দুপুরের রোদ ঢাকা শহরের এক ছোট্ট ফ্ল্যাটের বারান্দায় আটকে আছে। ভেতরে রুমে ঢুকতেই সামনে পড়ছে জমে থাকা জামাকাপড়ের স্তূপ, দেয়ালে ঝুলছে অতিরিক্ত ছবির ফ্রেম, আর কোথাও হাঁটার জায়গা নেই বলে মনটা যেন হাঁপিয়ে উঠছে। রুমানার এই দৃশ্যটা কি আপনারও পরিচিত? বাংলাদেশের শহরগুলোতে যেভাবে বাড়ছে জনসংখ্যার চাপ, সেভাবে ছোট হয়ে আসছে আমাদের বসবাসের জায়গা। বাংলাদেশ হাউজিং অ্যান্ড বিল্ডিং রিসার্চ ইনস্টিটিউট (HBRI)-এর সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদন (২০২৩) বলছে, ঢাকার গড় ফ্ল্যাটের আকার এখন মাত্র ৬৫০ বর্গফুটের কাছাকাছি! এত ছোট জায়গায় স্বস্তি আর সৌন্দর্য দুটোই ধরে রাখা কি সম্ভব? সহজ ঘর সাজানোর টিপস জানলে কিন্তু তা মোটেই কঠিন নয়। ভাবছেন, জটিল ডিজাইন, দামি ফার্নিচার ছাড়া ঘর সুন্দর হয়? হ্যাঁ, হয়! শুধু দরকার সঠিক প্ল্যানিং, একটু সৃজনশীলতা আর কিছু সহজ কৌশল। আসুন, জেনে নিই কীভাবে আপনার ছোট্ট আস্তানাটাকেও প্রাণবন্ত, সুন্দর আর ফাংশনাল করে তুলবেন সহজ ঘর সাজানোর টিপস অনুসরণ করে – বাজেটের কথা মাথায় রেখেই।
ছোট জায়গাকে প্রাণবন্ত করার সহজ কৌশল: ম্যাজিক লুকিয়ে আছে ডিটেইলসে! (H2)
ছোট ঘর মানেই অবহেলা বা অস্বস্তি – এই ধারণা ভুল প্রমাণ করার সময় এসেছে। সহজ ঘর সাজানোর টিপস-এর প্রথম ধাপই হলো স্পেসকে চিনে নেওয়া এবং তার সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করা। ঢাকার ইন্সটিটিউট অফ আর্কিটেক্টস বাংলাদেশ (IAB)-এর শিক্ষক ও অভিজ্ঞ ইন্টেরিয়র কনসালট্যান্ট আরিফুল হক বলছেন, “ছোট স্পেসে ইন্টেরিয়রের মূলমন্ত্র হলো ‘লেস ইজ মোর’। অপ্রয়োজনীয় জিনিস সরিয়ে ফেলা, মাল্টি-ফাংশনাল ফার্নিচার বেছে নেওয়া এবং দৃষ্টি ভুলিয়ে দেয়ার কৌশল (ভিজ্যুয়াল ট্রিকস) প্রয়োগ করলেই ঘরটাকে বড় ও স্বস্তিদায়ক মনে হবে।” চলুন, জেনে নিই কিছু প্রাকটিক্যাল টিপস:
অপ্রয়োজনীয় জিনিস বাদ দিন (Declutter): এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সহজ ঘর সাজানোর টিপস। জমে থাকা জিনিসই ছোট ঘরকে আরও ছোট ও অগোছালো করে তোলে। নিয়মিতভাবে জিনিসপত্র বাছাই করুন। যা এক বছরেও ব্যবহার করেননি, তা দান করুন বা সরিয়ে ফেলুন। ঢাকার একটি জনপ্রিয় ইন্টেরিয়র ফার্ম ‘স্পেস রিফাইন’-এর সমীক্ষা (২০২৪) বলছে, ৭৫% বাংলাদেশি শহুরে পরিবার তাদের ঘরে প্রয়োজনাতিরিক্ত জিনিস রাখে যা স্থান দখল করে!
