আবু সুফিয়ান: ‘তুমি রবে নীরবে চিরদিন সবার হৃদয়ে। আজও তরুণ নায়কদের অনুপ্রেরণা তুমি।’
ফ্যাশন আইকন জনপ্রিয় নায়ক সালমান শাহ’র আজ ২৭তম মৃত্যুবাষিকী। ২৬ বছর পরও তিনি এখনো আকাশচুম্বী জনপ্রিয়। এখনো টিভি পর্দায় তার সিনেমা ও গান প্রচার হলে দর্শক আগ্রহ নিয়ে দেখেন।
শুধুমাত্র সালমান শাহ’র সিনেমার ক্ষেত্রেই এমন দেখা গেছে যে সিনেমা প্রচারের সময় নারী পুরুষ দর্শক শুধু সালমান শাহ’র পারফর্ম্যান্সই বেশি উপভোগ করেন। তারসঙ্গে নায়িকা হিসেবে কে আছেন তা কখনোই জরুরী কোন বিষয় নয় দর্শকের কাছে। মৃত্যুর এতো বছর পরও সালমান শুধুমাত্র তার দুর্দান্ত অভিনয় এবং ফ্যাশনে ভিন্নমাত্রা দিয়েই আজো দর্শকের হৃদয়ে গেঁথে আছেন। এমনও দেখা গেছে পাশাপাশি দুটি চ্যানেলের একটিতে নতুন কোন সিনেমা প্রচার হচ্ছে আবার অন্যটিতে সালমান শাহ’র সিনেমা প্রচার হচ্ছে। দর্শক যেন সালমান শাহ’র সিনেমা দেখার প্রতিই বেশি আগ্রহ প্রকাশ করেন।
১৯৯৩ সালে সোহানুর রহমান সোহান পরিচালিত ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবিতে নায়কের ভূমিকায় অভিনয় দিয়ে সালশান শাহ’র চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু। এই সিনেমায় অভিনয়ের করে তিন আকাশচুম্বী জনপ্রিয়তা পেয়েছিলেন। বিশেষ ভাবে তরুণ-তরুণীদের মধ্যে তানে নিয়ে একটি নতুন ক্রেজ সৃষ্ঠি হয়। একই ছবিতে নায়িকা মৌসুমী ও গায়ক আগুনেরও অভিষেক হয়। ফলে আবার সিনেমা হলগুলো দর্শক হতে শুরু করে। সালমান শাহ’কে ঘিরে চলচ্চিত্রে নতুন প্রাণ সৃষ্টি হয়। অবশ্য চলচ্চিতে আসার আগে সালমান শাহ টিভি নাটকে অভিনয় করেণ। কিন্তু টিভিতে খুব একটা জনপ্রিয় হতে পারেননি। সিনেমায় অভিনয়ের পরে যখন আবার চিভিতে অভিনয় শুরু করেন তখন তার জনপ্রিয়তা এই মাধ্যমেও বেশ বেড়ে যায়।
ছোট-বড় সবার প্রিয় নায়ক সালমান শাহ’র জন্ম ১৯৭১ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর সিলেট জেলার জকিগঞ্জ উপজেলায়। তার পিতার নাম কমর উদ্দিন চৌধুরী ও মাতা নীলা চৌধুরী। সালমানের দাদার বাড়ি সিলেট শহরের শেখঘাটে আর নানার বাড়ি দারিয়া পাড়ায়। যে বাড়ির নাম এখন ‘সালমান শাহ হাউস’। তার নানা পূর্ব পাকিস্তানের প্রথম চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’-এ অভিনয় করেছিলেন। অভিনয়ে সালমানও তাই সেই নানার কারণেই আসা।
স্কুলে পড়ার সময় সালমান শাহ বন্ধুমহলে সঙ্গীতশিল্পী হিসেবে বেশ পরিতি ছিলেন। ১৯৮৬ সালে ছায়ানট থেকে পল্লীগীতিতে পাস করেছিলেন তিনি। চলচ্চিত্রে আসার আগেই ১৯৯২ সালের ১২ আগস্ট বিয়ে করেন তিনি। স্ত্রী ছিলেন সামিরা হক। ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর রহস্যজনকভাবে মৃত্যুবরণ করেন এই নায়ক।
সালমান শাহ’র দ্বিতীয় চলচ্চিত্র জহিরুল হক ও তমিজউদ্দিন রিজভী পরিচালিত তুমি আমার চলচ্চিত্রটি ব্যবসাসফল হয়। পরিচালক জহিরুল হক চলচ্চিত্রটির কিছু অংশ নির্মাণ করার পর মারা যান। পরে তমিজউদ্দিন রিজভী বাকি কাজ শেষ করেন। এই চলচ্চিত্রে প্রথমবারের মতো তার বিপরীতে অভিনয় করেন শাবনূর। পরে তার সাথে জুটি বেঁধে একে একে সুজন সখি (১৯৯৪), বিক্ষোভ (১৯৯৪), স্বপ্নের ঠিকানা (১৯৯৪), মহামিলন (১৯৯৫), বিচার হবে (১৯৯৬), তোমাকে চাই (১৯৯৬), স্বপ্নের পৃথিবী (১৯৯৬), জীবন সংসার (১৯৯৬), চাওয়া থেকে পাওয়া (১৯৯৬), প্রেম পিয়াসী (১৯৯৭), স্বপ্নের নায়ক (১৯৯৭), আনন্দ অশ্রু (১৯৯৭), বুকের ভিতর আগুন (১৯৯৭) সহ মোট ১৪টি ছবিতে অভিনয় করেছেন । এছাড়া মৌসুমীর বিপরীতে তিনি আরও তিনটি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ছবি তিনটি হলো অন্তরে অন্তরে (১৯৯৪), স্নেহ (১৯৯৪) ও দেনমোহর (১৯৯৫)। সবকটি ছবি ব্যবসাসফল হয়।
সালমানের মৃত্যুর এতো বছর পরও পরবর্তীতে বাংলা সিনেমাতে অনেক নায়কের আবির্ভাব হলেও অভিনয় আর ফ্যাশন দিয়ে আর কোন নায়ক আজ পর্যন্ত সালমান শাহ’র জনপ্রিয়তাকে ছাপিয়ে যেতে পারেনি, অনেক চলচ্চিত্র প্রযোজক পরিচালকের ভাষ্যমতে সালমান শাহ ছিলেন ধুমকেতুর মতো, এলেন দেখলেন জয় করলেন আবার চলেও গেলেন। কোন নায়কের মৃত্যুর এতো বছর পরেও ভক্তদের হৃদয়ে এতোটা ভালোবাসা নিয়ে বেঁচে থাকার দৃষ্টান্ত একমাত্র শালমান শাহ’র ক্ষেত্রে দেখা গেছে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।