শরীয়তপুর প্রতিনিধি: পিকেএসএফ এর অর্থায়নে ও এসডিএস বাস্তবায়নে PACE প্রকল্পের আওতায় শরীয়তপুর জাজিরা উপজেলার চর খোরাতলা গ্রামে গড়ে উঠেছে ইকোলজিক্যাল ফার্মিং পদ্ধতিতে উৎপাদিত বিষমুক্ত সবজি সংগ্রহ ও বিক্রয় কেন্দ্র। এই কেন্দ্রের মাধ্যমে প্রতিদিন গড়ে ২০-৩০ মন সবজি কেনা-বেচা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রকল্পের ভ্যালু চেইন ফ্যাসিলিটেটর শরিফুল আলম মনি।
তিনি জানান, এই প্রকল্পের আওতায় ১৩৫ জন কৃষকের মধ্যে ইকোলজিক্যাল ফার্মিং পদ্ধতিতে সবজি চাষের প্রদর্শনী দেয়া হয়। তাদের প্রদর্শনী ক্ষেত দেখে অনেকেই আগ্রহী হয়ে নিজ উদ্যোগে এই পদ্ধতিতে সবজি চাষ শুরু করেন। বর্তমানে স্থানীয়ভাবে এই পদ্ধতি প্রায় ১৫০০ একর জমিতে বিভিন্ন ধরনের সবজি চাষাবাদ হচ্ছে। কৃষকদের এসব বিষমুক্ত সবজি ক্রয়-বিক্রয় সহজলভ্য করতে সবজি সংগ্রহ, গ্রেডিং, প্রসেসিং ও বিক্রয় কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়। বাজারে বিষমুক্ত সবজির ব্যাপক চাহিদা থাকায় প্রতিদিন বিভিন্ন স্থান থেকে সবজি খুচরা বিক্রেতারা এখানে সবজি ক্রয় করতে আসেন।
বিষমুক্ত সবজি চাষী চর খোরাতলার আলমগীর ব্যাপারী জানান, আমরা মূলত সার বিষ দিয়েই আগে সবজি চাষ করতাম। কিন্তু এসডিএস’র ভাইয়েরা এসে আমাদের বিষমুক্ত সবজি চাষের উপর প্রশিক্ষণ দেন এবং তারা সার-কীটনাশক ব্যবহার করে উৎপাদিত সবজির ফলে পরিবেশ ও শরীরের কি ক্ষতি হয় সেটা বলেন। এরপর থেকে আমরা বিষমুক্ত সবজি চাষাবাদ শুরু করি। এতে আমাদের যেমন খরচ কম হচ্ছে তেমনি একই জমিতে একই সাথে একাধিক ফসল চাষ করতে পেরে বেশ লাভবান হতে পারছি। তাছাড়া আগে সবজি বিক্রির জন্য আমাদের বাজারে নিয়ে যেতে হলেও এখন তা করতে হচ্ছে না। আমরা শুধু ক্ষেত থেকে সবজি তুলে খোরাতলা সবজি বিক্রয়কেন্দ্রে নিয়ে গেলে সেখান থেকে বিভিন্ন এলাকার পাইকাররা এসে সবজি কিনে নিয়ে যান। এতে সবজি বিক্রি নিয়ে আমাদের আর টেনশন করতে হয়না।
শরীয়তপুর সদর উপজেলার খুচরা সবজি বিক্রেতা মোঃ সোহাগ হোসেন বলেন, এসডিএস’র ভাইদের মাধ্যমে খোরাতলা সবজি বিক্রয় কেন্দ্র থেকে আমরা পাইকারী দরে বিভিন্ন কৃষকের কাছে সবজি কিনে নিয়ে আসি এবং সেগুলো স্থানীয় বাজারে বিক্রি করি। বিষমুক্ত হওয়ায় বাজারে এসব সবজির ব্যাপক চাহিদা রয়েছে এবং দাম একটু ভালো পাওয়া যায়। আগে আমরা বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ঘুরে সবজি কিনে এনে সেগুলো বাজারে বিক্রি করতাম কিন্তু এখন সেটা করা লাগে না। এতে আমাদের যেমন সময় বাচে তেমনি কষ্ট কম হচ্ছে। এজন্য আমি এসডিএস কে ধন্যবাদ জানাই।
এসডিএস’র পরিচালক (এমএফ) ও প্রকল্পের ফোকাল পারসন বিএম কামরুল হাসান জানান, শুরু থেকে আমাদের লক্ষ্য ছিলো এই এলাকার কৃষকদের মধ্যে বিষমুক্ত নিরাপদ সবজি চাষ ছড়িয়ে দেয়া। সেই লক্ষ্যে ২০১৭ ও ২০১৯ সালে PACE প্রকল্পের মাধ্যমে নিরাপদ এবং বিষমুক্ত সবজি চাষাবাদের উপর প্রশিক্ষণ ও কারিগরি সহায়তা দেয়া শুরু করি। ধীরে ধীরে চাষী ভাইয়েরা নিরাপদ সবজি চাষের গুরত্ব বুঝতে পারে এবং বিষমুক্ত সবজি চাষাবাদে আগ্রহী হয়ে উঠে। পরবর্তীতে কৃষকদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে সবজি বিক্রয় কেন্দ্র গড়ে তোলা হয়। যার মাধ্যমে সবজি ক্রয়-বিক্রয় আরও সহজতর হয়ে ওঠে এবং কৃষকেরাও কোন প্রকার ঝামেলা ছাড়াই সবজি বিক্রির সুযোগ পাচ্ছেন।
তিনি আরও বলেন, সবজির মান ঠিক রাখার জন্য একটি নির্দিষ্ট এলাকাকে জিও ফেন্সিং এর আওতায় আনা হয়। ফলে ক্ষেতে কেউ কোন ধরনের সার বা বিষ ব্যবহার করছেন কি’না তা সিসি ক্যামেরা এবং এআই এর মাধ্যমে ঘরে বসে জানা যাচ্ছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।