রাজশাহীতে এক মাসেরও বেশি সময় তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছিলো। কখনও মৃদু, কখনও মাঝারি।
আবার কখনও তীব্র তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছিল রাজশাহীর ওপর দিয়ে। গরমের দাপটে ওষ্ঠাগত হয়ে উঠেছিল জনজীবন। তবে চলতি সপ্তাহে রাজশাহীর তাপমাত্রা অনেকটাই সহনীয় পর্যায়ে চলে এসেছে।
আগের চেয়ে তাপমাত্রা কমতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে বুধবার (৫ মে) রাতে রাজশাহীতে মৌসুমের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। দিনভর ভ্যাপসা গরম থাকলেও। সন্ধ্যার পরপরই আকাশে মেঘ জমতে শুরু করে। রাত সোয়া ৮টার দিকে শুরু হয় দমকা হাওয়া। এরপরই শুরু হয় বজ্রবৃষ্টি। মুষলধারে বৃষ্টি চলে রাত ৯টা পর্যন্ত।
এর পর থেমে থেমে বৃষ্টি চলছে এখনও। ইলশেগুঁড়ি বৃষ্টিতে রোজাদার মানুষের মধ্যে এক অনাবিল প্রশান্তি নেমে এসেছে। স্বস্তির বৃষ্টিতে প্রকৃতিও যেন আবারও সতেজতা ফিরে পেতে শুরু করেছে। প্রচণ্ড খরার কবলে পড়ে গাছ থেকে আমের গুটি ঝরে ঝরে পড়ছিল। বাধ্য হয়ে রাজশাহীর কৃষকরা আমগাছের গোড়ায় সেচ দিচ্ছিলেন। এছাড়া গাছে পানি স্প্রে করছিল। এমন পরিস্থিতিতে বুধবার রাতের বৃষ্টি আমচাষিদের জন্য যেনো আশীর্বাদ হয়ে নেমেছে। এই বৃষ্টি আমের গাছের সেচের কাজ করছে বলে জানিয়েছেন তারা। এতে আর বাড়তি করে আমগাছে সেচ বা পানি ছিটানোর প্রয়োজন হবে না। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে বাগানে বাগানে থাকা অবশিষ্ট আমের ফলন এ দফায় রক্ষা পাবে বলেও আশা করছেন চাষিরা।
এদিকে বুধবারের বজ্রসহ বৃষ্টি মানুষের মনে প্রশান্তির পরশ বুলিয়ে দিয়েছে। বৃষ্টির সঙ্গে বয়ে চলা হিমেল বাতাস যেনো রোদে ঝলসানো মানুষগুলোর শরীরে এখন বাড়তি সুখানুভূতি ছড়িয়ে দিচ্ছে। চলতি মৌসুমে রাজশাহীর তাপমাত্রার পারদ উঠেছিল ৪০ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে। এমন পরিস্থিতিতে বৃষ্টির জন্য হাহাকার পড়ে গিয়েছিল। অবশেষে বুধবার রাতে কাঙ্ক্ষিত বৃষ্টির দেখা মিলেছে। স্বস্তির বৃষ্টিতে টানা দাবদাহ থেকে যেনো হাফ ছেড়ে বেঁচেছেন রাজশাহীর পদ্মাপাড়ের মানুষ। অনেককে তাই রাতের বৃষ্টিতে ভিজতে দেখা গেছে। বৃষ্টির পানিতে ভিজে তারা যেনো দীর্ঘ পিপাসার্ত মন ও প্রাণটাকে জুড়িয়ে নিচ্ছেন।
রাজশাহী আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক রেজওয়ানুল হক জানান, বুধবার রাত ৮টা ১৮ মিনিটে রাজশাহীতে বৃষ্টি শুরু হয়। রাত ৯টা ২৫ মিনিট পর্যন্ত রাজশাহীতে ৫৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এটিই চলতি মৌসুমের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত। এখনও বৃষ্টিপাত চলছে। তাই এর পরিমাণ আরও বাড়বে। এক প্রশ্নের জবাবে আবহাওয়া কর্মকর্তা রেজওয়ানুল হক বলেন, এর আগে মাঝেমধ্যে বৃষ্টিপাত হয়েছে। তবে তার পরিমাণ খুবই কম ছিল। গত ১২ এপ্রিল রাজশাহীর আশপাশের উপজেলা এলাকায় ৭ দশমিক ৪ মিলিমিটার এবং ৯ এপ্রিল ২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়। সর্বশেষ গত ৩ মে রাজশাহীতে বৃষ্টি হয়েছে। ওইদিন মাত্র ১৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছিল। বুধবার প্রথম রাজশাহীতে ভারী বৃষ্টিপাত হলো।
বুধবার বৃষ্টি শুরুর সময় বাতাসের গতিবেগ ছিল ১৮ কিলোমিটার। সাধারণত বাতাসের গতিবেগ ২৮ কিলোমিটার হলে তাকে কালবৈশাখী বলা হয়। তবে রাজশাহীতে কালবৈশাখী হয়নি। দমকা হাওয়া বজ্রবৃষ্টি হয়েছে। বিকেল ৩টায় রাজশাহী সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ২৩ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। বাতাসের আদ্রতা ছিল সকাল ৬টায় ৯৪ শতাংশ এবং সন্ধ্যা ৬টায় ৬৩ শতাংশ।
এদিকে, বৃষ্টি শুরুর পর থেকেই রাজশাহী মহানগর এলাকা বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েছে।
আমাদের ঈশ্বরদী উপজেলা করেসপন্ডেন্ট টিপু সুলতান জানিয়েছেন- দিনভর গরমের তীব্রতার পর সেখানেও রাতে মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছে। প্রায় ১ ঘণ্টার বৃষ্টিতে ঈশ্বদীর মানুষের মধ্যে স্বস্তি ফিরে এসেছে। বিশেষ করে এই বৃষ্টিতে লিচুর অনেক উপকার হয়েছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।