বিনোদন ডেস্ক : জনপ্রিয় অভিনেতা সালমান শাহ হত্যাকাণ্ডের শিকার হননি, তিনি পারিবারিক কলহের জেরে আত্মহত্যা করেছিলেন বলে জানিয়েছে তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে সংবাদ সম্মেলন করে এ মামলার তদন্ত প্রতিবেদন তুলে ধরে এমন তথ্য জানান পিবিআই প্রধান বনজ কুমার মজুমদার। প্রতিবেদনে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন এ হত্যা মামলার এক নম্বর অভিযুক্ত সালমান শাহের স্ত্রী সামিরা।
সালমান শাহকে নিয়ে সমালোচনা হবে বলে আপনি চাননি সালমান-শাবনূরের সম্পর্ক নিয়ে আলোচনা হোক। সেজন্য মিডিয়া থেকে নিজেকে সরিয়ে রেখেছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আলোচনায় এলো এ সম্পর্ক। পিবিআই বলছে শাবনূরকে নিয়ে দাম্পত্য কলহের জেরে আত্মহননের পথ বেছে নেন সালমান। আপনিও তাই মনে করেন?
এমন প্রশ্নের জবাবে সামিরা বলেন, দেখুন, দাম্পত্য জীবনে কলহ হয়, সেগুলো মিটেও যায়। শাবনূরকে নিয়ে একটা ঝামেলা ছিলো। আসলে তাকে আমি ছোট বোনের মতো দেখেছি। সে বাসায় আসতো আমাদের, শুটিং স্পটে দেখা হতো। সবসময় সালমানকে ভাইয়া ভাইয়া বলে ডাকতো। সে সালমানের সঙ্গে রিলেশনে যাবে এটা আমি মানতে পারিনি। হোক সেটা একদিনের জন্য, এক মুহূর্তের জন্য। এ জগতে কোনো মেয়েই এটা মানবে না যে তার স্বামীর প্রেমিকা আছে।
তিনি বলেন, চারদিকে যখন শাবনূরকে নিয়ে গুঞ্জন ছড়ালো আমি বিরক্ত হয়েছিলাম। শাবনূরের ওপর মাইন্ড করেছিলাম। কিন্তু তাকে আমি একটি কথাও বলিনি। যার কর্মফল সে সে ভোগ করবে। মানুষকে ছোট করার শিক্ষা আমি পরিবার থেকে পাইনি। এ সম্পর্ক নিয়ে কথাকাটাকাটি যা হয়েছে আমার আর সালমানের মধ্যে হয়েছে। দূরত্ব বেড়েছে, আবার মিটমাট হয়ে কাছে এসেছি আমরা। রাগ করে চলে যেতাম বাবার বাড়ি, সালমান বুঝিয়ে নিয়ে আসতো।
সামিরা বলেন, সে কথা দিয়েছিলো শাবনূরের কাছ থেকে সরে আসবে। এবং সংবাদ সম্মেলন করে শাবনূরকে ছোট বোন বলে ঘোষণা দিল। তার সঙ্গে ছবি না করার ঘোষণাও দিয়েছিলো। এটা ইন্ডাস্ট্রির সবাই জানে। প্রায় ২৭টি সিনেমা সে ছেড়ে দিয়েছিলো শাবনূরের বিপরীতে। সর্বশেষ রাগ করে আমি ১৯৯৬ সালের জুনে চট্টগ্রাম চলে গেলাম। তখন সালমান বেশ অগোছালো হয়ে গেল। কারণ আমি তার কাজের ডায়েরি মেইনটেইন করতাম।
তিনি বলেন, কখন কোন ছবির শুটিং, কী পোশাক পরবে না পরবে আমিই ঠিক করতাম। কিন্তু প্রায় আড়াই মাসের মতো আমি বাবার বাড়ি ছিলাম রাগ করে। এসময় সালমান নানা দিক থেকে এলোমেলো হয়ে গেল। পরিচালক ও প্রযোজক সমিতির সঙ্গে ঝামেলা হলো। শাবনূরের সঙ্গে ঝা’মেলা হলো। সিঙ্গাপুর গেল শাবনূরকে নিয়ে আমাকে না বলেই। কিন্তু সেখান থেকেই ফিরে সে আমার কাছে ছুটে গেল চট্টগ্রামে।
তিনি আরও বলেন, সেটা ১৯৯৬ সালের আগস্টের শেষ দিকে। নিরিবিলি আমার সাথে কথা বলতে চায় বলে পতেঙ্গায় নিয়ে গেল। সেখানে অনেক কিছু নিয়েই আমার কাছে সরি বলেছিলো শাবনূর বিষয়ে। এটাও বলেছিলো শাবনূর তাকে বিয়ে করতে চায়। তাকে ব্ল্যাকমেইলের চেষ্টা হচ্ছে। ইন্ডাস্ট্রিতে অনেকেই ঝামেলা করছে। সালমান ও শাবনূরের মায়েরাও এ বিয়ে নিয়ে আগ্রহী।
