স্পোর্টস ডেস্ক : বাংলাদেশের লক্ষ্য টপ ফোরে উঠে যাওয়া। এখনো ওই পর্যায়ে যাওয়া সম্ভব হয়নি। সাত ম্যাচে ৭ পয়েন্ট নিয়ে পঞ্চম স্থানে এখন মাশরাফিরা। কাল আফগানিস্তানকে অনেকটা সহজে হারিয়ে এখন ওই পর্যায়ে। ম্যাচ শেষে সেরা পারফারমার সাকিবই যেমনটা বলছিলেন,‘আমাদের গুরুত্বপূর্ণ দুটি ম্যাচ এখনো রয়ে গেছে। ভারত ও পাকিস্তান। তবে এ ‘জয়’ ওই দুই ম্যাচে আত্মবিশ^াস বাড়াবে।’ আসলেই বাংলাদেশের মূল টার্গেটই এখন ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ। টপ ফোরে যেতে ওদের হারাতে হবে। আফগানদের হারিয়ে যতটা না আনন্দ করেছে, তার চেয়ে ঢের প্লান নিয়ে কথা বলা হয়েছে ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ নিয়ে নিঃসন্দেহে। হাতে কিছুটা সময়ও রয়েছে। কারণ ২ জুলাই ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ বার্মিংহ্যামে। ৫ জুলাই পাকিস্তানের বিপক্ষে লন্ডনে।
পয়েন্টশূন্য আফগানদের হারানোর আত্মবিশ^াস ছিল। তবে এ ম্যাচে আরেকটু প্রতিদ্বন্দ্বিতাই হওয়া উচিত ছিল। আফগানরা কখনই প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি বাংলাদেশের উপর। প্রথম ব্যাটিং করতে নামা বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানরা কিছুটা সংযত ছিল। কারণ আফগান স্কোয়াডে ছিল তিন কোয়ালিটিফুল স্পিনার মুজিব, রশীদ ও মোহম্মাদ নাবি। রিক্স নিয়ে খেললে দুর্ঘটনাও ঘটতে পারত। তবে নিজেদের বোলিংয়ের উপরও ছিল আস্থা। এতেই অন্তত আড়াই শ’ প্লাস রান হয় এমন এক টার্গেটে ব্যাটিং করে সফল হয় মুশফিক-সাকিবরা। ওই লক্ষ্যে সফল হলেও কিছুটা দুশ্চিন্তা ছিল। কারণ এ বিশ^কাপে এখন আর ৩০০ প্লাস রান না করতে পারলে আত্মতৃপ্তি হয় না। বাংলাদেশের বেলায়ও ঘটে অমনটা। কিন্তু এরপর ব্যাটিং করতে নামা আফগানিস্তানের ব্যাটসম্যানদেরও সম্পূর্ণরুপে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ম্যাচে বড় ব্যবধানেই জয় তুলেছে বাংলাদেশ। ২০০ রানে আটকে দিয়ে ওই জয় মাশরাফিদের। ম্যাচে সাকিব ছিলেন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। ব্যাট হাতে ওয়ান ডাউনে নেমে ৫১ রানের দায়িত্বপূর্ণ এক ইনিংস। এরপর বল হাতে রীতিমতো আতঙ্ক ছিলেন আফগান ব্যাটসম্যানদের।
৫ উইকেট নিয়েছেন তিনি ২৯ রানে। এর মধ্যে প্রথম ওভার থেকেই উইকেট পতনের কাজটা করতে থাকেন এবং যখনই বোলিং করেছেন তখনই সফল। যেন বলে কয়েই উইকেট! আফগান ব্যাটসম্যানদের মধ্যে একমাত্র সফল সামিউল্লাহ শেনওয়ারী। ৪৯ রানে অপরাজিত ছিলেন তিনি। হাফ সেঞ্চুরি করার জন্য প্রয়োজন ছিল ১ রানের। কিন্তু সে সাপোর্টটুকুও দিতে পারেননি কেউই। অলআউট ১৮ বল হাতে রেখেই। এ ছাড়া গুলবুদ্দিন নায়িব করেছিলেন ৪৭ রান ওপেনিংয়ে নেমে। ওপেনিং জুটি কিছুটা পেইন দিয়েছিল বাংলাদেশকে। ৪৯ রানের পার্টনারশিপ ছিল তাদের। কিন্তু সাকিবই শুরু করেন উইকেট পতন। ২৪ রান করে আউট হন রহমত শাহ। বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে ২টি নেন মুস্তাফিজুর রহমান।
এর আগে বাংলাদেশ প্রথম ব্যাটিং করে ২৬২ রান করে সাত উইকেটে। এতেও স্বস্তি না থাকার কারণ আফগানরা এ মাঠে আগের ম্যাচ খেলেছিল ভারতের বিপক্ষে। যদিও ভারত ২২৪ করে সেভ হয়ে যায়। তবে জিতেও যেতে পারত সে ম্যাচে আফগানরা। এতেই ছিল টেনশন।
