নিজস্ব প্রতিবেদক : ১১ হাজার ৪২৫ (২০১৬ সালে ৩০ জুন পর্যন্ত) গ্রাহকের কাছ থেকে ৩০০ কোটি টাকা আমানত গ্রহণ করে আসল টাকা ও লভ্যাংশ মেরে দিয়ে বিদেশে পাচার করেছে ‘আজিজ কো-অপারেটিভ কমার্স অ্যান্ড ফাইন্যান্স ক্রেডিট সোসাইটি লিমিটেড’ এর চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম।
ভুক্তভোগী একজন গ্রাহক সম্প্রতি বংশাল থানায় একটি মামলা দায়ের করলে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি) তাজুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করেন। এরপর অর্থ আত্মসাতের এসব চাঞ্চল্যকর তথ্য বেরিয়ে আসে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংকের অনুমোদন না থাকলেও সমবায় সমিতি ‘আজিজ কো-অপারেটিভ কমার্স অ্যান্ড ফাইন্যান্স ক্রেডিট সোসাইটি লিমিটেড’কে ব্যাংক হিসেবে প্রচার করা হয়েছিল। বেশি অঙ্কের লভ্যাংশ দেওয়ার কথা বলে প্রতিষ্ঠানটি সাড়ে ১১ হাজার গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় ৩০০ কোটি টাকার আমানত সংগ্রহ করেছে। সে আমানতের লভ্যাংশ দেওয়া তো দূরের কথা আসলই ফেরত পায়নি গ্রাহকরা। প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান তাজুল ইসলাম এরই মধ্যে কানাডায় থাকা দুই ছেলের কাছে পাচার করেছেন প্রায় শতকোটি টাকা। এই জালিয়াতির সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটির কয়েকজন কর্মকর্তাও জড়িত।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, তাজুলের বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর ও তেজগাঁও থানায় ভুক্তভোগী এবং রমনা থানায় দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) মামলা করেছে। কানাডায় টাকা পাচারের অভিযোগে সিআইডিও তাজুল ও তাঁর পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং আইনে রমনা থানায় মামলা করেছে। আদালতের নির্দেশে তাঁকে দুই দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।
গতকাল রবিবার দুপুরে রাজধানীর মালিবাগের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে সিআইডির সংঘবদ্ধ অপরাধ বিভাগের বিশেষ পুলিশ সুপার (এসএস) মোল্যা নজরুল ইসলাম বলেন, ‘আজিজ কো-অপারেটিভ কমার্স অ্যান্ড ফাইন্যান্স ক্রেডিট সোসাইটি লিমিটেডের কার্যক্রম ১৯৮৪ সালে শুরু হয়। তাজুল ইসলাম ১৯৮৪ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত ইসলামী ব্যাংকে চাকরি করেন। তিনি ব্যাংকটির ইনভেস্টমেন্ট শাখার প্রধান ছিলেন। ২০০৫ সাল থেকে তিনি আজিজ কো-অপারেটিভ কমার্স অ্যান্ড ফাইন্যান্স ক্রেডিট সোসাইটিতে যুক্ত হয়ে সাধারণ গ্রাহকদের প্রলোভন দেখিয়ে টাকা আদায়ের পর তা আত্মসাৎ করেন।’ মোল্যা নজরুল আরো বলেন, ‘সারা দেশে প্রতিষ্ঠানটির ২৬টি শাখার অনুমোদন থাকলেও ১৬০টি শাখা পরিচালনা করা হয়। এর মধ্যে ৮০টি শাখার ১১ হাজার ৪২৫ (২০১৬ সালে ৩০ জুন পর্যন্ত) গ্রাহকের কাছ থেকে ৩০০ কোটি টাকা আমানত গ্রহণ করে। শাখাগুলোর শাখা ব্যবস্থাপক ও অন্য কর্মকর্তারা গ্রাহকদের অধিক মুনাফার প্রলোভন দেখান। টাকা জমার মেয়াদ পূর্তিতে গ্রাহকরা আসল টাকা ও লভ্যাংশ ফেরত চাইলে কালক্ষেপণ ও নানাভাবে তালবাহানা করে আসছিলেন। তাজুল ইসলাম এবং শাখা ব্যবস্থাপক জাকির হোসেন চৌধুরী সংঘবদ্ধভাবে ১২টি বিভিন্ন তফসিলভুক্ত ব্যাংকে ৭৭টি হিসাবের মাধ্যমে ৩০০ কোটি টাকা স্থানান্তর করে প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নিয়েছেন।’
হিসাব বিবরণী পর্যালোচনায় দেখা যায়, জাকিরের যোগসাজশে তাজুল ইসলামের নিজের নামে, স্ত্রী আফরোজা পারভীন এবং ছেলে সাজ্জাদুল ইসলাম তানভীরের পরিচালিত সাউদি বাংলা প্রপার্টিজ লিমিটেড, তানভীর এন্টারপ্রাইজ, তানভীর অটো ব্রিক লিমিটেডের হিসাবসহ বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে ৩০০ কোটি টাকা সরিয়ে ফেলা হয়।
মোল্যা নজরুল বলেন, “প্রতিষ্ঠানটি ‘ব্যাংক’ শব্দ ব্যবহার করে সমিতির কার্যক্রম পরিচালনা করেছে, যা কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নীতিবিরোধী। তাজুল ইসলাম নিজে কানাডার গ্রিন কার্ডধারী এবং তাঁর ছেলে ফারহাদুল ইসলাম ছাব্বির ও রিয়াজুল ইসলাম রিজভী ২০১১ সাল থেকে কানাডায় স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। তাজুল তাঁদের কাছেই শতকোটি টাকা কানাডায় পাচার করেছেন।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।