- স্মার্ট স্টোরেজ সলিউশন: ফাঁকা জায়গা কাজে লাগান। বিছানার নিচে ড্রয়ার, ওটোম্যান বক্স, ওয়াল-মাউন্টেড শেলফ, কর্নার শেলফ ইউনিট – এগুলো অদৃশ্য স্টোরেজের কাজ করবে। মেঝেতে জিনিস না রেখে উঁচুতে রাখুন, তাতে ফ্লোর স্পেস ফাঁকা থাকবে।
- দরজার পিছনে র্যাক: বাথরুম বা বেডরুমের দরজার পিছনে ছোট হুক বা পকেট অর্গানাইজার লাগিয়ে ছোট জিনিসপত্র গুছিয়ে রাখুন।
মাল্টি-ফাংশনাল ফার্নিচার: এক টাকায় দুই কাজ! ছোট ঘরে এটি রীতিমতো বাঁচার উপায়।
- সোফা-কাম-বেড: দিনে বসার জায়গা, রাতে শোবার বিছানা। ঢাকার অনেক ফার্নিচার শোরুমেই এখন স্টাইলিশ ও আরামদায়ক সোফা-কাম-বেড পাওয়া যায়।
- এক্সটেন্ডেবল ডাইনিং টেবিল: একা বা দুজনের জন্য ছোট, অতিথি এলে বড় করা যায়।
- স্টোরেজ ওটোম্যান/প্যাড: বসার পাশাপাশি লিনেন, বই বা অন্যান্য জিনিস ভরে রাখা যায়।
- ফোল্ডিং বা ড্রপ-লিফ টেবিল: কাজ শেষে ভাঁজ করে রাখলে জায়গা বেঁচে যায়।
- ওয়াল-মাউন্টেড ডেস্ক: কাজের টেবিলের জন্য দারুণ সলিউশন, মেঝে জায়গা নেয় না।
- ভিজ্যুয়াল ট্রিকস: চোখকে ফাঁকি দিন!
- আয়না, আয়না দেয়ালে: আয়না ছোট ঘরকে বড় দেখানোর ক্লাসিক ও সবচেয়ে কার্যকরী উপায়। একটি বড় আয়না পুরো দেয়াল জুড়ে লাগালে বা ছোট ছোট আয়না গ্রুপ করে সাজালে স্পেস দ্বিগুণ মনে হবে। জানালার বিপরীত দিকে আয়না লাগালে আলোও বেশি প্রতিফলিত হবে।
- লম্বালম্বি ডিজাইন: কার্পেট, পর্দা বা ওয়ালপেপারে উল্লম্ব ডিজাইন (ভার্টিক্যাল স্ট্রাইপস) ব্যবহার করলে ছাদ উঁচু মনে হবে। মেঝেতে লম্বা রেখা (কার্পেটের পাইল ডিরেকশন) দীর্ঘায়িত ভাব দেয়।
- ক্লিয়ার ভিউ মেইনটেইন করুন: জানালার সামনে বড় বা ঘন ফার্নিচার রাখবেন না। প্রাকৃতিক আলো ও বাইরের ভিউ ঘরের গভীরতা বাড়ায়।
রঙের জাদুকরী শক্তি: মেজাজ ও মাপ বদলে দেয় মুহূর্তে! (H2)
রং শুধু দেয়াল রাঙায় না, রাঙায় আমাদের আবেগ, অনুভূতি আর ঘরের পুরো পরিবেশকে। সহজ ঘর সাজানোর টিপস-এ রংয়ের ভূমিকা অপরিসীম। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে রং বাছাইয়ের কিছু গুরুত্ত্বপূর্ণ দিক:
- হালকা ও নিউট্রাল রং: স্পেস বাড়ানোর মূল হাতিয়ার: সাদা, ক্রিম, হালকা বেজ, পেস্টেল গ্রিন, পেস্টেল ব্লু, লাইট গ্রে – এই রংগুলো আলোকে সর্বোচ্চ প্রতিফলিত করে, ঘরকে উজ্জ্বল, পরিষ্কার ও বড় দেখায়। এগুলো ছোট ঘরের জন্য আদর্শ। দেয়াল, সিলিং এবং বড় ফার্নিচারের জন্য হালকা রং বেছে নিন। বাংলাদেশের জনপ্রিয় পেইন্ট ব্র্যান্ডগুলোর কালার ট্রেন্ড গাইড (২০২৪) দেখে নিতে পারেন।