সালমানের সাবেক স্ত্রী বলেন, আমার সন্তান হচ্ছিল না, আমার শাশুড়ি চাইতেন ছেলে আরেকটা বিয়ে করুক। শাবনূরকে তার পছন্দ ছিলো। আমি কষ্ট পেয়েছিলাম। বলেছিলাম তাহলে আমাকে বাদ দাও। এতই যখন সমস্যা তুমি ভালো থাকো। সে হাউমাউ করে কাঁদলো। বললো আমাকে ছাড়া বাঁচবে না। নিজেই বললো একটু সময় চায়। সব গুছিয়ে নেবে। সিনেমা ছেড়ে বিদেশে চলে যাবে আমাকে নিয়ে।
তিনি বলেন, আমি তাকে বলেছিলাম সিনেমা ছাড়তে হবে না। এ সিনেমা তোমাকে অনেক কিছু দিয়েছে। তুমি নিজেকে গুছিয়ে নাও। আমরা আবার একটা নতুন করে শুরু করতে চেয়েছিলাম। সেদিন অনেক কান্নাকাটি করলো। ও প্রচণ্ড ইমোশনাল ছিলো। তার ইমোশনটা আসলে মুখে সহজভাবে বলা গেলেও এটা যে কোন লেভেলের তা বলে বোঝাতে পারবো না। সালমানের মা-ভাইও জানে, তার বন্ধুরা জানে, ইন্ডাস্ট্রিরও অনেকে জানে।
সামিরা বলেন, ইমোশনাল নিয়ন্ত্রণ করতে পারতো না। সেটা পারলে আজকের এই দিন দেখতে হতো না। কথা দিল শাবনূরকে এড়িয়ে চলবে। তাকে কিছুদিন সময় দিতে হবে। শাবনূরের সাথে কিছু কাজ বাকি আছে। সেগুলো শেষ হওয়া পর্যন্ত আমি যেন ধৈর্য ধরি। কোনো রিউমার কানে না নেই। আমি চলে আসায় যে সবদিক থেকে ডুবে যাচ্ছে। আমি যেন ফিরে আসি। মেনে নিলাম। নায়কদের জীবনে এসব হয়। হলিউডে হচ্ছে, বলিউডে হচ্ছে। আমাদের এখানেও ছিলো। এখনকার শাকিবকে নিয়েও অনেক কিছু শুনি।
তিনি বলেন, যেহেতু আমি সালমানকে বিশ্বাস করতাম এবং সে আমাকে প্রচণ্ড ভালোবাসতো তাই এসব নিয়ে রাগ পুষে রাখিনি। সে অনুশোচনায় ভুগছে দেখে ফিরে এলাম ৩ সেপ্টেম্বর। আমরা নতুন করে একটা শুরু করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ঘটনার আগের দিন এফডিসিতে ‘প্রেম পিয়াসী’ ছবির ডাবিং ছিলো। আমি জানতাম সেটা। আগের দিন এই ডাবিং নিয়ে কথা হলো। সালমান বললো আমি যেন শাবনূরকে নিয়ে কোনো রিয়েক্ট না করি। স্বাভাবিক থাকি। পরদিন ডাবিংয়ে আমি শ্বশুরের সঙ্গে গেলাম।
তিনি আরও বলেন, সেখানে শাবনূরের সাথে দেখা হলো। সে আমাকে এসে জড়িয়ে ধরলো পাশে বসে। আমি স্বাভাবিক ছিলাম। কিন্তু কিছুক্ষণ পর দেখলাম সে সালমানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করছে। বিরক্ত লাগলো। আমি এটা নিতে পারিনি। রাগ করে চলে এলাম। সালমানের কানের কাছে মুখ নিয়ে বারবার কথা বলছিলো শাবনূর। এটা আমার ভালো লাগেনি। অল্প বয়স, মাত্র ২২ বছর। অল্পতেই রাগ হতো। চলে এলাম।
সালমানের সাবেক স্ত্রী বলেন, তাই নিয়ে কথাকা’টাকা’টি হলো সালমানের সঙ্গে বাসায়। বাকি ঘটনা তো পিবিআই সব ভিডিওতেই দিয়েছে। তবে রাতেই সব শান্ত হলো। ভাবতেও পারিনি ইমন এমন একটা কাণ্ড করে বসবে। কারণ সকালে নায়িকা পপিকে নিয়ে বাদল খন্দকারের একটা ছবির জন্য মিটিংয়ে যাওয়ার কথা ছিলো। আমিও যাবো সেখানে। তার মধ্যে এতকিছু হয়ে গেল পরদিন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।