রঞ্জু খন্দকার, গাইবান্ধা থেকে: গাইবান্ধা জেলা শহরের বড় মসজিদ এলাকা থেকে দক্ষিণে সাঘাটা ও ফুলছড়ি উপজেলা সড়ক। ঝকঝকে এই সড়ক ধরে কয়েক কিলোমিটার গেলেই আপনার চোখ আটকে যাবে সারি সারি ছিপজালে।
এলাকার নাম চিথুলিয়া। এটি পড়েছে সাঘাটার ভরতখালী ইউনিয়নে। এই এলাকায় অন্তত ২৫টি ছিপজালে মাছ ধরেন জেলেরা। দিনে তাঁদের জালে ধরা পড়ে প্রায় ২ মণ মাছ। টাকার অঙ্কে যার দাম কমপক্ষে ১৬ হাজার টাকা।
জেলেরা জানালেন, এখানে ধরা পড়া বেশির ভাগ মাছ এখানেই বিক্রি হয়। এলাকার অন্যরা কিনে নেন। অল্পকিছু মাছ বাজারে যায়। মোটরসাইকেলে করে অনেকে এখানে এসে তাজা মাছ কিনে নিয়ে যান।
জেলেদের কথার সত্যতা মিলল রাস্তার দিকে তাকিয়েই। সেখানে মোটরসাইকেলের কয়েকজন আরোহী দাঁড়িয়ে আছেন। জানালেন, তাঁরা মাছ কিনতে এসেছেন।
মোটরসাইকেল নিয়ে মাছ কিনতে এসেছিলেন একরামুল হক। তিনি একটি বেসরকারি ব্যাংকের কর্মকর্তা।
একরামুল বলেন, তিনি ও তাঁর পরিবারের লোকজন ছোটমাছ পছন্দ করেন। তাজা মাছের লোভে তিনি এখানে আসেন। জাল থেকে ধরা টাটকা মাছ নিয়ে যাবেন।
সাঘাটার পদুমশহর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক এনামুল হকও এসেছিলেন মাছ কিনতে। তিনি বলেন, বাজারে মাছের দামও কিছুটা বেশি। এখানে তুলনামূলক কম দামে মাছ পাওয়া যায়।
কয়েকজন জেলে জানালেন, বর্ষায় বিলে পানি হলেই তাঁরা এখানে ছিপজাল পাতেন। এলাকার অন্তত ২৫-৩০ জন জাল নিয়ে আসেন। পানি একেবারে না কমা পর্যন্ত মাছ পাওয়া যায়। তবে পানি খুব বেশি হলে জাল পাতা যায় না।
কথা হলো আশরাফুল ইসলাম নামের এক জেলের সঙ্গে। তিনি বলেন, এখানে দিনে অন্তত ২ মণ মাছ ধরা পড়ে। প্রতি কেজি ২০০ টাকা হিসেবে ধরলেও এর দাম দাঁড়ায় ১৬ হাজার টাকা। অনেকেই মাছ বিক্রি করেন না। নিজেরা খাওয়ার জন্যই মাছ ধরতে আসেন।
জেলেদের সঙ্গে কথা চলতে থাকা অবস্থায় অনেকেই জাল থেকে মাছ ধরছিলেন। জালে মলা, ঢেলা, খলসে, পুটিসহ নানা জাতের মাছ উঠতে দেখা গেল।
অজিবর রহমান নামের একজন জানালেন, পানি বেশি হলে অনেক সময় রুই-কাতলাসহ বড় মাছও পাওয়া যায়।
জেলেরা জানালেন, ছিপজাল বানাতে একটি বড় বাঁশ পানির মধ্যে পুঁততে হয়। আরেকটি বাঁশ আড়াআড়িভাবে বাঁধতে হয়, যেটি হাতল হিসেবে কাজ করে। এই বাঁশের মাথার সঙ্গে চারটি ছোট-ছোট বাঁশ যা ছিপ বাঁশ নামে পরিচিত, আড়াআড়ি করে বেঁধে দিতে হবে। এর সঙ্গে শক্ত করে জাল বাঁধতে হয়। এভাবেই ছিপজাল তৈরি হয়। জাল পাতার পর সেখানে চৌকি বেঁধে বসে থাকেন জেলে। কিছুক্ষণ পরপর জাল তুলে মাছ পড়েছে কি না দেখেন। মাছ পড়লে তা তুলে আবর্জনা ফেলে দিয়ে পাত্রে রাখেন।
সাইফুল ইসলাম নামের এক জেলে বললেন, এখানকার সব জেলেই চিথুলিয়া গ্রামের। এই জলাশয়টির পূর্ব দিকে যমুনা নদী। এখানে নদীর পানি ঢোকে, সঙ্গে মাছও ঢোকে। প্রতিদিন বিকেলবেলা তাঁরা এখানে মাছ ধরেন। অনেকেই মাছ ধরা দেখতে আসেন।
সড়কের ওপর মাছ ধরা দেখছিলেন রাকিব হাসান নামের এক ব্যক্তি। তিনি বললেন, তাঁর বাড়ি পলাশবাড়ী উপজেলায়। যাচ্ছেন ফুলছড়ি। তাঁর এলাকায় খাল-বিল কম। সচরাচর এত ছিপজাল একসাথে দেখা যায় না। তাই পথে আটকে ছিপজালে মাছ ধরা দেখছেন। এমন দৃশ্য দেখতে পাওয়া চোখেরও জন্যও শান্তির।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।