হোসেইন জামাল: সাংবাদিকতা কখনো পেশা ছিল না। আজও নয়। এটা একটা ‘প্যাশন’ বা তীব্র আবেগ বা মোহের জায়গা। মোহ বা আবেগ ছাড়া যারা সাংবাদিকতা করেন, তারা সাংবাদিক নন। বরং এই মাধ্যমের অবাঞ্ছিত লোক। এদের দ্বারা সাংবাদিকতা হয় না, যা হয় সেটা অন্যের গোলামী।
সাংবাদিক একজন স্বাধীনচেতা মানুষ, জ্ঞানানুরাগী। তিনি তার সৃষ্টিকে প্রতিনিয়ত উপভোগ করেন। যেমন, একজন মা সন্তান গর্ভে ধারণ করে অনেক কষ্ট করেন। ভূমিষ্ট হওয়ার পর যেমন আনন্দ পান, একজন সাংবাদিকও তার সংবাদ প্রকাশের পর তেমনি আনন্দ পান।
সন্তান জন্ম দেওয়ার জন্য যেমন মায়ের মূল্য নির্ধারণ সম্ভব নয়, তেমনি সাংবাদিকের সংবাদের জন্য বেতনও নির্ধারণ সম্ভব নয়। তাঁরা যা পান, তা হল সম্মানী। সেটা দশ টাকা হতে পারে, আবার ১০ হাজারও। যারা শুধু সম্মানী দিয়ে সংসার চালাতে চান, তাদের জন্য সাংবাদিকতা আসেনি। তাঁরা অন্য পেশা খুঁজতে পারেন। যেমনটা আমি করেছি।
সাংবাদিকতায় বেতন নির্ধারণ মানে বঞ্চনার ইতিহাস। আপনার বেতন বতসোয়ানার অপুষ্টির শিকার শিশুর মতো বাড়বে। আবার যে কোন সময় মারাও পড়তে পারে। তাই বেতনের চিন্তা করলে অন্য কোন পেশায় চলে যাওয়াই ভাল। তাতে অন্তত উন্নয়নশীল দেশের শিশুর মতো খেয়ে পরে বাঁচা যাবে। পাশাপাশি শিক্ষা ও চিকিৎসার সুযোগটাও থাকবে।
আবেগ আর তীব্র মোহ ছাড়া আপনার কাঙ্ক্ষিত লেখাটা আপনি লিখতে পারবেন না। আপনি যা পারবেন, কোন প্রতিষ্ঠানের পাঠানো প্রেস রিলিজ এদিক ওদিক করে খটোমটো কিছু একটা করতে। আপনার হাত থেকে নিস্তার পেয়ে এটা সহসম্পাদকের হাতে গিয়ে প্রাণ ফিরে পাবে। পরের দিন সকালে ছাপা হলে এটা দেখিয়ে বাহাদুরি ফলাবেন, চাঁদাবাজি করবেন।
এমন কতিপয় মানুষের কারণে সাংবাদিকতার আজকের এমন করুণ পরিণতি। মানুষ যথাযথ সম্মান দেয় না। দুঃখের বিষয়, এমন কিছু সাংবাদিক আবার নেতা বনে যান। যাদের মধ্যে তাদের কাজের প্রতি অনুরাগ নেই। তারা মানুষের মধ্যে সাংবাদিকতার প্রতি বিরাগী পরিবেশ তৈরি করেন প্রতিনিয়ত। যেটা শিকার হচ্ছেন সত্যিকারের সংবাদকর্মীরা।
কারণ যারা আসলেই সংবাদকর্মী, তাদের জন্য সাংবাদিক ইউনিয়ন করার সময় কোথায়? প্রতিদিন সোর্সের সঙ্গে যোগাযোগ, বিস্তর পড়াশোনা, প্রতিটি ঘটনার আপডেট জানার মধ্যেই তাদের ২৪ ঘন্টা শেষ। যাদের কাজ নেই, তারাই সারাদিন খই বাজেন। সন্ধ্যায় অফিসে গিয়ে জুনিয়র একজনকে দিয়ে প্রেস রিলিজটা করিয়ে নেয়। এমন কতিপয় নেতার কাছে আপনার কি প্রত্যাশা থাকতে পারে। যদি পেশা বলেন, তবে তার নিরাপত্তাও বা কতটুকু।
যার কারণে সাংবাদিকদের হাতে বিনা কারণেই হাতকড়া পড়ছে। আপনাকে আশ্চর্য হওয়ার সুযোগ না দিয়েই আরেকজন ভিকটিম সামনে চলে আসছে। এভাবেই চলবে আগামীর সাংবাদিকতা। যদি পরিবর্তন চান, তাহলে নিজেকে ধনে-জ্ঞানে আরো উন্নত করুন। তবেই নিস্তার পাবেন।
এখন প্রশ্ন আসতে পারে, জ্ঞানের জন্য না হয় পড়ালেখা করলাম। ধনে উন্নত হবো কিভাবে? একটু খেয়াল করে দেখুন, আপনার পাশে বসে যে সহকর্মী নিশ্চিন্তে কাজ করছেন, প্রায়শই যার লিড নিউজ বের হয়, তার স্ত্রী একটা ভালো জব করছেন। তিনি সত্যিকারে সাংবাদিকতা করছেন, আর তাঁর স্ত্রী সংসার সামলানোর কাজটা করছেন।
আর এজন্য তিনি আবেগ ও মোহের সন্নিবেশ ঘটিয়ে নিজের উৎকর্ষতা দেখাচ্ছেন। আর তিনিই একজন প্রকৃত সংবাদকর্মী। কারো পা চাটে না, দালালী করেন না। এমন কর্মীদের সন্নিবেশ যত বাড়বে, সাংবাদিকতাও তার হারানো গৌরব ততই ফিরে পাবে!
হোসেইন জামাল: সাবেক গণমাধ্যমকর্মী
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।