অফিসের সহকর্মীর সঙ্গে প্রেম–বিয়ে বিরল নয়। কর্মজীবনে দিনের অনেকটা সময় সহকর্মীদের সঙ্গে কাটাতে হয়। একসঙ্গে কাজ করতে করতে অনেকেই প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। কর্মস্থলে এমন সম্পর্কের কিছু ভালো দিক যেমন আছে, তেমনি আছে কিছু নেতিবাচক প্রভাব। কেউ মনে করেন এটি ভালো, আবার কেউ মনে করেন এটি সমস্যার কারণ হতে পারে। তাই চলুন জেনে নেওয়া যাক সহকর্মীর সঙ্গে প্রেম ভালো নাকি মন্দ?
ভালো দিক
উদ্যম বাড়ে কর্মক্ষেত্রে:
সহকর্মীর সঙ্গে যাদের প্রেমের সম্পর্ক থাকে, তারা নিজেদের চাকরি নিয়ে অন্যদের চেয়ে বেশি সন্তুষ্ট থাকেন। সম্পর্কটি ইতিবাচক এবং পারস্পরিক সহযোগিতাপূর্ণ হলে কাজের ক্ষেত্রে মনোবল বাড়ে, কাজটি আরও উপভোগ্য হয়ে ওঠে। ইতিবাচক সম্পর্কের কারণে দলের মধ্যে সংহতি ও সহযোগিতা বাড়ে। কাজের ক্ষেত্রে বজায় থাকে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ।
আত্মন্নোয়নের সুযোগ:
একই প্রতিষ্ঠানে কাজ করার ফলে পেশাগত লক্ষ্যগুলোও একই হতে পারে। ফলে কর্মক্ষেত্রে একে অপরকে সমর্থন, সহায়তা দেওয়া এবং এগিয়ে নিয়ে যাওয়া সহজ হয়। একসঙ্গে একই লক্ষ্যে কাজ করলে একে অপরের সফলতার পথে সহায়ক ভূমিকা পালন করা যায়। পেশাগত অর্জনগুলো ব্যক্তিগত সম্পর্ককে আরও দৃঢ় করতে পারে। অফিসে প্রেমের সম্পর্ক থাকলে একজন সাধারণত নিজেকে আরও উন্নত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলতে সচেষ্ট থাকেন। ব্যক্তিগত এবং পেশাগত জীবনের মধ্যে সীমারেখা টানতে আগের চেয়ে বেশি সক্ষম হন।
চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা:
একই অফিসে কাজ করার ফলে দু’জনে পরামর্শ করে সহজেই চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলা করা যায়। পারস্পরিক বোঝাপড়া সহজ হয়। ফলে দু’জনেই কাজের চাপ, সময়সীমা এবং চ্যালেঞ্জগুলো সম্পর্কে সচেতন থাকেন। এছাড়া পারস্পরিক বোঝাপড়া সম্পর্ককে মজবুত করে এবং যোগাযোগকে সহজ করে তোলে। একে অপরের সমস্যাগুলো সহজেই উপলব্ধি করা যায়, যার ফলে সম্পর্কের মধ্যে কম ঝগড়া বা মনোমালিন্য হয়।
সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করে তোলে:
কর্মক্ষেত্রে সহকর্মী হিসেবে একসঙ্গে কাজ করার কারণে প্রতিদিন একে অপরের সাথে সময় কাটানোর সুযোগ থাকে। এটা আপনাদের সম্পর্ককে আরও ঘনিষ্ঠ করে তোলে এবং একসঙ্গে কাজ করার সময় কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পায়। কর্মজীবনের ব্যস্ততার মধ্যেও একসঙ্গে কাজ করার সুযোগ থাকলে সম্পর্কের জন্য আলাদা সময় বের করা সহজ হয় না। সহকর্মী হিসেবে প্রেমের সম্পর্ক থাকলে কর্মস্থলেই একে অপরের সাথে সময় কাটানোর সুযোগ থাকে, যা সম্পর্ককে শক্তিশালী করে।
মন্দ দিক
সমালোচনার শিকার:
প্রেম তো আর গোপন থাকে না। তাই অফিসে প্রেমের সম্পর্কের সঙ্গে সঙ্গে নানা ধরনের আলোচনা-সমালোচনার ডালপালা মেলে। কর্মক্ষেত্রে অন্য সহকর্মীরা নানা রকমের গুজব ছড়াতে পারে বা সম্পর্ক নিয়ে সমালোচনা করতে পারে। এতে কাজের পরিবেশে একটি অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে।
অন্য সহকর্মীদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব:
অফিসে প্রেমের সম্পর্ক থেকে অনেক সময় স্বার্থের দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। বিশেষ করে প্রেমিক বা প্রেমিকার ক্যারিয়ার এবং মূল্যায়নের (বেতন বৃদ্ধি, পদোন্নতি ইত্যাদি) ওপর প্রভাব বিস্তার করার সুযোগ থাকে, তাহলে এই সমস্যা আরও প্রকট হয়।
কাজ ও ব্যক্তিগত জীবনে ব্যাঘাত:
একই অফিসে কাজ করলে প্রেমের সম্পর্কটি ব্যক্তিগত জীবন এবং পেশাগত জীবনের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি করতে পারে। অফিসে প্রেমের সম্পর্কটি যদি কোনো টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে যায়, তাহলে কঠিন হয়ে ওঠে। অফিসে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়ে পড়লে ব্যক্তিগত সম্পর্কের সমস্যা কর্মক্ষেত্রের পরিবেশ নষ্ট করতে পারে। কাজের ঝামেলা বা ভুল বোঝাবুঝি ব্যক্তিগত সম্পর্কের মানসিক শান্তি নষ্ট করতে পারে, যার ফলে সম্পর্কও নষ্ট হতে পারে।
অস্বস্তিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি:
যদি সহকর্মীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক শেষ হয়ে যায়, তাহলে কর্মক্ষেত্রে একে অপরের সঙ্গে দেখা হওয়া এবং প্রতিদিন একসঙ্গে কাজ করা অস্বস্তিকর হয়ে উঠতে পারে। এটি মানসিক চাপের কারণ হতে পারে এবং কাজের পারফরম্যান্সে প্রভাব ফেলতে পারে।
সহকর্মীর সঙ্গে প্রেমের ভালো ও খারাপ দুটি দিকই আছে। ভালোবাসলে তা শক্তি হিসেবে গ্রহণ করে কর্মক্ষেত্রে নিজের সেরাটা দিন। যেন কেউ কাজের ঘাটতির জন্য আপনার সম্পর্কের দিকে আঙুল উঁচাতে না পারে। তবে বিবাহিত সহকর্মীর প্রেমে পড়লে আজই সাবধান হয়ে যান। এমন সম্পর্কের কোনো ভবিষ্যৎ থাকে না। বরং একটা সময় পর তা আপনার কর্মক্ষেত্র আর ব্যক্তিজীবন- দুই জায়গায়ই কঠিন ঝামেলার কারণ হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।