- একসেন্ট রং: চরিত্র যোগ করুন: পুরো ঘর হালকা রঙে রাঙানোর পর এক বা দুটি দেয়ালে (ফিচার ওয়াল) গাঢ় বা উজ্জ্বল রং (টিল, ডিপ ব্লু, এমারাল্ড গ্রিন, মাস্টার্ড ইয়েলো, টেরাকোটা) ব্যবহার করুন। কুশন, কার্পেট, ছোট ডেকোর আইটেম, পর্দায় এই একসেন্ট রংগুলো ফুটিয়ে তুলুন। এতে ঘরে ভিন্নমাত্রা আসবে, একঘেয়েমি দূর হবে।
- মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব: রংয়ের গভীর মনস্তাত্ত্বিক প্রভাব আছে। উদাহরণস্বরূপ:
- নীল: শান্তি, বিশ্রামের অনুভূতি আনে (বেডরুম, বাথরুমের জন্য ভালো)।
- হলুদ/কমলা: উষ্ণতা, আনন্দ ও শক্তি দেয় (ডাইনিং, লিভিং এরিয়ার জন্য)।
- সবুজ: প্রকৃতির ছোঁয়া, সতেজতা ও ভারসাম্য আনে (যেকোনো রুমে)।
- গোলাপি/ল্যাভেন্ডার: কোমলতা ও রোমান্টিক ভাব আনে (বেডরুমে)।
- রংয়ের ধারাবাহিকতা: ছোট স্পেসে একাধিক রুম থাকলে (যেমন লিভিং-ডাইনিং কম্বো) একটি রং স্কিম (হালকা নিউট্রাল বেস + একই একসেন্ট রং) ধারাবাহিকভাবে ব্যবহার করুন। তাতে ঘরগুলো আলাদা না দেখিয়ে একটি যুক্ত ও বড় স্পেসের মতো মনে হবে।
ফার্নিচার বাছাইয়ের সোনালী নিয়ম: আকার, আকৃতি ও কার্যকারিতা (H2)
ভুল ফার্নিচারই ছোট ঘরকে দমবন্ধ করে দিতে পারে। সহজ ঘর সাজানোর টিপস মেনে ফার্নিচার বেছে নিন:
- স্কেল ম্যাটার্স: ছোট ঘরে ছোট স্কেলের ফার্নিচার নির্বাচন করুন। বড় সোফা বা ভারী ক্যাবিনেট এড়িয়ে চলুন। লেগসহ (লেগ এক্সপোজড) ফার্নিচার বেছে নিন যেন মেঝে দেখা যায়, এতে হালকা ভাব আসে।
- অদৃশ্য সীমানা: দেখতে ‘হালকা’ ফার্নিচার বেছে নিন। গ্লাস টপ টেবিল, এক্রিলিক চেয়ার, উইকার বা রোটান ফার্নিচার – এগুলো ভিজ্যুয়ালি কম জায়গা দখল করে।
- ওপেন শেলভিং: বদ্ধ আলমারির চেয়ে ওপেন শেলফিং ভালো। এতে জিনিসপত্র সহজে পাওয়া যায়, দেখতে হালকা লাগে এবং ডেকোরেশন হিসেবেও কাজ করে। তবে গুছিয়ে রাখতে হবে নিয়মিত।
- ফার্নিচার প্লেসমেন্ট: দেয়াল ঘেঁষে ফার্নিচার রাখুন, মাঝখানে ফাঁকা জায়গা রাখুন চলাচলের জন্য। রুমের কর্নারগুলো কাজে লাগান। কোণাকুণি ভাবে ফার্নিচার রাখা এড়িয়ে চলুন (ছোট রুমে জায়গা বেশি নষ্ট হয়)।
আলোর কেরামতি: মাত্র কয়েকটি বাল্বে বদলে দিন পুরো পরিবেশ! (H3 – Lighting)
আলো ঘরের প্রাণ। সঠিক লাইটিং ছোট ঘরকেও প্রাণবন্ত করে তোলে। সহজ ঘর সাজানোর টিপস-এ আলোর গুরুত্ব অপরিসীম:
