জুমবাংলা ডেস্ক: শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশনের (বিসিআইসি) বিভিন্ন সার কারখানায় গ্যাস বিল বাকি পড়েছে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা। সরকারি-বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর কাছেও গ্যাস বিল বকেয়ার বড় একটি অংশ জমেছে। বিপুল পরিমাণ এই বকেয়া আদায়ে পেট্রোবাংলা ও জ্বালানি বিভাগ জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছে। দৈনিক কালের কণ্ঠের করা প্রতিবেদন বলছে, দ্রুত পুরো এই বকেয়া অর্থ আদায়ের বিষয়ে কোনো সমাধান দেখছে না সংশ্লিষ্টরা।
পেট্রোবাংলার কর্মকর্তারা বলছেন, বেসরকারি কম্পানির বিল বকেয়া থাকলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে গ্যাস বিল আদায় করা যাচ্ছে। কিন্তু সরকারি সার কারখানা, বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিল সহজে আদায় করা যাচ্ছে না। অথচ বিদ্যুৎকেন্দ্র ও সার কারখানায় নিরবচ্ছিন্ন গ্যাসের সরবরাহ রাখতে উচ্চমূল্যে বিদেশ থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গাস (এলএনজি) আমদানি করে সরবরাহ করা হচ্ছে।
বকেয়া গ্যাস বিলের বিষয়ে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেছেন, ‘সার কারখানা ও বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর কাছে আমাদের একটা বড় বকেয়া পড়ে গেছে। সেগুলো উদ্ধারের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বকেয়ার জায়গাটা আমরা কমাতে চেষ্টা করছি।’
জ্বালানি বিভাগ ও পেট্রোবাংলা সূত্রে জানা গেছে, বিসিআইসির বিভিন্ন সার কারখানায় গ্যাস বিল বকেয়া ছাড়াও গত জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (বিপিডিবি) ও ইনডিপেনডেন্ট পাওয়ার প্রডিউসার (আইপিপি) মিলিয়ে বিদ্যুৎ খাতে গ্যাস বিল বকেয়া পড়েছে প্রায় আট হাজার কোটি টাকা। বিপিডিবি ও বিসিআইসিকে দ্রুত গ্যাসের বকেয়া বিল পরিশোধের আহ্বান জানিয়েছে জ্বালানি বিভাগ।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে পেট্রোবাংলার ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বলেন, ‘বিদ্যুৎ ও সার উৎপাদনে বিপুল পরিমাণ গ্যাস সরবরাহ করা হলেও ঠিকমতো বিল পাওয়া যায় না। এই দুই খাতে বিপুল পরিমাণ গ্যাস বিল জমে থাকায় পেট্রোবাংলার গ্যাস সরবরাহ কার্যক্রম ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বর্তমানে বিদ্যুৎকেন্দ্র ও সার কারখানাগুলো ধীরে ধীরে গ্যাস বিল পরিশোধ করছে।’
পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান জনেন্দ্র নাথ সরকার সম্প্রতি বলেন, ‘বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো অল্প অল্প করে গ্যাস বিল বকেয়ার টাকা দিচ্ছে, তবে এই অর্থগুলো দ্রুত পেট্রোবাংলার হাতে আসা দরকার। তাহলে পেট্রোবাংলার আর্থিক কার্যক্রম পরিচালনা করতে সহায়ক হবে।
পেট্রোবাংলা বিদ্যুৎ খাতে যে গ্যাস বিলের টাকা পাবে, তা মূলত বিপিডিবি ও আইপিপির কাছে। গ্যাস নিয়ে এসব কম্পানি বিপিডিবিকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। বিপিডিবির কাছে আইপিপিগুলোর বিপুল পরিমাণ বিল বকেয়া পড়ায় আইপিপিগুলোও এখন গ্যাসের বিল পরিশোধ করতে পারছে না।
আইপিপিগুলোর হিসাব অনুযায়ী, গত জানুয়ারি পর্যন্ত বাংলাদেশ বিপিডিবির কাছে আইপিপিগুলোর বকেয়া ছিল প্রায় ২৫ হাজার কোটি টাকা। এরপর বিশেষ ট্রেজারি বন্ড ইস্যুর মাধ্যমে এ পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ১০ হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করে সরকার। কিন্তু বন্ড ইস্যুর পরও বকেয়া সমস্যার নিরসন হয়নি। এমন পরিস্থিতিতে বকেয়ার বাকিটা নগদ অর্থে পরিশোধ হবে, না নতুন করে বন্ড ইস্যু হবে, তা এখনো নিশ্চিত নয়।
বেসরকারি খাতের বিদ্যুৎ উদ্যোক্তারা বলছেন, বকেয়া পরিশোধের পাশাপাশি জ্বালানি আমদানির জন্য পর্যাপ্ত ডলারের সংস্থান এবং চাহিদা অনুযায়ী ঋণপত্র (এলসি) খোলার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। তা না হলে বেসরকারি বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো থেকে চলতি গ্রীষ্ম মৌসুমে পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ সরবরাহে চ্যালেঞ্জ তৈরি হতে পারে।
গ্যাস বিল বকেয়ার বিষয়ে বিসিআইসি জ্বালানি বিভাগকে জানিয়েছে, শিল্প মন্ত্রণালয় ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে অর্থ বিভাগ থেকে বরাদ্দ পাওয়া সাপেক্ষে এ বিল পরিশোধ করা হবে। সংস্থাটির আওতায় রাষ্ট্রায়ত্ত ছয়টি সার কারখানা, সিমেন্ট, পেপার, স্যানিটারি, গ্লাস ও হার্ডবোর্ড কারখানা রয়েছে। এসব কারখানা পরিচালিত হয় পেট্রোবাংলার কম্পানিগুলোর কাছ থেকে গ্যাস সরবরাহ নিয়ে। বিশেষ করে সার উৎপাদনে পেট্রোবাংলার কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ গ্যাস সরবরাহ নিচ্ছে সংস্থাটি।
বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য মতে, দেশে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের সক্ষমতা ১১ হাজার ৭০৮ মেগাওয়াট, যা বিদ্যুৎ উৎপাদন সক্ষমতার ৪৫ শতাংশ। বর্তমানে মোট গ্যাস সরবরাহের ৪০ শতাংশের বেশি গ্যাস ব্যবহার হচ্ছে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোতে।
ভাসমান পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদেশে বিদ্যুৎ সরবরাহ করবে রাশিয়া
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।