রঞ্জন বসু, দিল্লি: দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা বা ‘সার্কে’র মহাসচিব পদ পেয়েছে বাংলাদেশ। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে আফগানিস্তানের তালেবান সরকার। তারা বলছে, আফগানিস্তানের টার্নকে অস্বীকার করে বাংলাদেশের প্রার্থীকে ওই পদে মনোনীত করা হয়েছে। সার্কের প্রভাবশালী সদস্য দেশ ভারতের কাছে ‘কূটনৈতিক ফিলার’ পাঠিয়ে তারা এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে অনানুষ্ঠানিক প্রতিবাদও জানিয়েছে। তবে ভারত যেহেতু কাবুলের তালেবান শাসকদের কূটনৈতিক স্বীকৃতি দেয় না, তাই এই ‘অনুযোগ’ও জানানো হয়েছে তথাকথিত ‘ইনফর্মাল চ্যানেলে’।
কাবুলে ক্ষমতাসীনদের ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত সংবাদমাধ্যম ‘খামা প্রেস’ (কেপি) তাদের এক প্রতিবেদনে রবিবার (১২ মার্চ) অভিযোগ তুলেছে, ‘সার্ক সেক্রেটারি জেনারেলের পদ থেকে আফগানিস্তানকে বঞ্চিত করা হয়েছে।’
আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক স্তরে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য তালেবান নেতৃত্ব এক ধরনের মরিয়া চেষ্টা চালাচ্ছে। তাদের মুখপাত্র জাবিউল্লাহ মুজাহিদ এ সপ্তাহেই সরাসরি বলেছেন, ‘ইসলামিক আমিরাত অব আফগানিস্তানকে যদি কূটনৈতিক স্বীকৃতি দেওয়া হয়, তাহলে এই দেশটিকে নিয়ে আন্তর্জাতিক বিশ্বের যে উদ্বেগ বা অভিযোগ, সেগুলো অনেক ভালোভাবে অ্যাড্রেস করা যাবে।’
তালেবানের অর্থ প্রতিমন্ত্রী আবদুল লতিফ নাজারিও মন্তব্য করেছেন, আমাদের ইসলামিক আমিরাতকে স্বীকৃতি দেওয়া হলে আফগানিস্তানের সঙ্গে আন্তর্জাতিক বিশ্বের ‘এনগেজমেন্ট’ অনেক বাড়বে এবং তাতে এই অঞ্চলে স্থিতিশীলতা আসবে।
এই পটভূমিতে সার্ক মহাসচিবের পদটি পেলে আফগানিস্তানের পক্ষে বাকি বিশ্বে কূটনৈতিক স্বীকৃতি পাওয়ার প্রচেষ্টা যে গতি পেতো, তা বলাই বাহুল্য। কিন্তু সেই পদটি এখন বাংলাদেশকে দেয়ায় তালেবান নেতৃত্ব স্বভাবতই তাদের হতাশা গোপন করতে পারছেন না।
পদটি বাংলাদেশ যেভাবে পেলো
আসলে সার্কের সেক্রেটারি জেনারেল বা মহাসচিবের পদটি আটটি সদস্য দেশ পালা করে মনোনীত করে থাকে। ইংরেজি বর্ণমালার ক্রমানুসারে দেশগুলোর নাম যেভাবে আসে, অর্থাৎ আফগানিস্তান, বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, মালদ্বীপ, নেপাল, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা– এই অর্ডারে সদস্যরা তিন বছর পর পর সার্ক সচিবালয়ের প্রধান বা শীর্ষ আমলাকে বেছে নেওয়ার দায়িত্ব পায়।
সার্কের বিদায়ী মহাসচিব, শ্রীলঙ্কার কূটনীতিবিদ ইসালা রুয়ান উইরাকুনের কার্যকাল শেষ হয়েছে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি। ১ মার্চ থেকে নতুন মহাসচিবের দায়িত্ব নেওয়ার কথা, যা রীতি অনুযায়ী এবার আফগানিস্তানের পাওয়ার কথা ছিল।
সাধারণত সার্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা নিজেদের মধ্যে বৈঠকে বসে জোটের মহাসচিবের নামে চূড়ান্ত সিলমোহর দেন। যেবার যে দেশের পালা, তারাও তাদের কোনও পেশাদার কূটনীতিকের নামই এই পদের জন্য সুপারিশ করে থাকে।
সার্কের বেশিরভাগ দেশই যেহেতু আফগানিস্তানের সরকারকে স্বীকৃতি দেয় না, তাই এবারে কিন্তু কাবুলের দাবিকে উপেক্ষা করে সরাসরি এই পদের জন্য নাম চাওয়া হয় পরের ক্যান্ডিডেট ঢাকার কাছে।
বাংলাদেশ সরকার সেই অনুযায়ী গত মাসেই (ফেব্রুয়ারি) সার্ক মহাসচিব পদের জন্য গোলাম সারওয়ারের নাম সার্ক সচিবালয়ে ফরোয়ার্ড করে, যিনি এই মুহূর্তে মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশের হাইকমিশনার। এই পেশাদার কূটনীতিক এর আগে সুইডেন বা ওমানের মতো বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পালন করেছেন।
তবে এ বছর কিন্তু সার্ক পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা নিজেদের মধ্যে বৈঠকে বসতে পারেননি। তার বদলে সার্কের বর্তমান চেয়ার নেপালের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভরত রাজ পৌড়েল তার কাউন্টারপার্টদের সঙ্গে অনলাইনে বা টেলিফোনেই গোলাম সারওয়ারের ‘নমিনেশন’ নিয়ে আলোচনা সেরে নেন। লক্ষণীয় হলো, তিনি এক্ষেত্রে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গেও আলোচনা করেছেন, কিন্তু এড়িয়ে গেছেন আফগানিস্তানকে।
অবশেষে জোটের সাতটি সদস্য দেশের সম্মতি নিয়েই নেপাল একটি সার্কুলারের মাধ্যমে বাংলাদেশের মনোনীত প্রার্থী গোলাম সারওয়ারের নমিনেশন ‘এনডোর্স’ করার কথা জানায়। প্রায় ১৬ বছর ধরে সার্কের পূর্ণ সদস্য হওয়া সত্ত্বেও আফগানিস্তান এই গোটা প্রক্রিয়ার বাইরে রয়ে যাওয়ায় তালেবান নেতৃত্ব ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
কাতারের রাজধানী দোহায় তালেবানের যে আন্তর্জাতিক কার্যালয় রয়েছে সেখানে নিযুক্ত কর্মকর্তারাই এ ব্যাপারে ভারতীয় কূটনীতিবিদদের কাছে অনুযোগ জানিয়েছেন। তাদের বক্তব্য, সার্ক থেকে আফগানিস্তানকে তো বহিষ্কার করা হয়নি বা জোটের পক্ষ থেকে কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থাও নেওয়া হয়নি। তাই জোটের পরম্পরা অনুসারে এই পদটি তাদেরই দেওয়া উচিত ছিল।
কাবুলের তালেবান নেতৃত্ব আরও মনে করছে, আফগানিস্তানের বদলে বাংলাদেশকে এই পদটি দেওয়ার সিদ্ধান্ত যদিও জোট হিসেবে সার্কই নিয়েছে, তবু এখানে ভারতই আসল ভূমিকা পালন করেছে।
ভারতের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে সরকারিভাবে এখনও কোনও প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়নি। কোনও মন্তব্য করা হয়নি বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও। (বাংলা ট্রিবিউন)
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।