- প্রাকৃতিক আলো সর্বোচ্চ ব্যবহার: ভারী পর্দা সরিয়ে হালকা, হালকা রঙের বা সেমি-ট্রান্সপারেন্ট পর্দা ব্যবহার করুন। জানালার গ্রিল পরিষ্কার রাখুন। দেয়ালে হালকা রং আলো প্রতিফলিত করতে সাহায্য করে।
- লেয়ার্ড লাইটিং: শুধু সেন্ট্রাল সিলিং লাইট যথেষ্ট নয়। তিন স্তরের আলো ব্যবহার করুন:
- অ্যাম্বিয়েন্ট লাইটিং: ঘরের সাধারণ আলো (সিলিং লাইট, ট্র্যাক লাইট)।
- টাস্ক লাইটিং: নির্দিষ্ট কাজের জন্য আলো (ডেস্ক ল্যাম্প, রিডিং ল্যাম্প, কিচেন কাউন্টার লাইট)।
- একসেন্ট লাইটিং: ডেকোরেশন বা নির্দিষ্ট জিনিস হাইলাইট করতে (পিকচার লাইট, ওয়াল ওয়াশার, টেবিল ল্যাম্প, ফ্লোর ল্যাম্প)।
- ডিমার সুইচ: আলোর তীব্রতা নিয়ন্ত্রণের জন্য ডিমার সুইচ ব্যবহার করুন। এতে ঘরে ভিন্ন মেজাজ সৃষ্টি করা যায়।
- হালকা রঙের ল্যাম্পশেড: হালকা রঙের বা ট্রান্সলুসেন্ট ল্যাম্পশেড আলোকে ভালোভাবে ছড়াতে সাহায্য করে। গাঢ় রঙের শেড আলো শুষে নেয়।
- এলইডি স্ট্রিপ লাইট: ওয়াল শেলফের নিচে, আলমারির ভেতরে বা বিছানার নিচে এলইডি স্ট্রিপ লাইট লাগিয়ে আধুনিক ও ম্যাজিক্যাল লুক তৈরি করুন। এনার্জি সেভিংও বটে।
ব্যক্তিত্বের ছোঁয়া: সহজেই ডেকোরেশন! (H3 – Decor)
সহজ ঘর সাজানোর টিপস মানে এই নয় যে ঘর হবে নীরস। ব্যক্তিত্ব ফুটিয়ে তোলার জন্য কিছু সহজ ডেকোরেশন আইডিয়া:
- প্রকৃতিকে আমন্ত্রণ: ছোট্ট টবে হার্বস (পুদিনা, ধনে), স্নেক প্ল্যান্ট, পোথোস বা মানি প্ল্যান্ট রাখুন। গাছপালা ঘরে অক্সিজেন বাড়ায়, মন ভালো করে। ঢাকার উত্তরা বা নারায়ণগঞ্জের পটারি মার্কেট থেকে মাটির টব কিনতে পারেন। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (BARI) বাগান করার সহজ টিপস দেখুন।
- টেক্সচারের খেলা: নরম-শক্ত, মসৃণ-খসখসে টেক্সচারের সমন্বয় ঘরকে আকর্ষণীয় করে তোলে। মোটা সুতার কার্পেট, নিট কুশন কভার, ম্যাক্রামে ওয়াল হ্যাংিং, কাঠের টেবিল টপ, মেটাল ল্যাম্প – বিভিন্ন টেক্সচার মিশিয়ে দিন।
- কিছুটা নিজেকে যোগ করুন: ভ্রমণের স্মৃতি (শেল, পোস্টকার্ড), নিজের তোলা ছবির প্রিন্ট, প্রিয় বই, হস্তশিল্প (নকশিকাঁথা, শীতলপাটি, কাঠের কারুশিল্প) দিয়ে ঘর সাজান। এগুলোই ঘরকে আপনার ‘ঘর’ করে তোলে।
- ওয়াল আর্ট: এক বড় সুন্দর ফ্রেম বা ছোট ছোট ফ্রেমের গ্রুপিং (একই থিম, কালার বা স্টাইলের) দেয়ালে সাজান। ফ্রেমের মধ্যে ফাঁকা জায়গা রাখুন, বেশি ভিড় করবেন না। নিজের আঁকা ছবিও টাঙ্গাতে পারেন!
