তলোয়ার শব্দটার সঙ্গে আমরা সবাই পরিচিত। প্রাচীনকালে রাজা-বাদশাহ বা যোদ্ধাদের কাছে থাকত তলোয়ার। তলোয়ারের আঘাতে মুণ্ডু ছিন্ন করে রাজ্য বিস্তার করে চলত রাজারা। এ তো গেল মানুষের গল্প। মাছের কাছে কী তলোয়ার থাকতে পারে? না, মাছের তলোয়ার ধরার ক্ষমতা নেই। তলোয়ার ধরার ক্ষমতা না থাকলেও পৃথিবীতে একটি মাছ আছে, যা তলোয়ার মাছ নামে পরিচিত। মাছটির তলোয়ারাকৃতির ঠোঁটের জন্য ইংরেজিতে এর নাম দেওয়া হয়েছে সোর্ড ফিশ। কোনো কোনো দেশে মাছটি ব্রডবিল নামেও পরিচিত। সমুদ্রের তলদেশে বড় ছোট সকল ধরনের মাছ দেখতে পাওয়া যায়। আজকে সোর্ড ফিস বা তলোয়ার মাছ সম্পর্কে মজার কিছু তথ্য রইল।
সামুদ্রিক এ মাছ সম্পর্কে মজার কিছু তথ্য জেনে নিন—
>> এরা এক্টোথার্মিক মাছ। এদের গড় আয়ু ৯ বছর। পৃথিবীতে প্রায় ২৫ হাজার প্রজাতির মাছের মধ্যে মাত্র ২২টি প্রজাতি দেহ থেকে তাপ উৎপন্ন করতে পারে। সোর্ড ফিশ সেই ২২ প্রজাতির একটি। চোখের পাশে থাকা বিশেষ অঙ্গের মাধ্যমে তলোয়ার মাছ তাদের চোখ ও মস্তিষ্কের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে। মাছটির তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ক্ষমতা তাদের শিকার ধরতে বিশেষভাবে সাহায্য করে।
>> যাযাবর প্রজাতির এ মাছটির শিকারি হিসেবে বিশেষ খ্যাতি রয়েছে। সোর্ড ফিশ ঘণ্টায় ১০০ কিলোমিটার বেগে সাঁতার কাটতে সক্ষম। আটলান্টিক, প্রশান্ত ও ভারত মহাসাগরের নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে এ মাছ বেশি দেখা যায়। ১৮ থেকে ২২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার পানির মধ্যেই এ মাছ থাকতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে।
>> তলোয়ার মাছ শিকার ধরার কাজে অত্যান্ত দক্ষ প্রকৃতির। তলোয়ার মাছ তার তলোয়ার আকৃতির বিল দিয়ে শিকারকে আঘাত করে। এতে করে শিকারের গতি কমে যায় এবং শিকার দুর্বল হয়ে পড়ে। শিকার দুর্বল হয়ে গেলে তা ধরতে অনেক সহজ হয় এবং জীবিত অবস্থায় খেতে পারে শিকারি।
>> এরা কখনই গ্রুপে ঘোরাফেরা করে না বরং সর্বদাই একা চলাফেরা করে থাকে। মাঝে মধ্যে এরা রোদ পোহানোর জন্য সমুদ্র তীরে এসে রোদ পোহাতে থাকে। আবার মাঝ সমুদ্রে এদের লাফিয়ে লাফিয়ে পানির ওপর উঠে আবার পানিতে ডুবতে দেখা যায়। এভাবেও এরা গায়ে রোদ লাগিয়ে থাকে এবং পানিতে ঘুরে বেড়াতে বা ট্যুর দিতে পছন্দ করে।
>> ৪ থেকে ৫ বছর বয়সী তলোয়ার মাছ প্রাপ্ত বয়স্ক হিসেবে ধরা হয়। এদের কিছু প্রাকৃতিক শিকার আছে যা এরা শিকার করে থাকে। তবে জুভেনাইল সোর্ডফিশ ম্যাকোস এবং তিমি মাছ দ্বারা আক্রান্ত হয়। কারণ এরা অত্যান্ত হিংস্র প্রকৃতির প্রাণী। ম্যাকোস এবং তলোয়ার মাছের মধ্যে মারামারি হয়। মাঝে মধ্যে ম্যাকোসের মাথার মধ্যে দিয়ে তলোয়ার মাছের বিল মাঝখান দিয়ে গিয়ে ভেঙ্গে থাকে। এমন অনেক ম্যাকোস মাছের মাথা দেখা গিয়েছে।
>> তলোয়ার মাছের মধ্যে ব্রোড বিল নামের এক ধরনের প্রজাতি আছে যারা খুব দ্রুত গতিতে পৌঁছাইতে পারে। এরা এক সমুদ্র হতে অন্য সমুদ্রে অথবা সমুদ্রের বিভিন্ন অঞ্চলে এক জায়গা হতে অন্য জায়াগায় মাইগ্রেট করে থাকে। সাগরের তলদেশে দুর্দান্ত গতিতে গতিশীল মাছদের মধ্যে এরা অন্যতম।
>> স্ত্রী প্রজাতির সোর্ড ফিশ পুরুষ প্রজাতির সোর্ড ফিশের চেয়ে আকারে বড় হয়ে থাকে। স্ত্রী প্রজাতির সোর্ড ফিশ ডিম পানিতে ছেড়ে দেয়। এই কারণে এদের নিষেক প্রক্রিয়া বাহ্যিক প্রকৃতির। এরা একবারে ১০ লক্ষ থেকে ৩০ লক্ষ পর্যন্ত ডিম পেড়ে থাকে। স্ত্রী প্রজাতির মাছ ডিম পানিতে ছেড়ে দেয় এবং পুরুষ মাছও পানিতে একই সময়ে স্পার্ম ছেড়ে দেয়। তখন ডিমের সাথে স্পার্মের মিলিত হওয়াই নিষেক সম্পন্ন হয়। এভাবে এরা প্রজনন করে থাকে।
>> সমুদ্রের পানিতে মার্লিন মাছের পরেই তলোয়ার মাছের স্থান। এরা সাগরের তলদেশের সবচেয়ে দ্রুতগামি প্রাণী। এসব মাছ বড় কোন বড়শি কিংবা ফিশিং জাহাজের হুকে আটকে গেলে এরা দ্রুতগতিতে নিচের দিকে ডাইভ দিতে থাকে। এভাবে এরা সমুদ্রের তলদেশের দিকে পর্যন্ত পৌঁছাতে থাকে। এই কারণে এদের ধরতে হলে হুক যেমন শক্তিশালি হতে হয় তেমনি হুকের দড়িও শক্তিশালী হতে হয়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।