জুমবাংলা ডেস্ক : গুচ্ছে ফেরার জন্য দফায় দফায় ‘অনুরোধের’ পর শিক্ষা মন্ত্রণালয় সর্বশেষ চিঠি দিয়ে ‘নির্দেশ’ দিলেও নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় স্নাতক প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্তে অটল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। ইতোমধ্যে ভর্তি পরীক্ষার সূচিও চূড়ান্ত করেছে শিক্ষালয়টি। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোরের প্রতিবেদন থেকে বিস্তারিত-
বিশ্ববিদ্যালয়টির আইন অনুযায়ী ‘এককভাবে’ পরীক্ষা নেওয়ার কথা বলেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোঃ রেজাউল করিম।
মঙ্গলবার উপাচার্য বলেন, “শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে আমাদের কাছে চিঠি এসেছে, আমরা সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিব তাদেরকে। আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী, অ্যাকাডেমিক কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত অনুসারে ভর্তি কমিটির মাধ্যমে নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া হবে।
“আইন মোতাবেক এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত। নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় ভর্তি পরীক্ষা নিতে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রস্তুত।”
এদিন সকালে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় আইন অনুযায়ী নিজস্ব পদ্ধতি ও ব্যবস্থাপনায় ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে সরছে না জানিয়ে একটি বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফেইসবুক পেইজে দেওয়া ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের প্রথম বর্ষ প্রথম সেমিস্টার ভর্তি প্রক্রিয়া ২০০৫ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে জাতীয় সংসদে পাস করা ‘জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০০৫’ এ নির্ধারিত পদ্ধতিতে সম্পন্ন করা হবে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় আইনে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ভর্তি অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল গঠিত ভর্তি কমিটি দ্বারা পরিচালিত হওয়ার কথা উল্লেখ রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই আইনের ৪০ ধারার (১) উপধারায় বলা হয়েছে, “এই আইন এবং সংবিধির বিধান সাপেক্ষে, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতক, স্নাতকোত্তর ও অন্যান্য পাঠ্যক্রমে ছাত্র ভর্তি অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল কর্তৃক এতদুদ্দেশ্যে নিযুক্ত ভর্তি কমিটি কর্তৃক প্রণীত বিধি দ্বারা পরিচালিত হইবে৷”
তিন দফা ‘অনুরোধ’ জানানোর পর গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নিতে সোমবার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর উপাচার্যদের নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়।
গুচ্ছ পদ্ধতি থেকে কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেরিয়ে যাওয়া ও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেরিয়া যাওয়ার উদ্যোগের মধ্যেই এ ‘নির্দেশ’ দিয়ে উপাচার্যদের চিঠি পাঠিয়েছে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ।
চিঠিতে বলা হয়, দেশের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ‘স্বার্থ ও দাবি’ বিবেচনা করে ২০২৪-২০২৫ শিক্ষাবর্ষের জন্য গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি কার্যক্রম ‘কঠোরভাবে’ মেনে চলার লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের ‘নির্দেশ’ দেওয়া হল।
শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের ভোগান্তি কমাতে ২০২০ সাল থেকে দেশের সরকারি সাধারণ, কৃষি, প্রকৌশল ও প্রযুক্তি এবং বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হয়। গত শিক্ষাবর্ষে ২৪টি বিশ্ববিদ্যালয় এই পদ্ধতিতে ভর্তি কার্যক্রম চালায়। তবে নতুন (২০২৪-২৫) শিক্ষাবর্ষে গুচ্ছের প্রক্রিয়া এখনও শুরু হয়নি।
এর মধ্যে গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করেছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় এবং শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। আরও কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় এ পদ্ধতি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার বার্তা দিয়েছে।
