আন্তর্জাতিক ডেস্ক: সৌদি আরবের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান খালেদ আল হামিদানের নেতৃত্বে সেদেশের একটি প্রতিনিধি দল সিরিয়া সফরে গিয়ে দেশটির প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে। দু’পক্ষ বিভিন্ন ক্ষেত্রে দু’দেশের মধ্যে সহযোগিতা জোরদার করা এবং দামেস্কে সৌদি দূতাবাস স্থাপনের বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছেছে। একই সঙ্গে সৌদি প্রতিনিধি দল জানিয়েছে আরব লীগে সিরিয়ার প্রত্যাবর্তন এবং আলজেরিয়ায় এ জোটের আগামী সম্মেলনে সিরিয়ার উপস্থিতিকে রিয়াদ স্বাগত জানাবে। খবর পার্সটুডে’র।
পর্যবেক্ষকরা বলছেন হঠাৎ করে সিরিয়ার সঙ্গে সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য সৌদি আরবের প্রচেষ্টার কারণ বিশ্লেষণ করতে হলে গত প্রায় এক দশকে সিরিয়ার ব্যাপারে রিয়াদের নীতির বিষয়টি পর্যালোচনা করতে হবে। গত এক দশকে সিরিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ও সন্ত্রাসীদেরকে পৃষ্ঠপোষকতা দেয়ার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছিল সৌদি আরব। সিরিয়ার একটি বৈধ সরকারকে উৎখাতের জন্য সৌদি আরব সন্ত্রাসীদের পেছনে কোটি কোটি ডলার ব্যয় করেছে। রিয়াদের আশঙ্কা ছিল আরববিশ্বের পরিবর্তিত পরিস্থিতি এবং এ অঞ্চলের চারটি স্বৈরশাসকের পতনের পর ইসরাইল বিরোধী প্রতিরোধ
শক্তিগুলো শক্তিশালী হয়ে উঠবে। এ অবস্থায় শক্তির ভারসাম্য যাতে প্রতিরোধ শক্তিগুলোর পক্ষে চলে না যায় সে কারণে তারা সিরিয়ার সরকারকে উৎখাতের জন্য উঠে পড়ে লেগেছিল। কারণ ইরানের পাশাপাশি সিরিয়ার সরকারও ইসরাইল বিরোধী প্রতিরোধ সংগঠনগুলোকে সমর্থন দেয়। সৌদি আরব, যুক্তরাষ্ট্র, সংযুক্ত আরব আমিরাত, তুরস্ক, ইসরাইল ও ইউরোপের কয়েকটি দেশে সিরিয়ার বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী গোষ্ঠীগুলোকে সর্বাত্মক সাহায্য-সমর্থন যুগিয়েছিল।
সিরিয়াবিরোধী এই দেশগুলো সন্ত্রাসীদের সমর্থন দেয়ার পাশাপাশি আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ফোরামেও সিরিয়া সরকারের বিরুদ্ধে ব্যাপক তৎপরতা চালিয়েছে। এই তৎপরতার অংশ হিসেবে তারা আরব লীগ থেকে সিরিয়াকে বহিষ্কার করা, সিরিয়া সংকটের রাজনৈতিক সমাধানের পথে বাধা সৃষ্টি করা, সিরিয়া, ইরান ও লেবাননের হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপে উস্কানি দেয়া প্রভৃতি পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করা যায়।
প্রায় এক দশক পর সিরিয়ার ব্যাপারে সৌদি আরবের নীতিতে আমূল পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। তারা এখন সিরিয়ার সরকার উৎখাতের কথা তো বলছে না বরং ওই দেশটির সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে ব্যাপক আগ্রহ প্রকাশ করেছে। সৌদি আরবের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধানের সিরিয়াস সফরের আগে সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল বিন ফারহান সিএনএনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, ‘আমরা আশা করি সিরিয়া সংকটের রাজনৈতিক সমাধানের জন্য বাশার আল আসাদ সরকার কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।’ তিনি বলেন, ‘সিরিয়ার উন্নয়নের জন্য এটিই একমাত্র পথ এবং আমরা একটি স্থিতিশীল সিরিয়া চাই।’
সিরিয়ার ব্যাপারে হঠাৎ সৌদি আরবের নীতিতে কেন এতো পরিবর্তন সেটাই এখন সবার প্রশ্ন। এ প্রসঙ্গে কয়েকটি কারণের কথা উল্লেখ করা যায়। প্রথমত, সিরিয়ার সরকারকে উৎখাতের সকল পরিকল্পনা কার্যত ব্যর্থ হয়েছে। সৌদি আরব ও তার মিত্ররা ভেবেছিল উগ্র আইএস জঙ্গি গোষ্ঠীগুলোকে সর্বাত্মক সমর্থন দিয়ে এবং দামেস্কের ওপর প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি করে সিরিয়ার সরকারের নীতিতে পরিবর্তন আনা যাবে। কিন্তু সে প্রত্যাশা তো পূরণ হয়নি বরং সিরিয়ার ৯০ শতাংশ বেশি ভূমি সরকারের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে এবং দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ও আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আসাদ সরকারের অবস্থান আরো শক্তিশালী হয়েছে।
সিরিয়ার ব্যাপারে সৌদি নীতিতে পরিবর্তনের দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে সিরিয়াবিরোধী জোটের মধ্যে ব্যাপক ভাঙন ও মতবিরোধ। সৌদি আরবের অন্যতম মিত্র সংযুক্ত আরব আমিরাত অনেক আগেই দামেস্কের সঙ্গে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা করেছে। অন্য আরব দেশগুলো আরব লীগে সিরিয়ার প্রত্যাবর্তনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছে। এছাড়া আমেরিকার নতুন সরকারের তৎপরতা থেকে বোঝা যায় পশ্চিম এশিয়া অঞ্চলকে ওয়াশিংটন অতটা অগ্রাধিকার দিচ্ছে না।
সিরিয়ার ব্যাপারে সৌদি নীতিতে পরিবর্তনের তৃতীয় কারণ হচ্ছে সৌদি আরব বুঝতে পেরেছে এ অঞ্চলে তাদের আধিপত্য বিস্তারের চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। সিরিয়া ও ইয়েমেন হচ্ছে এমন একটি ক্ষেত্র যেখানে সৌদি সরকার তার কোনো লক্ষ্য অর্জন করতে পারেনি বরং প্রতিটি পদে-পদে তারা ব্যর্থ হয়েছে। এ অবস্থায় কাতার ও ইরানের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করার ফলে সমগ্র অঞ্চলে সৌদি আরবের অবস্থা আগের চেয়ে আরও দুর্বল হয়ে পড়ে।
যাইহোক, এসব কারণে সৌদি আরব সিরিয়ার ব্যাপারে তাদের নীতিতে পরিবর্তন আনতে বাধ্য হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। সৌদি আরবের রাজনৈতিক বিশ্লেষক সোলাইমান আল আকিলি বলেছেন, ‘রিয়াদ সিরিয়াবিরোধী গ্রুপগুলোকে আর সমর্থন দেবে না। আর এ বিষয়টি রাজনৈতিক উপায়ে সিরিয়া সংকট সমাধানে ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা হচ্ছে।’
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।