সহকর্মীরা প্রথমবারের মতো মানুষের হাড়ের চাপসহন ক্ষমতা নির্ণয় করেন।গড়পড়তা স্তন্যপায়ী প্রাণীদের হাড়ের ওপর ভিত্তি করে তাঁরা হিসেব করে দেখেন, মানুষের কঙ্কাল পৃথিবীর চেয়ে প্রায় ৯০ গুণ বেশি মহাকর্ষ বল সহ্য করতে পারার কথা।
তবে এই বল সহ্য করার জন্য মানুষকে স্থির থাকতে হবে। যে মুহূর্তে আমরা চলা শুরু করব, তখনই হাড়ের মাঝে শুরু হবে পীড়ন। বেঁকে যেতে শুরু করবে দেহের সবকটি হাড়। তবে ভেঙে যাওয়ার আগে হয়তো সহ্য করতে পারবে ১০ গুণের মতো পীড়ন। অর্থাৎ পৃথিবী থেকে ১০ গুণ মহাকর্ষের গ্রহে হয়তো আমরা দৌড়াতে পারব হাড়গোড় ভাঙা ছাড়াই।
তবে কঙ্কালের এ সক্ষমতা আসলে অর্থহীন। কারণ দেহে কঙ্কালের সঙ্গে লেগে থাকে স্থিতিস্থাপক মাংসপেশি। আরও আছে রক্ত ও তরল পদার্থ। কঙ্কালের মতো এগুলো শক্তিশালী নয়। হঠাৎ ওজন বেড়ে যাওয়ার ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হতে পারে নানা অঙ্গ। ফলে কঙ্কাল ঠিক থাকলেও পুরো মানবদেহের এ অবস্থায় দাঁড়িয়ে থাকা বা হাঁটা প্রায় অসম্ভব ব্যাপার। তবে হাঁটু ওপরের দিকে ভাঁজ করে, অর্থাৎ স্কোয়াট আসনে বসার সক্ষমতা আছে মানুষের।
অর্থাৎ দাঁড়িয়ে থাকা কঠিন হলেও এ সময় এভাবে বসে প্রাণ রক্ষা করা যেতে পারে। অধ্যাপক পোলজাক হিসেব করে দেখেছেন, পৃথিবীর চেয়ে ৫ গুণ শক্তিশালী মহাকর্ষের গ্রহেও বসা অবস্থা থেকে নড়া সম্ভব নয়। এমনকি পৃথিবীর সেরা ক্রীড়াবিদের জন্যও কথাটা খাটবে। কারণ প্রায় ৫০০ নিউটন বা ১১০ পাউন্ড যে কারো ওজন সেখানে বসে থাকা অবস্থায় ৩২০ পাউন্ডের সমতুল্য হবে।
সর্বোচ্চ কী পরিমাণ মহাকর্ষ বল থাকলে মানুষ হাঁটতে পারবে, তা দেখার জন্য এ গবেষক দল একটি পরীক্ষা করে। তাতে আইসল্যান্ডের ব্যায়ামবীর হাফথার জুলিয়াস বিয়নসন একবার ১ হাজার ৪৩০ পাউন্ড ওজনের কাঠের গুঁড়ি নিয়ে ৫ পা হেঁটেছিলেন। এর মাধ্যমে তিনি ১ হাজার বছরের পুরোনো রেকর্ড ভেঙে দেন। মানুষের পক্ষে এ পরিমাণ ওজন নিয়ে হাঁটার এটাই সর্বোচ্চ রেকর্ড।
আগেই বলেছি, শক্তিশালী মহাকর্ষ মানেই বাড়তি ওজন। আর এখানে ওজন বাড়ানোর কাজটি করা হয়েছে অতিরিক্ত ওজন কাঁধে নিয়ে। বেশি ওজন ধরে রাখার জন্য যেমন পা ও পায়ের পেশি শক্তিশালী হওয়া প্রয়োজন, তেমনি বেশি মহাকর্ষ বলবিশিষ্ট গ্রহের পৃষ্ঠে দাঁড়ানোর জন্যও একই কথা খাটে।
যাহোক, বিজ্ঞানীরা বিয়নসনের দেহের ওজন ও কাঠের গুঁড়ির ওজন থেকে হিসেবে করে দেখেন, কোনো গ্রহের পৃষ্টে মহাকর্ষ বলের পরিমাণ পৃথিবীর প্রায় ৪.৬ গুণ হলেও মানুষ ‘হয়তো’ সেখানে টিকে যেতে পারবে।
‘হয়তো’ যে বলছি, তার কারণ আছে। কারণটা এই ভদ্রলোক— জুলিয়াস বিয়নসন। এই মানুষটি সম্পর্কে জানলে চমকে যাবেন। সচরাচর পথে-ঘাটে এমন মানুষের দেখা পাওয়া যায় না। ভদ্রলোক উচ্চতায় ৬ ফুট ৯ ইঞ্চি। ৪০০ পাউন্ডের বেশি দেহের ওজন। ২০১৮ সালে তিনি ‘অ্যার্নল্ড স্ট্রংম্যান ক্লাসিক’ প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করেন।
এটি পৃথিবীশ্রেষ্ঠ ব্যায়ামবীর ও সবচেয়ে শক্তিশালী মানুষদের শক্তিমত্তা প্রদর্শনের একটি প্রতিযোগিতা। মনে আছে নিশ্চয়ই, গবেষণাপত্রটি এ প্রতিযোগিতার ঠিক এক বছর পরে জার্নালে প্রকাশিত হয়েছিল। তবে গবেষণাটি শেষ হয় ২০১৮ সালেই। তখন একটি অনলাইন জার্নালে পিয়ার রিভিউয়ের জন্য জমা পড়েছিল গবেষণাপত্রটি।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।