পূর্ণগ্রহণের সময় পুনরাবৃত্তি কেন হয়, সে জন্য তিন ধরনের মাস ও বছরকে আমাদের বুঝতে হবে। প্রথমটি হলো এক অমাবস্যা (বা পূর্ণিমা) থেকে পরবর্তী অমাবস্যা (বা পূর্ণিমা)। একে জ্যোতির্বিদেরা বলেন সাইনোডিক (synodic) মাস। এর গড় দৈর্ঘ্য ২৯.৫৩০৫৯ দিন। দ্বিতীয়টি হলো একটি উচ্চপাত (বা নিম্নচাপ) যে জায়গায় সূর্যের সঙ্গে একটি সরলরেখায় মিলিত হয়েছিল, সেখানে বছর শেষে সূর্যের ফিরে আসতে যে সময় লাগে। একে বলে ড্রাকোনিক বছর।
যেহেতু চাঁদের নোড বছরে ১৯.৩৬ ডিগ্রি পেছনে সরে আসে, সে জন্য ড্রাকোনিক বছর সৌরীয় বছর থেকে কয়েক সপ্তাহ ছোট। এক ড্রাকোনিক বছর ৩৪৬.৬২০০৫ দিনের সমান। তৃতীয়ত, এক অনুভূ (Perigee) থেকে আরেক অনুভূ পর্যন্ত যেতে চাঁদের যত সময় লাগে। অনুভূ হচ্ছে পৃথিবীর কাছে চাঁদের সবচেয়ে নিকটবর্তী অবস্থান। একে বলে Anomalistic মাস, যার পর্যায়কাল হলো ২৭.৫৫৪৫৫ দিন।
এই তিনটি পর্যায়কাল (ড্রাকোনিক মাস, ড্রাকোনিক বছর ও আনোমালিস্টিক মাস) প্রতি ১৮ বছর ১১ দিন (৬৫৮৫ দিন) অন্তর সূর্য, চাঁদ ও পৃথিবীকে একই সরলরেখায় আনে। কারণ, ১.২২৩ সাইনোডিক মাস = ৬৫৮৫ দিন ৭.৭২ ঘণ্টা, ২.১৯ ড্রাকোনিক বছর = ৬৫৮৫ দিন ১৮.৮ ঘণ্টা এবং ৩.২৩৯ আনোমালিস্টিক মাস = ৬৫৮৫ দিন ১২.৯ ঘণ্টা। এই সমাপতনের কারণে একবার গ্রহণ হলে ৬৫৮৫.৩২২ বছর বা ১৮ বছর ১১ দিন ৮ ঘণ্টা পর আবার গ্রহণ হবে।
এই পর্যায়কালকে সারোস পর্যায়কাল বলা হয় (Saros Cycle) বলা হয়। সারোস পর্যায় সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণ উভয়ের জন্যই প্রযোজ্য। একটি সারোস পর্যায়কালের পর আরেকটি অমাবস্যা (সূর্যগ্রহণ) বা পূর্ণিমা (চন্দ্রগ্রহণ) হবে। পৃথিবী ও চাঁদের দূরত্ব এবং চাঁদ ও সূর্যের দূরত্ব মোটামুটি একই হবে। তবে এখানে দুটি পার্থক্য থাকবে—একটি হলো অতিরিক্ত ৮ ঘণ্টা আবর্তনের ফলে পরবর্তী গ্রহণটি আগের গ্রহণের জায়গা থেকে ১২০ ডিগ্রি দূরে হবে, দ্বিতীয়টি হলো পরের গ্রহণটির অক্ষাংশ (Latitude) বদলাবে।
গত ২১ আগস্টের গ্রহণটি ছিল সারোস ১৪৫ চক্রের। ১৪৫ চক্রের আগের গ্রহণটি হয়েছিল ১৯৯৯ সালের ১১ আগস্ট, আর পরেরটি হবে ২ সেপ্টেম্বর ২০৩৫ সালে। প্রতিবছরই পৃথিবীর কোথাও না কোথাও অন্তত একটি আংশিক, বলয় বা পূর্ণগ্রহণ দেখা যায়। তার মানে একই সঙ্গে বেশ কয়েকটি সারোস চক্র বিদ্যমান। যেমন ২০০৯ সালের ২২ জুলাই বাংলাদেশ থেকে যে গ্রহণ দেখা গিয়েছিল, সেটা ছিল সারোস ১৩৬ চক্রের অংশ।
একই সময়ে প্রায় ৪০টি সারোস চক্র চলতে পারে, আবার একটি সারোস চক্রের শুরু ও শেষও আছে। যেমন ২১ আগস্টের ১৪৫ সারোস চক্র শুরু হয়েছিল ১৬৩৯ সালের ৪ জানুয়ারি এবং সেটি শেষ হবে ৩০০৯ সালের ১৭ এপ্রিল। অর্থাৎ প্রায় ১৩৭০ বছর সারোস চক্রটি স্থায়ী হবে। এর প্রথম গ্রহণটি হয়েছিল দক্ষিণ মেরুর কাছে আর শেষ গ্রহণটি হবে উত্তর মেরুর কাছে। শেষ গ্রহণের ১৮ বছর পর গ্রহণটি হওয়ার কথা, সেই সময় চাঁদের ছায়া পৃথিবীকে আর স্পর্শ করবে না।
একটি সারোস চক্রে ৭০টির মতো গ্রহণ হতে পারে। সারোস চক্র যেমন সূর্যগ্রহণের বেলায় প্রযোজ্য, তেমনি চন্দ্রগ্রহণের বেলাতেও। সঠিকভাবে সূর্যগ্রহণের ভাবীকথন কঠিন কাজ, কিন্তু বর্তমানের বিজ্ঞান সেটি করতে পেরেছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।