আইনস্টাইনের সঙ্গে প্রখ্যাত জার্মান গণিতবিদ ডেভিড হিলবার্টের দেখা হওয়ার পর অনেক কিছু বদলে যায়। সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্বের চিন্তাটা তাঁর মাথায় ঢুকল কীভাবে?
এখানেই আইনস্টাইনের কৃতিত্ব। সবাই ধরে নিয়েছিলেন, মহাকর্ষ বলের বিষয়ে নিউটনই শেষ কথা বলে গেছেন। কিন্তু আইনস্টাইন বললেন সেখানে আরও কিছু বিষয় রয়ে গেছে। তিনি শুরু করেন নিউটনের মহাকর্ষ বল থেকে। তাঁর চিন্তাভাবনা ও গবেষণার শুরু ১৯০৭ সালে। এর আড়াই শ বছর আগে নিউটন যেখানে শেষ করেন, আইনস্টাইনের শুরু সেখান থেকে।
নিউটন এই সিদ্ধান্তে এসেছিলেন যে মহাবিশ্বের প্রতিটি বস্তু পরস্পরকে আকর্ষণ করে। এর মূল কারণ মহাকর্ষ বল। এই আকর্ষণ বলের জন্যই পৃথিবী ঘুরছে সূর্যের চারপাশে, চাঁদ ঘুরছে পৃথিবীর চারপাশে, অন্য গ্রহ-নক্ষত্রও চলছে নিজ নিজ কক্ষপথে।
কিন্তু মহাকর্ষ বলের এমন কী জাদু আছে, যা দিয়ে সে মহাজাগতিক বস্তুগুলোকে এভাবে ঘোরাচ্ছে? আসুন প্রথমে সেটা বোঝার চেষ্টা করি।
বলা হয়, গাছ থেকে মাটিতে আপেল পড়তে দেখে বিজ্ঞানী নিউটনের মনে প্রশ্ন দেখা দেয় এবং তিনি মাধ্যাকর্ষণ বলের (মহাকর্ষ বল) সূত্র আবিষ্কার করেন। আসলে ব্যাপারটি সে রকম নয়। আজ থেকে প্রায় সাড়ে তিন শ বছর আগে ১৬৬৫-১৬৬৬ সালে ইউরোপে মারাত্মক প্লেগ রোগ ছড়িয়ে পড়লে আইজ্যাক নিউটন ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পদ ছেড়ে নিজের বাড়ি লিংকনশায়ারে চলে আসেন।
সেখানে অলস মুহূর্ত কাটানোর সময় তিনি উপলব্ধি করেন যে মহাবিশ্বের বিভিন্ন বস্তু একে অপরকে আকর্ষণ করে। এটাই মহাকর্ষ (পৃথিবীর ক্ষেত্রে মাধ্যাকর্ষণ) বল, যা নির্ভর করে বস্তুগুলোর ভর কত এবং একে অপরের থেকে কত দূরে তার ওপর।
নিউটনের সূত্র অনুযায়ী আপনি যদি কোনোভাবে সূর্যকে নড়িয়ে দিতে পারেন, তাহলে মহাকর্ষ বলের প্রভাবে পৃথিবীও নড়ে উঠবে। কারণ, এরা একে অপরের সঙ্গে মহাকর্ষ বলের বন্ধনে আবদ্ধ। নিউটনের সূত্র অনুযায়ী মহাকর্ষ বল মহাশূন্যে অবস্থিত বস্তুগুলোর ওপর তাত্ক্ষণিকভাবে ক্রিয়া করে।
আইনস্টাইন এ নিয়ে চিন্তাভাবনা শুরু করেন। পরে তিনি সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্বে দেখান কীভাবে এই মহাকর্ষ বল পরস্পরকে আকর্ষণ করে। এর আগেই ১৯০৫ সালে বিশেষ আপেক্ষিক তত্ত্বে তিনি দেখান, কোনো কিছুর গতিই আলোর গতির চেয়ে বেশি হতে পারে না।
নিউটনের মহাকর্ষ বলের আবিষ্কার ছিল যুগান্তকারী। এর আগে সবাই দেখেছে মহাবিশ্বের গ্রহ-নক্ষত্র ও অন্যান্য বস্তু একে অপরের চারদিকে ঘুরছে। একে অপরকে আকর্ষণের কারণেই যে ঘুরছে, সেটা সবাই বুঝত। কিন্তু কীভাবে এই আকর্ষণশক্তি কাজ করে, সেটা জানত না।
নিউটনই প্রথম এর বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা দেন এবং গাণিতিক সূত্র আবিষ্কার করেন। তিনি দেখান, m1 ও m2 ভরের দুটি বস্তু d দূরত্বে থাকলে তাদের মধ্যে ক্রিয়াশীল মহাকর্ষ বল F = G (m1 × m2)/ d2, যেখানে G = মহাকর্ষীয় ধ্রুবক (ইউনিভার্সাল গ্র্যাভিটেশনাল কনস্ট্যান্ট)। অর্থাৎ, মহাকর্ষ বল দুটি বস্তুর ভরের গুণফলের সমানুপাতিক ও দূরত্বের বর্গের ব্যস্তানুপাতিক।
আইনস্টাইন দেখলেন, নিউটনের তত্ত্ব সৌরজগতের ক্ষেত্রে মোটামুটি সঠিক। কিন্তু দুটি প্রশ্ন থেকে যায়। প্রথমত, সূর্যের তো কোনো হাত-পা নেই যে পৃথিবীকে টেনে কাছে ধরে রাখবে। তার কাছে শক্ত কোনো শেকলও নেই যে সে পৃথিবীকে বেঁধে রাখবে। তাহলে নয় কোটি ত্রিশ লাখ মাইল দূর থেকে সূর্য কীভাবে পৃথিবীকে টানছে, কীভাবে মহাকর্ষ বল কাজ করছে? আরেকটি প্রশ্ন হলো, এই আকর্ষণ বল তাত্ক্ষণিকভাবে ক্রিয়াশীল হয় বটে, কিন্তু সেটা কি আলোর গতির চেয়েও দ্রুততর গতিতে কাজ করে?
গুরুত্বপূর্ণ এ দুটি প্রশ্নের উত্তর বের করেন বিজ্ঞানী আইনস্টাইন। তিনি নিউটনের আবিষ্কারের প্রায় আড়াই শ বছর পর তাঁর সাধারণ আপেক্ষিক তত্ত্বে দেখান, মহাজগতে বস্তুগুলো পারিপার্শ্বিক মহাশূন্যকে (স্পেস) এমনভাবে প্রভাবিত করে, যার মাধ্যমে মহাকর্ষ বল ক্রিয়াশীল হয়। এর আগে ১৯০৫ সালে আইনস্টাইন তাঁর বিশেষ আপেক্ষিকতা বা স্পেশাল থিওরি অব রিলেটিভিটিতে প্রমাণ করেন যে, কোনো বস্তু বা সংকেত আলোর গতির চেয়ে দ্রুতগতিতে চলতে পারে না। এর গাণিতিক প্রমাণও তিনি দেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।