স্বাস্থ্য ডেস্ক : সারা দেশে খোস-পাঁচড়া (স্ক্যাবিস) রোগ ব্যাপক হারে শুরু হয়েছে। খোস-পাঁচড়া এক ধরনের ছোঁয়াচে রোগ। জলবায়ু পরিবর্তন, অসচেতনতা, ভুল চিকিত্সা আর ঘনবসতির কারণে বাড়ছে এর সংক্রমণ। ময়লা-আবর্জনার কারণে মূলত এই রোগ হয়। অনেকে ঘন ঘন ওষুধ খায়। এ কারণেও হতে পারে। মশার কামড়েও হতে পারে। চুলকানি সাধারণত দেখা দেয় আঙুলের ফাঁকে, জয়েন্ট, শরীরের ভাঁজ, নাভি, জননাঙ্গে।
চিকিত্সকদের মতে, সঠিক চিকিত্সা না করলে ছোঁয়াচে এই রোগ ‘নীরব মহামারি’র রূপ নিতে পারে। একই সঙ্গে এই রোগের চিকিত্সায় অবহেলায় পরবর্তীতে কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। কোনো পরিবারের একজনের খোস-পাঁচড়া হলে ঐ পরিবারের সবাইকে একই চিকিত্সা সেবা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকরা।
হাসপাতালগুলোতে চিকিত্সা নিতে আসা অনেক রোগীই এখন খোস-পাঁচড়ায় আক্রান্ত। গত কয়েক মাসে ছোঁয়াচে এ রোগে আক্রান্তের সংখ্যা কয়েকগুণ বেড়েছে। বর্তমানে হাসপাতালগুলোতে আগত ১০০ রোগীর মধ্যে ১৫ জন খোস-পাঁচড়ায় আক্রান্ত। সবচেয়ে বেশি শিশুরা আক্রান্ত হচ্ছে। তারপরও এটা নিয়ে স্বাস্থ্য বিভাগ কোনো মাথা ঘামায় না। বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকদের মতে, এই রোগ জটিল আকার ধারণ করে জীবন কেড়ে নিতে পারে। কী কারণে এই রোগ হয় তার সবই ডাক্তারদের জানা। তবে চিকিত্সক ও রোগীর অভিভাবকদের ঘামখেয়ালিপনায় রোগী জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এটা পরজীবী সংক্রমণ।
মানুষের মধ্যে থাকে। কুকুর-বিড়ালের মধ্যে থাকে এই জীবাণু। এই রোগটা নিয়ে কেউ কোনো গুরুত্ব দিচ্ছে না। ইদানীং ব্যাপক হারে দেখা দেওয়ায় কিডনি রোগী বাড়ছে। মূলত চর্মরোগ থেকে কিডনি রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। অনেক ডাক্তার আক্রান্ত শিশুর চিকিত্সা দিয়ে দেন। কিন্তু ঐ বাড়ির সবার হয়ে যায়। ডাক্তার জানে এটা ছোঁয়াচে রোগ। শিশুর পাশাপাশি বড়দের একই চিকিত্সা দেওয়া উচিত। একই প্রেসক্রিপশনে দেওয়া যেতে পারে।
সপ্তাহখানেক ধরে চুলকানিতে ভুগছেন মোহাম্মদপুরের বাসিন্দা শাহনাজ আক্তার। বৃহস্পতিবার তিনি ঢাকার শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের চর্ম ও যৌন রোগ বিভাগে চিকিত্সা নিতে যান। শাহনাজ বলেন, সারা শরীরেই চুলকানি আছে। তবে শরীরের ভাঁজে ভাঁজে বেশি চুলকানি। লাল লাল গোটা উঠেছে, রাতে অনেক বেশি চুলকায়। চুলকালে আবার আরাম হয়, কিন্তু রক্ত তো বের হচ্ছে। ভালো হয় না দেখে ডাক্তারের কাছে আসছি। বাসার সবাইকে ওষুধ ব্যবহার করতে বলছে। হাসপাতালে গিয়ে পাওয়া গেল দুলাল শেখকে। নাখালপাড়ার এই বাসিন্দা দুই মাস ধরে চুলকানিতে আক্রান্ত। তিনি আক্রান্ত হওয়ার বেশ কিছু দিন পর তার স্ত্রীরও চুলকানি শুরু হয়েছে। তবে হাসপাতালে মূলত হাঁটুর ব্যথার চিকিত্সা করাতে এসেছেন দুলাল শেখ। পরে ডাক্তার তাকে চর্মরোগ বিভাগেও পাঠিয়ে দেন। দুলাল বলেন, ‘শরীরের চিপায় চাপায় অনেক চুলকানি। দোকান থেকে ওষুধ কিনে খাইছিলাম। প্রথম প্রথম চুলকানি কিছুটা কমলেও যায় না।’
