আপনি যদি ধরেই নেন যে জীবন মানে ৩০ বসন্ত আর বোনাস হিসেবে রইল ৪০, তাহলে সময়ের স্রোতে গা ভাসিয়ে চলা যায়! কিন্তু আপনি যদি মনে করেন এই ৭০ বছরকে উপভোগ্য করতে হবে, তাহলে কোথায় থামতে হবে, তা জানা জরুরি। ‘না’ বলা সহজ না হলেও ‘না’ বলা শেখাটা জরুরি।
আমরা স্বেচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায় অনেক সময় অনেক ক্ষেত্রে ‘হ্যাঁ’ বলে দিই, যদিও জানি, এটা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। এতে করে দুই ধরনের বিভ্রান্তি ঘটে। প্রথমত প্রশ্ন ওঠে ব্যক্তিত্বের আর দ্বিতীয়ত যাঁর কাছে ওয়াদা করছেন, সে–ও কিন্তু খারাপ পরিস্থিতিতে পড়ে।
ছোট্ট একটি উদাহরণ দিলে খুব সহজেই মিলিয়ে নেওয়া যাবে। ধরুন, সকাল–সকাল অফিসের বস আপনাকে ডেকে একটি কাজ দিলেন, যা আপনাকে আগামী তিন ঘণ্টার মধ্যেই করে শেষ করতে হবে, কিন্তু আপনার যে টিম মেম্বার বা ক্যাপাসিটি, তা দিয়ে পাঁচ ঘণ্টায়ও এই কাজ শেষ করা সম্ভব নয়। কিন্তু বসকে আপনি ‘না’ বলতে পারলেন না; বরং অতি উৎসাহিত হয়ে দুই ঘণ্টায় কাজ শেষ করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে বের হয়ে এলেন বসের রুম থেকে। এখন ঘটনাটি কী হবে দেখুন।
আপনার টিম মেম্বাররা অনেক প্রেসার নিয়ে আশানুরূপ কাজ করতে পারবেন না, কাজের খারাপ আউটপুট আসবে এবং বসের কাছে আপনার ও আপনার পুরো টিমের যে ইমেজ, তা নষ্ট হবে। এতে লাভ তো নেই; বরং ক্ষতির অঙ্কটাই বেশি। তাই বলে কি মুখের ওপর ‘না’ বলে চলে আসা যাবে? সে অফিস হোক বা পরিবার, “না” বলতে হবে কৌশলে।
পরিবার, বন্ধু কিংবা কর্মস্থলে যদি কোনো কাজ নিয়ে সংশয় থাকে, তাহলে সরাসরি ‘পারব না’ বা ‘করব না’ না বলে, বলা যেতে পারে, ‘আমাকে একটু সময় দিন, আমার ব্যস্ততা আছে, যা আমি আগেই সেট করে রেখেছি।’ এতে করে আপনি যে সম্মতি দিচ্ছেন না, তা স্পষ্ট।
নিজের সক্ষমতা প্রকাশ করুন, মানুষমাত্রই লিমিটেশন থাকবে, সেটা স্বীকারে দ্বিধা রাখবেন না। আপনার প্রিয় মানুষটির কোনো আবদারও যদি আপনার সক্ষমতার বাইরে হয়, তাহলে তাঁকে ইতিবাচকভাবে বুঝিয়ে বলতে হবে। এতে তাঁর হৃদয় ভাঙার আশঙ্কা নেই; বরং পরবর্তী সময়ে তাঁর চাওয়ারও সীমা তৈরি হবে। কর্মক্ষেত্রেও এটা জরুরি। যে কাউকে স্বপ্ন দেখানোর আগে ভাবুন, আপনি সে স্বপ্নের বাস্তবায়ন কতটুকু করতে পারবেন?
প্রতিশ্রুতি দেওয়ার আগে ভাবুন, রাখতে পারবেন কি না? এক ভাগও কম সম্ভাবনা থাকলে প্রতিশ্রুতি দেবেন না। এতে আপনার ব্যক্তিত্ব বজায় থাকবে। কথা ও কাজে মিল থাকা জরুরি, তাহলেই আপনার মতামতের গ্রহণযোগ্যতা থাকবে। যেদিকে বৃষ্টি, সেদিকে ছাতা না ধরে; বরং পরবর্তী সময়ে যেন ভুগতে না হয়, তাই ন্যায়ের পথ বেছে নিন। আর সে জন্য ‘না’ বলতে হলে স্পষ্টভাবে বলুন। তাহলে যে বিষয়গুলো আপনার জন্য নয়, তা আর কখনোই সামনে আসবে না।
কাজের ক্যালেন্ডার তৈরি করুন, আপনি যদি প্রতিদিনের কাজটাকে সকালেই ভাগ করে নিতে পারেন, তাহলে সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হবে। পরিবার কিংবা অফিস—সব ক্ষেত্রেই রুটিন মেনে কাজ করলে সময় বাঁচে। এতে বেশি ও গুছিয়ে কাজ করা যায়। সব ক্ষেত্রে কাজের মাধ্যমেই নিজের ব্যক্তিত্ব ধরে রাখতে হয়। সাধ্যের বাইরে কিছু করার প্রয়োজনীয়তা নেই। সুন্দরভাবে বাঁচতে হলে ‘না’ বলা শিখতে হবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।