স্বাভাবিক প্রসব একটি স্বতঃস্ফূর্ত প্রক্রিয়া। তবে এর জন্য মাকে যেমন সুস্থ থাকতে হয়, তেমনি গর্ভস্থ সন্তানকেও হতে হয় সুস্থ-সবল। সিজারিয়ান সেকশনের মাধ্যমে যেসব শিশুর জন্ম হয়, তাদের স্বাভাবিক প্রসবের ধাপগুলো পেরোতে হয় না বলে কেউ কেউ ধারণা করেন, এসব শিশুর জন্মের সময় মাথায় আঘাত পাওয়ার ঝুঁকি কম থাকে। আর সে কারণেই হয়তো এই শিশুরা অন্যদের চেয়ে একটু বেশি বুদ্ধিমান হয়।
আদতেই কি বিষয়টা ঠিক? চিকিৎসাবিজ্ঞান কী বলে?
ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের শিশু বিভাগের কনসালট্যান্ট ডা. তাসনুভা খান বলেন, ‘একটি শিশু ঠিক কতটা বুদ্ধিমান হবে, অনেকগুলো বিষয়ের ওপর তা নির্ভর করে। গর্ভাবস্থায় মা সঠিক মাত্রায় আয়োডিন পেয়েছেন কি না, জন্মের পর শিশু তার প্রয়োজনীয় সব পুষ্টি উপাদান পাচ্ছে কি না, এই বিষয়গুলো গুরুত্বপূর্ণ।
পুষ্টি উপাদানের অভাবে শিশুর বুদ্ধি কম হতে পারে। তা ছাড়া জিনগত কিছু সমস্যা এবং কিছু শারীরিক অসুস্থতার কারণেও শিশুর বুদ্ধি স্বাভাবিকের চেয়ে কম হতে পারে। শিশুর জন্ম স্বাভাবিক প্রসবের মাধ্যমে হয়েছে, নাকি সিজারিয়ান সেকশনে, তার সঙ্গে আসলে তার বুদ্ধিমত্তার কোনো সম্পর্ক নেই।’
মায়ের গর্ভ থেকে একটি শিশু স্বাভাবিক প্রসবের মাধ্যমে পৃথিবীতে আসবে, নাকি এ জন্য বাইরের কোনো সহযোগিতা তার প্রয়োজন হবে, সেই সিদ্ধান্ত নেবেন স্ত্রীরোগ ও প্রসূতিবিদ্যায় পারদর্শী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। আধুনিক চিকিৎসাবিজ্ঞানের তত্ত্ব অনুযায়ী প্রাকৃতিক নিয়মে, অর্থাৎ স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় প্রসবের জন্যই মায়েদের উৎসাহিত করা হয়।
এতে প্রসব–পরবর্তী জটিলতার ঝুঁকি অনেক কম থাকে। স্বাভাবিক প্রসব হলে অস্ত্রোপচার-পরবর্তী দীর্ঘমেয়াদি ব্যথা-বেদনাও থাকে না, ফলে প্রসূতি নারী দ্রুততম সময়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন। সন্তানের দেখভাল করার কাজটাও তাঁর জন্য তুলনামূলক সহজ হয়।
তবে প্রসবের সময় মা ও সন্তানের শারীরিক পরিস্থিতি কেমন আছে, আগে সন্তান জন্মের সময় মায়ের বিশেষ কোনো জটিলতার ইতিহাস রয়েছে কি না—এমন অনেক বিষয় বিবেচনা করেই কোনো কোনো ক্ষেত্রে অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এমনকি আগে থেকে কোনো ঝুঁকি না থাকলেও কখনো কখনো জীবন বাঁচাতে জরুরি ভিত্তিতেও সিজারিয়ান সেকশন করানোর প্রয়োজন পড়ে।
অর্থাৎ, মা কিংবা শিশুর অবস্থা বুঝে সিজারিয়ান সেকশনকে একটি সহায়ক পদ্ধতি হিসেবেই বিবেচনা করা হয়ে থাকে। তবে এটি কোনোভাবেই স্বাভাবিক প্রসবের বিকল্প নয়। আর এর সঙ্গে শিশুর বুদ্ধিমত্তারও কোনো সম্পর্ক নেই। স্বাভাবিক বুদ্ধিবৃত্তিক বিকাশের জন্য শিশুর থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা ঠিক থাকা প্রয়োজন। তাই জন্মের পাঁচ থেকে সাত দিনের মধ্যে থাইরয়েড হরমোন পরীক্ষা করিয়ে নেওয়া ভালো। নবজাতকের থাইরয়েড হরমোনের তারতম্য থাকলে দ্রুততম সময় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।