জুমবাংলা ডেস্ক : কোরবানির হাটে তখন মধ্য রাতের ব্যস্ততা ফুরিয়ে আসছিল। কেউ কেউ ভালো দামে গরু কিনতে পারার আনন্দে আবার কেউ দাম একটু বেশি হয়ে গেল কিনা সেই দোলাচলে গরু নিয়ে ফিরছিলেন বাড়িতে। রাত তখন দুইটার ঘরে। শুরু হলো তুমুল বৃষ্টি।
যে যেখানে পেরেছেন আশ্রয় নিয়েছেন। দীর্ঘ অপেক্ষা করে বৃষ্টিতে ভিজে ধরলেন ফিরতি পথ। কিন্তু বৃষ্টি আর ফুরায় না। সকাল সাড়ে ৮টায় এই প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বৃষ্টি ঝরছিল।
টানা বৃষ্টিতে সিলেট নগরের বেশিরভাগ এলাকা ডুবে গেছে। রাস্তাঘাট ডুবে বাড়িঘরে ঢুকে পড়েছে পানি। ঈদের আয়োজন, কোরবানির প্রস্তুতি রেখে মানুষ এখন ব্যস্ত ঘরের আসবাবপত্র রক্ষায়। হাঁটু পানিতে দাঁড়িয়ে হতভম্ব মানুষ ছাড়ছেন কেবল দীর্ঘশ্বাস।
ডুবন্ত সিলেট নগরে তাই এবারের ঈদুল আজহার ভোর হলো খানিকটা অন্যরকম পরিস্থিতিতে।
সোমবার (১৭ জুন) ভোরে নগরের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে ও বিভিন্ন এলাকার মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ করে এমন চিত্র পাওয়া গেল।
গতকাল রবিবার দিবাগত রাত দুইটার পর থেকে সিলেটে ভারী বর্ষণ শুরু হয়। ভোর সাড়ে ছয়টা এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বৃষ্টিপাত চলছিল। তবে গত শনিবার সকাল ৯টা থেকে পরদিন রবিবার সকাল ৯ পর্যন্ত পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের চেরাপুঞ্জিতে ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টিপাত হয়েছে ৪৪১ মিলিমিটার।
ভারতের চেরাপুঞ্জি কিংবা মেঘালয়ে বৃষ্টিপাত বেশি হলে তার প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়ে সিলেটে। গত কয়েকদিন ধরে সেখানে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। এর মধ্যে সিলেটে এমন একটানা ভারী বর্ষণ বড় বন্যার শঙ্কা জাগাচ্ছে।
রবিবার দিবাগত রাত থেকে আজ সোমবার ভোর পর্যন্ত ভারী বর্ষণে সিলেট নগর এলাকার শাহজালাল উপশহর, দরগামহল্লা, পায়রা, সুবিদবাজার বনকলাপাড়া, চৌহাট্টা, জিন্দাবাজার, কাজলশাহ, মেডিক্যাল রোড, বাগবাড়ি, কালীবাড়ি, হাওলাদারপাড়া, সোবহানীঘাট, উপশহর, যতরপুর, তেরোরতন, সোনারপাড়া, কেওয়াপাড়া, সাগরদিঘিরপার, পাঠানটুলা, মিয়া ফাজিলচিশত, জালালাবাদ, হাউজিং এস্টেট, শাহি ঈদগাহ, ঘাসিটুলা, হাওয়াপাড়া, মীরাবাজার, শিবগঞ্জ, মাছিমপুর, জামতলা ও তালতলা এলাকায় পানি থইথই করছে। রাস্তাঘাট কোথায় হাঁটু পর্যন্ত, কোথাও কোমর পর্যন্ত ডুবে আছে। অনেক এলাকায় বাসাবাড়িতে পানি ডুবে ঈদের সকালে দারুণ ভোগান্তিতে রয়েছেন মানুষ।
সিলেট সিটি করপোরেশনের ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম সকাল ৬টা ২৪ মিনিটে নিজের ফেসবুকে ভিডিও পোস্ট করেছেন। সেখানে দেখা যায়, নগরের চৌকিদেখি এলাকা পানিতে থৈ থৈ করছে। কাউন্সিলরের বাসার ভেতর প্রায় এক ফুট পানিতে ডুবে আছে।
সিলেট নগরের দরগা গেট এলাকার বাসিন্দা আজমল আলী জানান, তার বাসার ভেতর রাত চারটার দিকে পানি ঢুকে। এখন প্রায় কোমর সমান পানিতে ঘরের খাট, সোফাসহ আসবাবপত্র ডুবে আছে।
নগরের শাহজালাল উপশহরের বাসিন্দা ও বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার সিলেট প্রতিনিধি শুয়াইব হাসান বলেন, ‘রাত তিনটার আগেই উপশহর এলাকার বিভিন্ন ব্লক পানিতে ডুবে গেছে। বাসাবাড়িতে পানি ঢুকে ঈদের আগের রাতে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে মানুষকে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেট জানিয়েছে, সিলেটে রবিবার সকাল ৬টা থেকে আজ সকাল ৬টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ১৭৩ দশমিক ৬ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেট কার্যালয় জানিয়েছে, সিলেটে তিন পয়েন্টে নীর পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এর মধ্যে কানাইঘাট পয়েন্টে সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ৫৯ পয়েন্ট ওপর দিয়ে, ফেঞ্চুগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর পানি বিপৎসীমার ৬৩ সেন্টিমিটার এবং জৈন্তাপুরের সারিঘাটে সারি নদীর পানি বিপৎসীমার ৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।-কালের কণ্ঠ
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।