- ফোকাল পয়েন্ট: ঘরে একটি জায়গাকে বিশেষ করে সাজান (যেমন ফায়ারপ্লেস, সুন্দর জানালা, ফিচার ওয়াল বা একটি আর্ট পিস)। বাকি ডেকোরেশন যেন সেটাকে ছাপিয়ে না যায়।
বাজেটে বিলাস: সৃজনশীলতা দিয়েই সম্ভব! (H2)
ঘর সুন্দর করার জন্য অঢেল টাকা খরচের দরকার নেই। সহজ ঘর সাজানোর টিপস মানেই বাজেট ফ্রেন্ডলি সমাধান:
- DIY (Do It Yourself): নিজের হাতে তৈরি করুন:
- পুরনো কাঠের বাক্স বা টিনের ক্যান রং করে শেলফ বা পেন পট বানান।
- পুরনো কাপড় দিয়ে কুশন কভার বা প্যাচওয়ার্ক কুইল্ট বানান।
- কাঠের ক্লিপস দিয়ে ফটো ডিসপ্লে স্ট্রিং তৈরি করুন।
- বোতল, জার রং করে বা সুতো জড়িয়ে ভেসে রাখার জন্য ফুলদানি বানান।
- থ্রিফট স্টোর বা লোকাল মার্কেট ঘুরে দেখুন: ঢাকার নিউ মার্কেটের পুরনো দোকান, গুলিস্তানের ফুটপাতের দোকান বা স্থানীয় হস্তশিল্প মেলায় (যেমন বঙ্গবন্ধু জাতীয় হস্তশিল্প মেলা) অনন্য ও সস্তায় জিনিস পাওয়া যায়। পুরনো ফার্নিচার রিফার্বিশ করা যায়।
- প্ল্যান্ট সোয়াপ: বন্ধু-বান্ধব বা প্রতিবেশীদের সাথে গাছের চারা বা কাটিং বিনিময় করুন।
- পেইন্ট ট্রান্সফরমেশন: পুরনো ফার্নিচার বা দরজা-জানালা রং করে নতুন করে ফেলুন। এতে খরচ কম, পরিবর্তন বড়!
- রিয়্যারেঞ্জমেন্ট: কখনো কখনো শুধু ফার্নিচারের জায়গা বদল করলেই পুরো ঘরের লুক বদলে যায়, নতুনত্ব আসে। বিনামূল্যের এই সমাধানটা অবশ্যই ট্রাই করুন।
ঘর মানে শুধু চার দেয়াল নয়, ঘর মানে অনুভূতির আশ্রয়, স্বস্তির নীড়। এই ছোট্ট আর্টিকেলে দেওয়া সহজ ঘর সাজানোর টিপস গুলো মনে রাখুন – ডিক্লাটারিং, স্মার্ট স্টোরেজ, হালকা রং, মাল্টি-ফাংশনাল ফার্নিচার, সঠিক লাইটিং এবং ব্যক্তিগত ডেকোরেশনের মাধ্যমে আপনার ছোট্ট জায়গাটাকেই পরিণত করতে পারেন স্বর্গীয় এক কোণায়। বড় বাজেট বা জটিল ডিজাইনের দরকার নেই, দরকার শুধু একটু সচেতনতা, সৃজনশীলতা এবং এই সহজ কৌশলগুলো প্রয়োগের ইচ্ছা। তাহলে আর দেরি কেন? আজই শুরু করুন – একটা জায়গা গুছিয়ে ফেলুন, একটি অপ্রয়োজনীয় জিনিস সরিয়ে ফেলুন, একটি গাছ লাগান। দেখবেন, ধীরে ধীরে আপনার ঘর ফিরে পাবে তার হারানো হাসি, আর আপনি পাবেন প্রতিদিন ফিরে আসার জন্য অপেক্ষা করা এক প্রিয় ঠিকানা। আপনার ঘরটাকে ভালোবাসুন, একটু সময় দিন, এবং দেখুন কীভাবে সহজ সাজসজ্জার জাদুতে তা হয়ে ওঠে আপনার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা!
জেনে রাখুন (H2)
প্রঃ ছোট বেডরুম সাজানোর সবচেয়ে কার্যকরী টিপস কী?