তা ছাড়া খেলোয়াড়দের মধ্যে এমনিতেই রয়েছে একটা আফগান ভীতি! সর্বশেষ দুই দলের মধ্যে একটি টি-২০ সিরিজ অনুষ্ঠিত হয় ভারতে। যেখানে ০-৩ এ হেরেছিল বাংলাদেশ। ভীতি না থাকলে অমন রেজাল্ট হয় না, অন্তত আফগানদের বিপক্ষে। বলার আর অপেক্ষা রাখে না, আফগানদের বোলাররাও দুর্দান্ত। মুজিব, রশিদ খানের স্পিন বিশে^র অন্যসব স্পিনারদের চেয়ে মোটেও কম না। কিন্তু আরো তো থাকছে ৩০ ওভার। তাছাড়া ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে স্পিনারদের দাপট যদি থাকত তাহলে এ আসরে রশীদ খান আরো অনেক উপরে উঠে যেতেন। রেকর্ড পরিমাণ রান দিয়ে লজ্জায় মাথা হেট করতে হতো না তাকে। কিন্তু বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের সামনে ঠিকই নিজেরটুকু আদায় করে নেন। এটা ঠিক, বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে সেই ছন্দটা ছিল না। তামিমের সাথে লিটন দাসকে কেন ওপেন করানো হয়েছে সেটা স্টিভ রোডসই ভালো জানবেন। হয়তো পরের ম্যাচের জন্য পরীক্ষা করে দেখলেন কার্যকারিতা। তবে এ ফর্মুলা তোপে টিকেনি। ব্যাটিংটা ছিল বেশ এলোমেলো। সাকিব ও মুশফিক যদি দায়িত্ব নিয়ে মোটামুটি না খেলতে পারতেন, তাহলে ভারতের মতো স্কোরই হতো এ ম্যাচে। তবুও যে আড়াই শ’ ছাড়িয়েছে এই যা।
এটাও বাস্তব ২৬২ রান নিয়েও লড়াই করা যায়। করেছেও। বাংলাদেশের অভ্যাসও আছে। বাংলাদেশ ইনিংসে ২৩ রানের ওপেনিং পার্টনারশিপের পর লিটন আউট ১৭ বলে ১৬ করে। আঘাতটা হানেন মুজিব। এরপর মোহাম্মাদ নাবির বলে তামিম বোকার মতো বোল্ড। বুঝতেই পারেননি বলের গতিবিধি। ৫৩ বল খেলে ৩৬ রান করা তামিম তো ততক্ষণে উইকেটে সেট। যদিও সাকিবের সাথে তার পার্টনারশিপটা ছিল ৫৯ রানের। এরপরও এভাবে আউট হওয়াটা শোভনীয় নয়। সাকিব ও মুশফিক দলের হাল ধরেন এরপর। এরাও দেখেশুনে খেলেন। স্বভাবসুলভ ব্যাটিংয়ের বাইরে যেয়ে ১-২ রানের প্রতিই নজর দেন বেশি। কারণ আর কিছু না। আফগান বোলাররা যেভাবে নিখুঁত বোলিং করছিলেন,তাতে অন্যরা যে সুবিধা করতে পারবে না সেটা তাদের জানা ছিল।
এ জন্যই ওই দেখেশুনে খেলে যাওয়া। যাতে শেষের দিকে প্রয়োজন পরলে বিগ শট নিয়ে রানটা বাড়িয়ে নেয়া যায়। কিন্তু সেটা হয়নি। এ জুটি ৬১ রানের পার্টনারশিপ খেলে। সাকিবই আউট হন প্রথম। হাফ সেঞ্চুরি করে যখন হাত খুলে খেলতে যাবেন ঠিক তখনই সেই মুজিবের বলে বোল্ড। রিভিউ নেয়ারও প্রয়োজন মনে করেননি। এতটা পারফেক্ট ছিল তার বল। ৬৯ বলে ৫১ করে আউট সাকিব। এরপর মুশফিকেরও একই অবস্থা। টুক-টাক করে খেলছিলেন। মাহমুদুল্লাহ ক্রিজে এলেও পায়ে পুরনো ব্যথাটা বেড়ে ওঠায় তাকে নিয়ে কিছুটা শঙ্কা ছিল। তবু যখন বিগ শটের প্রয়োজন। সেটা করতে যেয়েই বিপদ ডেকে আনেন মুশফিক। আউট। তবু ইনিংসের সর্বোচ্চ স্কোরটা তার ব্যাট থেকেই আসে ৮৩। ১ ছক্কা ৪টি চারের সাহায্যে ওই রান করেন তিনি। মাহমুদুল্লাহ ২৭ ও মোসাদ্দেকের ২৪ বলে করা ৩৫ রানের সুবাদে দলীয় স্কোরটা ওই পর্যায়ে চলে যায়। মুজিব তিন উইকেট নেন ৩৯ রানে। রশীদ তার দশ ওভারে ৫২ দিয়ে ছিলেন উইকেট শূন্য। এ ছাড়া গুলবুদ্দিন নাইব নেন দুই উইকেট। সাকিব পান ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরুস্কার।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।