জুমবাংলা ডেস্ক: বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড় মোখা বাংলাদেশের উপকূলের আরও কাছাকাছি এসেছে। তাই কক্সবাজার সমুদ্রবন্দরকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে চট্টগ্রাম ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৮ নম্বর এবং মোংলা বন্দরকে ৪ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
১৩ মে, শনিবার সচিবালয়ে এক জরুরি সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঘূর্ণিঝড় মোখা ৮ কিলোমিটার গতিতে উপকূলের দিকে এগোচ্ছে। বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের উপকূলীয় অঞ্চলে ৮-১২ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।
এদিকে শনিবার সকালে ১১টায় ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও আমেরিকার পূর্বাভাস মডেলের বরাতে কানাডার সাসকাচুয়ান বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া ও জলবায়ু বিষয়ক পিএইচডি গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখা ১৫ দশমিক ৭ ডিগ্রী উত্তর অক্ষাংশ, ৮৯ দশমিক ৪ ডিগ্রীতে অবস্থান করছে। ঘূর্ণিঝড়টির বাতাসের গড় গতিবেগ ঘণ্টায় ২১২ কিলোমিটার, যা দমকা হওয়ার গতিবেগে ঘণ্টায় ২৫৯ কিলোমিটার বৃদ্ধি পেতে পারে।
এছাড়া ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের চারপাশে সমুদ্রে ৪৯ ফুট উচ্চতার ঢেউ সৃষ্টি হচ্ছে। এটি ঘণ্টায় ১১ কিলোমিটার গতিবেগে সামনের দিকে এগোচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় মোখা বাংলাদেশের স্থলভাগে প্রথম যে স্থানটিতে আঘাত করতে পারে তা হলো সেন্টমার্টিন দ্বীপ।
এর আগে যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনী কর্তৃক পরিচালিত জয়েন্ট টাইফুন ওয়ার্নিং সেন্টারের আবহাওয়া পূর্বাভাসের বরাতে আবহাওয়া গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ বলেছেন, ঘূর্ণিঝড় মোখা সুপার সাইক্লোনে পরিণত হতে পারে। এ সময় ঘূর্ণিঝড়ের বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় ২২১ কিলোমিটার এর বেশি থাকতে পারে।
যদিও এর আগে বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান জানিয়েছিলেন, মোখা অতি প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে (ভেরি সিভিয়ার সাইক্লোন) রূপ নিতে পারে। তবে এর পরের স্টেজে অর্থ্যাৎ সুপার সাইক্লোনে পরিণত হওয়ার আশঙ্কা নেই।
মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখা কক্সবাজার ও মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের ওপর দিয়ে আঘাত করলেও বাংলাদেশের সকল উপকূলীয় জেলায় ব্যাপক জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।
আবহাওয়া গবেষক মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোখার অগ্রবর্তী অংশ সেন্টমার্টিন দ্বীপ অতিক্রম শুরু করার সম্ভাবনা শনিবার দিবাগত রাত ৩টার পর থেকে। ঘূর্ণিঝড়ের কেন্দ্র সেন্টমার্টিন দ্বীপ ও কক্সবাজার জেলা অতিক্রম করার সম্ভাবনা বেশি বেশি রোববার সকাল ৭টা থেকে দুপুর ৩টার মধ্যে। দ্বীপের উপর ঘূর্ণিঝড়টির প্রভাব পুরোপুরি কেটে যেতে রোববার মধ্যরাত পর্যন্ত সময় লেগে যেতে পারে।
তিনি আরও বলেন, কক্সবাজার উপকূলে ১৫ থেকে ২০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসের প্রবল সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। নোয়াখালী ও চট্টগ্রামের উপকূলীয় এলাকাগুলোতে ১০ থেকে ১২ ফুট, বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোতে ৮ থেকে ১২ ফুট ও খুলনা বিভাগের জেলাগুলোতে ৭ থেকে ১০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাস হতে পারে।
এছাড়া এই ঘূর্ণিঝড়টি রোহিঙ্গাদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ জানিয়ে মোস্তফা কামাল পলাশ বলেন, ঘূর্ণিঝড়টি কক্সবাজারের ওপর দিয়ে অতিক্রম করলে টেকনাফে অবস্থিত রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরগুলোর ব্যাপক ক্ষতি হতে পারে। রোহিঙ্গাদের জন্য বৃষ্টি, বন্যা থেকে শুরু করে পাহাড় ধসের প্রবল ঝুঁকি রয়েছে। ঘূর্ণিঝড়টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ঘরগুলো উড়িয়ে নিয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা শতভাগ।
তলিয়ে যেতে পারে সেন্টমার্টিন! গুঁড়িয়ে যেতে পারে অনেক স্থাপনা
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।