উঃ ছোট বেডরুমের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো বিছানার নিচে স্টোরেজ ব্যবহার করা (অটোম্যান বেড বা আন্ডার-বেড ড্রয়ার), হালকা রং (বিশেষ করে সিলিং সাদা রাখা), ওয়াল-মাউন্টেড বেডসাইড টেবিল বা শেলফ ব্যবহার করা, এবং একটি বড় আয়না লাগানো। ভারী কার্পেট এড়িয়ে হালকা রাগ বা মেঝে পলিশ করে রাখাই ভালো। আলোর জন্য সিলিং লাইটের পাশাপাশি বেডসাইড ল্যাম্প বা ওয়াল স্কোনস ব্যবহার করুন।
প্রঃ সীমিত বাজেটে কিচেনকে কীভাবে আকর্ষণীয় করব?
উঃ পুরনো ক্যাবিনেটের দরজা নতুন হ্যান্ডেল লাগিয়ে বা এক্সটেরিওর পেইন্ট দিয়ে রিফ্রেশ করুন। ওপেন শেলভিং তৈরি করে রান্নার জিনিসপত্র সুন্দরভাবে সাজান। ব্যাকস্প্ল্যাশে স্টিক-অন টাইলস বা রং করে দিলে বড় পরিবর্তন আসে। একটি রঙিন বা প্যাটার্নযুক্ত কিচেন ম্যাট, কিছু সুন্দর জার বা ক্যানিস্টারে মসলা রাখা, এবং কিছু ছোট গাছ (হার্বস) রাখলে কিচেন প্রাণ পায়। লাইটিং উন্নত করুন (আন্ডার-ক্যাবিনেট লাইটিং জাদু করে)।
প্রঃ লিভিং রুমে জায়গা কম, কিন্তু অতিথি আসলে কোথায় বসাব?
উঃ মাল্টি-ফাংশনাল ফার্নিচার বেছে নিন। যেমন ফোল্ডিং চেয়ার বা স্টুল যা প্রয়োজন শেষে ভাঁজ করে রাখা যায়। ওটোম্যান বক্স (যার ভেতরে জিনিস রাখা যায়) বসার জায়গা বাড়াতে পারে। একটি ছোট সোফা-কাম-বেডও দারুণ সমাধান। জায়গা থাকলে কর্নারে একটি লাভ সিট বা বেঞ্চ বসাতে পারেন। মেঝেতে বড় কুশন বা ফ্লোর প্যাড ছড়িয়ে দিলেও বসার জায়গা বাড়ে।
প্রঃ আধুনিক ও মিনিমালিস্টিক লুক পেতে কী করব?
উঃ মিনিমালিজম মানে খালি ঘর নয়, বরং শুধু প্রয়োজনীয় ও অর্থপূর্ণ জিনিস রাখা। প্রচুর ডিক্লাটারিং করুন, শুধু যা ভালোবাসেন বা ব্যবহার করেন তাই রাখুন। নিউট্রাল কালার প্যালেট (সাদা, কালো, ধূসর, বেজ) বজায় রাখুন। ফার্নিচার বেছে নিন সহজ লাইনে, মসৃণ সারফেসের, লেগসহ (ভিজ্যুয়াল হালকাতা)। ওপেন স্পেস রাখুন, দেয়ালে খুব বেশি ডেকোরেশন নয়। স্টোরেজ লুকানো বা বিল্ট-ইন রাখার চেষ্টা করুন। প্রতিটি জিনিসের জায়গা নির্দিষ্ট করুন।
- প্রঃ ঘরে প্রাকৃতিক আলো কম, কীভাবে উজ্জ্বল করব?
উঃ দেয়াল ও সিলিং হালকা রং করুন (বিশেষ করে সাদা), যা আলো প্রতিফলিত করে। ভারী পর্দা সরিয়ে হালকা, সেমি-ট্রান্সপারেন্ট পর্দা বা ব্লাইন্ড ব্যবহার করুন। আয়না কৌশলী জায়গায় লাগান (যেমন জানালার বিপরীতে বা গাঢ় কর্নারে) যাতে আলো ছড়িয়ে পড়ে। সিলিং লাইটের পাশাপাশি বিভিন্ন স্তরের কৃত্রিম আলোর (ল্যাম্প, ওয়াল ওয়াশার, স্পটলাইট) ব্যবহার বাড়ান। গাঢ় রঙের ফার্নিচার বা কার্পেট এড়িয়ে চলুন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।