এমন প্রেক্ষাপটে গত ১ ডিসেম্বর গুচ্ছ পদ্ধতিতে থাকার অনুরোধ জানিয়ে উপাচার্যদের চিঠি দেন অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ। চিঠিতে তিনি বলেন, “বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো এককভাবে সিদ্ধান্ত নিতে থাকলে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হবে।”
শিক্ষা উপদেষ্টার পর গত ১০ ডিসেম্বর গুচ্ছভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যদের একই অনুরোধ জানিয়ে একটি চিঠি পাঠায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেখানে বলা হয়, “বর্তমান পরিস্থিতিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর এককভাবে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করবে।”
সর্বশেষ গত ২৩ ডিসেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগ থেকে গুচ্ছে থাকার অনুরোধ জানিয়ে উপচার্যদের চিঠি পাঠায় শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সেখানে বলা হয়, “উপাচার্যদের নেতৃত্বে তার বিশ্ববিদ্যালয়টি যেন গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখে, সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হল।”
শিক্ষার্থীদের কড়া হুঁশিয়ারি
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়কে গুচ্ছে ফেরানোর চেষ্টা করা হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষার্থীরা। নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় শিক্ষার্থী ভর্তির পক্ষে অবস্থান তুলে ধরেছেন শিক্ষালয়টির শিক্ষক, শিক্ষার্থীসহ রাজনৈতিক ও সামাজিক সংগঠনগুলো।
পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মাসুদ রানা বলেন, “জবি গুচ্ছে থাকবে না, এটাই ফাইনাল সিদ্ধান্ত। এর বাইরে কিছু মানা হবে না। যদি এর বাইরে কিছু করার চেষ্টা করা হয় তবে তারা জবিয়ানদের আসল রূপ দেখবে।”
ছাত্র অধিকার পরিষদের জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি এ কে এম রাকিব বলেন, “জবি প্রশাসন এবার গুচ্ছ থেকে বের হয়ে নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা নিয়েছে। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করেছি, উপর মহল ইতিমধ্যে জগন্নাথকে পুনরায় হযবরল সিস্টেমে অন্তর্ভুক্তির চেষ্টা করছে।”
তিনি বলেন, “আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এখন থেকে আর আপনাদের গৃহপালিত বিশ্ববিদ্যালয় নয় যে, যা বলবেন তা মেনে নিবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী, নিজস্ব পদ্ধতিতে ভর্তি পরীক্ষা নিবে এটাই শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে ‘চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত’। যদি এর ব্যতিক্রম হয় তবে শিক্ষার্থীরা বুঝিয়ে দিবে কীভাবে নিজেদের স্বকীয়তা রক্ষা করতে হয়।”
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সদস্য সচিব শামসুল আরেফিন বলেন, “জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে দল মত নির্বিশেষে সকলেই গুচ্ছে যাওয়ার বিপক্ষে। সবাই চাই জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় যেন নিজেদের ব্যবস্থাপনায় শিক্ষার্থী ভর্তি করে।
“গুচ্ছে অংশগ্রহণের মাধ্যমে এ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী পায় না, গণবিজ্ঞপ্তি দিতে হয়। আর শিক্ষা মন্ত্রণালয় কেন বিশ্ববিদ্যালয়কে চাপ দিবে? আমরা তাদের কাছ থেকে এটা আশা করি না।”
কোন পরীক্ষা কবে
আগামী ৩১ জানুয়ারি ‘ই’ ইউনিটের (চারুকলা অনুষদ) ভর্তি পরীক্ষার মধ্য দিয়ে ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি পরীক্ষা শুরু করছে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়।
১৪ ফেব্রুয়ারি হবে ‘ডি’ ইউনিটের (সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ) পরীক্ষা। পরদিন ১৫ ফেব্রুয়ারি নেওয়া হবে ‘বি’ ইউনিটের (কলা ও আইন অনুষদ) পরীক্ষা।
এরপর ২২ ফেব্রুয়ারি ‘এ’ (বিজ্ঞান ও লাইফ অ্যান্ড আর্থ সায়েন্স অনুষদ) ও ২৮ ফেব্রুয়ারি ‘সি’ ইউনিটের (বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ) ভর্তি পরীক্ষা হবে।
শিক্ষা ও উদ্ভাবন খাত পরিবর্তনের লক্ষ্যে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে সম্মেলন
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।