জসিম উদ্দিন খান: বঙ্গবন্ধু যখন কোন বড় আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নিতেন তখন সাংবাদিক তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়ার সাথে পরামর্শ করতেন এবং তার মতামতকে অগ্রাধিকার দিতেন। মুক্তিযুদ্ধে সাংবাদিকদের অবদান ছিল অনস্বীকার্য, অনেক সাংবাদিক মুক্তিযুদ্বে সরাসরি অংশগ্রহন করেছে এবং অনেক মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিকদের ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে হত্যা করা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভের মানুষদের সচিবালয়ের পাশেই বসার জন্য প্রেসক্লাব প্রতিষ্ঠায় একটি চৌকষ জমি দান করেছেন । সাংবাদিকদের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সহ প্রায় সকল সরকারই আবাসন ব্যবস্থার জন্য জমি দিয়েছেন। এই যখন বাংলাদেশে সাংবাদিকদের মর্যাদা তখন কয়েকজন সাংবাদিক নেতা তাদের সহকর্মী সাংবাদিকদের দিনমজুরের সমান কাতারে নামিয়ে আনার সব ব্যবস্থা একেবারে পাকা করে এসেছেন।
জাতীয় প্রেসক্লাবের সিনিয়র সহসভাপতি ওমর ফারুক ভাই তার ফেইসবুক ওয়ালে এক স্টাটাসে বলেছেন প্রেসক্লাবে ন্যায্যমুল্যে টিসিবি পণ্য বিক্রির ব্যবস্থা হয়েছে। গতকাল দুপুরে বিএফইউজের সাবেক সভাপতি ইকবাল সোবহান চৌধুরী সহ সংগঠনের সাবেক চার নেতা (মনজুরুল আহসান বুলবুল, অবদুল জলিল ভুইয়া ও ওমর ফারুক) তথ্যমন্ত্রীর সাথে দেখা করে এই প্রস্তাব দেন এবং মাননীয় মন্ত্রী তা মেনে নেন। এই সংবাদে অনেক সাংবাদিক সাধুবাদ জানালেও আমি একজন সংবাদকর্মী হিসেবে এই উদ্যোগকে ধিক্কার জানাই।
প্রথমতঃ টিসিবির ন্যায্যমুল্যের পণ্য কাদের জন্য? এটা দেশের নিম্নআয়ের মানুষদের জন্য বরাদ্দ। তাহলে প্রকারন্তে কি সাংবাদিক নেতারা স্বীকার করে নিলেন যে সাংবাদিকরা নিম্নআয়ের দিনমজুর?। দ্বিতীয়তঃ ভারত, শ্রীলঙ্কাসহ উন্নত দেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে ট্যলেন্টেড ছাত্ররা সাংবাদিকতায় আসে এবং তাদের বেতন/ভাতা অন্য যে কোনও পেশার মানুষের চেয়ে অনেক বেশি।
তৃতীয়তঃ দেশের ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়নের চিত্র কিন্তুু ভিন্ন। কেবল ঢাকায় ১০০ এর উপরে দৈনিক পত্রিকা অষ্টম ওয়েজবোর্ড বাস্তবায়ন করেছে বলে সরকারের কাছে দাবী ও প্রমান করে সরকার থেকে মালিকরা নানান সুবিধা আদায় করে নিচ্ছেন। সে-সকল সংবাদপত্রে সাংবাদিকরা যদি ওয়েজবোর্ড ঘোষিত বেতন ভাতাদি পান তাহলে কিন্তু কোনভাবেই সাংবাদিকদের টিসিবির পন্য কেনার মত অবস্থা হয় না। বাংলাদেশে মাসে ২০ কোটি টাকার উপরে সরকারি বিজ্ঞাপন বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও সংস্থা থেকে দেয়া হয় যেগুলো এসকল তথাকথিত সংবাদপত্র পেয়ে থাকে। আজ যদি আপনারা অষ্টম ওয়েজবোর্ড সত্যিকার অর্থে বাস্তবায়নের জন্য দুটি মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করেন তাহলে এই সাংবাদিক নেতার পত্রিকাসহ অনেক পত্রিকাই আগামি এক সপ্তাহের মধ্যে বন্ধ করতে বাধ্য হবেন মিথ্যা ঘোষণা এবং খরচ বৃদ্ধির কারণে।
আপনার যদি সরকার ঘোষিত নিয়মনীতির মধ্যে থেকে সংবাদপত্র পরিচালনা না করতে পারেন তাহলে আপনাদেরকে কে সংবাদপত্র চালাতে বলেছে। কেইবা আপনাকে এই পেশায় আসতে বলেছে। সরকার কি বলেছে যে আপনি পত্রিকা খুলে বসে তথা-কথিত সাংবাদিক বানানোর কারখানা বানান যাদের আপনি বেতন দিতে পারবেন না এবং যারা বিভিন্ন জায়গায় সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে সাংবাদিক সমাজকে ছোট করবে।
আপনি জাতিব বিবেক অথচ আপনার সংবাদপত্র চলতে থাকবে মিথ্যা তথ্যের উপর ভিত্তি করে। এরকম স্ববিরোধী নেতৃত্বের ফলে সাংবাদিক সমাজের এই অধোপতন। আজ সময় এসেছে কারা তাদের নামের সাথে সাংবাদিক উপাধি ব্যবহার করতে পারবে তা নির্ধারণ করার। সময় এসেছে সাংবাদিকতায় প্রবেশের মিনিমাম রিকোয়ারমেন্ট নির্ধারণ করার। সময় এসেছে প্রেস কাউন্সিল ও পিআইবি’র মাধ্যমে বার কাউন্সিলের মতো একটি সার্টিফিকেশনের ব্যবস্থা চালু করার যে কারা সাংবাদিকতা করবে। এই দু-একটি ব্যবস্থা নিলেই সাংবাদিকদের জন্য টিসিবি পণ্য কেনা বা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে প্রণোদনা খুঁজতে হবে না। দেশে যদি একগাদা পত্রিকা না বের হয় তাহলে এ জাতির কি সমস্যা? আপনারা এত এত সংবাদপত্র প্রকাশ করে বিগত কয়েক বছরে দেশের জন্য কি উপকার করেছেন যে আপনাদের জন্য জাতি আজ অকাতরে বিলিযে দিবে। আগামীকাল থেকে আপনার সংবাদপত্র এবং আপনার সংবাদিকতা বন্ধ থাকলে জাতির কি সমস্যা একবার কি একটু ভেবে দেখবেন?
লেখক: গণমাধ্যমকর্মী
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।