চর্ম ও যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. কবীর চৌধুরী বলেন, খোস-পাঁচড়া ব্যাপক হারে ছড়িয়েছে গত দুই বছর ধরে। পরিবেশগত হতে পারে। পরজীবী রোগ। কুকুর-বিড়ালের মধ্যে এর জীবাণু থাকে। আগে একটা মলম বা ট্যাবলেট দিলে ভালো হয়ে যেত। এখন নানা ধরনের ওষুধ দিতে হয়। কোনো পরিবারের একজন এই রোগে আক্রান্ত হলে, ঐ পরিবারের সকলকে চিকিত্সা দিতে হবে। শিশুরা বেশি আক্রান্ত হয়। তবে সকলকে একই চিকিত্সা দিতে হবে। একই প্রেসক্রিপশনে চিকিত্সা দেওয়া যেতে পারে। হাসপাতালগুলোতে আগত রোগীদের মধ্যে ১৫ জন স্ক্যাবিসে আক্রান্ত।
চর্ম, যৌন রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এম এন হুদা বলেন, খোস-পাঁচড়া রোগকে হালকা করে দেখা উচিত না। এটা নীরব মহামারির মতো চলছে। নোংরা পরিবেশের কারণে হয়। ছোঁয়াচে রোগ। চুলকানি রাতে বেশি হয়। হাতে-পায়ে ঘা হয়ে যায়। এতে কিডনি রোগে আক্রান্ত হতে পারে। তিনি বলেন, শিক্ষার্থীরা, বিশেষ করে মাদ্রাসার ছাত্ররা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হয়। একজনের হলে পরিবারের সকল সদস্যকে একই ট্রিটমেন্ট দিতে হবে। এটা অবহেলা করলে পরবর্তীতে কিডনি মতো জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।
কিডনি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. নিজাম উদ্দিন চৌধুরী বলেন, যেহেতু চুলকানি ইনফেকশন হয়ে সংক্রমিত হয়ে যায়। সেখানে ব্যাকটেরিয়া ইনফর্ম করে। তখন কিডনি রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যে রোগ চিকিত্সা দিলে ভালো হয়ে যায়, সেই রোগ নিয়ে অবহেলা করা উচিত নয়। অবহেলায় কিডনির মতো জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেশি। কিডনি রোগে আক্রান্তদের চিকিত্সা ব্যয়বহুল। অসচেতনতার কারণে কিডনি অচল হয়ে যেতে পারে। তাই খোস-পাঁচড়া রোগ হলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিত্সা নিতে হবে।
মোবাইল ফোনে ‘flight mode’ দিয়ে আপনি কী কী কাজ করতে পারেন জানেন?
প্রতিরোধ: স্ক্যাবিস বা খোস-পাঁচড়া যাতে না হয় সেজন্য সব সময় স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। নিয়মিত সঠিকভাবে গোসল করতে হবে। স্ক্যাবিস সংক্রমিত ব্যক্তির সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকতে হবে। সংক্রমিত ব্যক্তির বিছানা, তোয়ালে, পোশাক, ব্যবহূত জিনিসপত্র ব্যবহার করা যাবে না। কারো স্ক্যাবিস হলে তার ব্যবহূত জিনিসপত্র আলাদা রাখতে হবে। ঘনবসতিপূর্ণ, সংক্রমণপ্রবণ এলাকায় সতকর্তা মেনে চলা এবং প্রতিরোধে ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। বাড়ির কেউ সংক্রমিত হলে সবাইকে চিকিত্সা নিতে হবে এবং যত দ্রুত সম্ভব চিকিত্সা শুরু করতে হবে। সংক্রমণ যাতে না ছড়ায় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
সূত্র : ইত্তেফাক
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।