জুমবাংলা ডেস্ক: নওগাঁর ধামইরহাটে বাঁশ দিয়ে দৃষ্টিনন্দন পণ্যসামগ্রী তৈরি করে এলাকায় রীতিমতো সাড়া ফেলেছেন তরুণ উদ্যোক্তা হিরণ আহমেদ। হোটেল, রিসোর্ট, বিভিন্ন বাসাবাড়ি থেকে শুরু করে ঘর সাজাতে শৌখিনপ্রেমীদের মধ্যে হিরণের হস্তশিল্পের কদর রয়েছে। তার এই উদ্যোগ অনেক উদ্যোক্তাকে অনুপ্রেরণা জোগায়। তা ছাড়া বাজারে অনেকটাই দুষ্প্রাপ্য ও চড়া দামে বিক্রি হয় এসব পণ্যসামগ্রী। এ কারণে এ শিল্প থেকে স্বপ্ন পূরণের প্রহর গুনছেন হিরণ আহমেদ।
উপজেলা সদর থেকে প্রায় ৮ কিলোমিটার পশ্চিমে আলমপুর ইউনিয়নের রাঙ্গামাটি বাজার এলাকায় গিয়ে দেখা যায় ছোট একটি টিনশেডের ঘর। এই ঘরেই হিরণ আহমেদ গড়ে তুলেছেন বাঁশবিলাস নামে একটি হস্তশিল্প কারখানা। সেখানে পাঁচজন শ্রমিক শোপিস তৈরির কাজে ব্যস্ত। এ সময় দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা ছুটে আসছেন হিরণের বাঁশবিলাস দেখতে। বাদ যায়নি স্থানীয় দর্শনার্থীরাও।
হিরণের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তিনি বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে এ পর্যন্ত শতাধিক ধরনের পণ্য তৈরি করেছেন। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলায় বাঁশ দিয়ে ইন্টেরিয়র, এক্সটেরিয়র ডেকোরেশন, রেস্টুরেন্ট, অফিস, রিসোর্ট, পার্কসহ বিভিন্ন স্থাপনা তৈরিতে নান্দনিক ডেকোরেশন করেছেন। এগুলো তৈরি করতে প্রথমে বাঁশ কেটে তিন ধাপে প্রক্রিয়াকরণের জন্য রাসায়নিক উপকরণ দিতে হয়। তিন দিন তা ভিজিয়ে রাখতে হয়। এর আয়ুকাল বাড়ানোর জন্য ৬০ শতাংশ রোদে শুকানো হয়। এ কারণে এসব পণ্য ঘুণপোকা থেকে শতভাগ ভালো থাকে।
স্থানীয় ও দর্শনার্থীরা জানান, দৃঢ়সংকল্প আর ইচ্ছাশক্তির মধ্য দিয়ে প্রতিভাকে যে বিকশিত করেছেন হিরণ আহমেদ। প্রাতিষ্ঠানিক কোনো প্রশিক্ষণ ছাড়াই গড়ে তুলেছেন বাঁশবিলাস নামের একটি হস্তশিল্প। এই শিল্পে প্রকৃতিবান্ধব সোফা থেকে শুরু করে শৈল্পিক কারুকার্যে গড়ে তুলেছেন বাঁশের তৈরি নানান রঙের দৃষ্টিনন্দন পণ্যসামগ্রী, যা শিক্ষিত বেকার তরুণদের অনুপ্রাণিত করে। এ শিল্পকে বাঁচিয়ে রাখতে সরকারের পক্ষ থেকে আধুনিক, বাস্তবসম্মত প্রশিক্ষণ ও প্রণোদনা দেওয়া প্রয়োজন।
হিরণের হাতের কারুকার্যে বাঁশের তৈরি পণ্যগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য পানির বোতল, মগ, গন্ডাস, জগ, ট্রে, ফুলদানি, কলমদানি, বিভিন্ন শোপিস, ল্যাম্প, মোবাইল স্ট্যান্ড, বাঁশের তৈরি খাট, সোফা, বাঁশের তৈরি ড্রেসিং টেবিল, চেয়ার-টেবিলসহ আরো অনেক কিছু। ফার্নিচার ছাড়া অন্যান্য পণ্যগুলোর ১০০ টাকা থেকে শুরু করে ৩ হাজার টাকা পর্যন্ত বিক্রি করেন হিরণ। আর ফার্নিচার ডিজাইন অনুসারে দাম নির্ধারণ করা হয়।
হিরণ বলেন, ‘আশপাশে সুন্দর কিছু চোখে পড়লে তা সংরক্ষণ করে পরে মনের মাধুরী দিয়ে অনুরূপ একটা কিছু তৈরি করার চেষ্টা করতাম। এসব তৈরিতে বন্ধুসহ স্থানীয়দের কাছ থেকে আশানুরূপ সাড়া ও অনুপ্রেরণা পেতাম। সেই অনুপ্রেরণা থেকে ২০০৮ সালে ছোট পরিসরে একটি ঘর ভাড়া নিয়ে স্টুডিও গড়ে তুলি। এর কয়েক বছর পর একটি কম্পিউটার কিনে শুরু করি ডিজিটাল ফটোগ্রাফির কাজ।’
হিরণ আরো বলেন, ‘একদিন রাতে স্টুডিওর নিরাপত্তার কথা ভেবে এর চারপাশে রেলিং দিয়ে ঘিরে দেওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করি। রেলিংয়ের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে ব্যতিক্রমী কিছু করার ইচ্ছা থেকে বাঁশ ব্যবহার করা হয়। এরপর ঘুণপোকা থেকে বাঁশের স্থায়িত্ব বৃদ্ধিতে করণীয় সম্পর্কে বিভিন্ন দেশের ইউটিউব চ্যানেল দেখে বাঁশ শিল্পের ওপর ভালোবাসা জন্মে। বাঁশ দিয়ে তৈরি হস্তশিল্পের ব্যবসার সফলতা শুরু হয় এখান থেকেই।’
হিরণ আহমেদের মতো সম্ভাবনাময় উদ্যোক্তাদের আধুনিক প্রযুক্তির আওতায় এনে পুনর্বাসনের মাধ্যমে প্রণোদনা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হলে বেকার যুবকদের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি প্রযুক্তি খাতে স্বনির্ভর হবে দেশ। এমনটা বলছেন সুশীল সমাজের মানুষ।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, ‘তরুণ উদ্যোক্তাদের মাধ্যমে এ শিল্পকে সমৃদ্ধ করতে প্রয়োজনীয় সবকিছু করা হবে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।