সুইচোরা পাখি নিরীহ হিসেবে পরিচিত। প্রকৃতির সৌন্দর্য ওরা। নানা রকম ক্ষতিকর পোকামাকড় খেয়ে পরিবেশের উপকার করে। ফসলের বন্ধু ওরা, মানুষের বন্ধু। বাংলাদেশে খুব ভালো অবস্থায় আছে, সব জায়গাই আছে। ওদের মূল খাদ্য পোকামাকড়। জল খায় ছোঁ মেরে। খেজুরের রস পছন্দ করে। ঝাঁক বেঁধে উড়ে উড়ে ডেকে ডেকে খেলতে ভালোবাসে।
উৎসাহী শিশু-কিশোরেরা ঢাকা শহর থেকে শুরু করে বাংলাদেশের সব জায়গাতেই ওদের দেখতে পাবে, দেখতে পাবে ডিম-বাচ্চা-বাসাসহ ওদের আচার-আচরণ ও উড়ে বা ডাইভ দিয়ে পোকা ধরার চোখজুড়ানো কৌশল। শুনতে পাবে ওদের মিষ্টি গান। অবশ্য ওরা গায়কপাখির দলভুক্ত নয়।
এবার আমাদের দেশের ৪ রকমের সুইচোরার সংক্ষিপ্ত বর্ণনা।
১. পিঙ্গল-মাথা সুইচোরা (Chestnutheaded Bee-eater, Merops leschenaulli)
এদের কপাল হয়ে মাথা-ঘাড় গাঢ়-পিঙ্গল। পিঠও পিঙ্গল। টকটকে হলুদ গলা। গলায় একটা চওড়া বলয় আছে, রঙ কালচে-পিঙ্গল। চোখের মণি লাল। পেট হলুদাভ-সবুজ। ঠোঁটের গোড়া থেকে চোখের পাশ ঘেষে কালো একটা টান। লেজের উপরিভাগ সাগর-নীল। সুইয়ের রঙও তাই। ডানার প্রান্ত সবুজ। সমস্ত শরীরে যেন মিশে আছে সবুজের একটা আভা। বেশি দেখা যায় পাহাড়-টিলাময় এলাকায় ও বড় বড় বনের আশেপাশে। ডিম পাড়ে ৪-৬ টা। রং সাদা।
২. নীললেজা সুইচোরা (Bluetarited Bee-eater, Merops Philippinus)
এরাও লম্বায় প্রায় ২২ সেন্টিমিটার। পিঠের শেষ প্রান্ত থেকে শুরু করে লেজের উপরিভাগ নীলচে। সুইয়ের রঙ কালচে-নীল। চোখের পাশে চওড়া কালো দাগ। মাথা-বুক-গলা-ঘাড় পিঙ্গল। এদের লেজ বেশ চওড়া, মেলে দিলে অনেকটা মাছের লেজের মতো দেখায়। ওই লেজে সাঁটা সুই দুটো দেখতে আরো চমৎকার। বুক ও পেটের রং হালকা পিঙ্গল, তাতে লালচে-হলুদের আভা। এরা ডিম পাড়ে ৬টা, ৭টাও দেখা যায়। ঋতুর সঙ্গে তাল মিলিয়ে জায়গা বদল করে খাবার সুবিধার জন্য।
৩. সবুজ সুইচোরা (Green Bee-eater, Merops orientalis)
সব মিলিয়ে সুন্দর সবুজ একটা পাখি। সবুজ গলায় কালো একটা অর্ধবলয় আছে। ঠোঁটের গোড়া থেকে চোখের পাশ ঘেঁষে চওড়া কালো টান। মনে হয় কাজলের পোঁচ। সুঁইয়ের রঙ কালচে। মাথা- ঘাড়ের রঙ লালচে-বাদামি। এদের কণ্ঠস্বর সবচেয়ে (বাংলাদেশে) মিষ্টি। গলা বাজাতে পারে ভালো। ‘ট্রি টিট্রিটিটি’ শব্দে যখন দলবেঁধে ওড়ে আর ডাকে, তখন মুগ্ধ না হয়ে পারা যায় না। ডিম দেয় প্রায়ই ৭টা।
৪. পাহাড়ি বড় সুইচোরা (Blue Bearheaded Bee-eater, Nyctyornis athertoni)
সুঁই নেই। এদের মাপ ৩৫ সেন্টিমিটার। পার্বত্য জেলাগুলোর গভীর পাহাড়ি জঙ্গলের মাঝের ফাঁকা জায়গায় ক্বচিৎ দেখা যায়। পৃথিবীর বৃহত্তম এই সুইচোরাদের দেখতে পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। এরাও সব মিলে সবুজ পাখি। গলা থেকে বুকের ওপরিভাগের কিছুটা সাগর-নীল।
লেজের আগা সমান, উপরিভাগ হালকা সবুজ, নিচটা হলদেটে, তাতে কালচে ভাব। পেটে আছে হলুদাভ রং, তার ওপরে খাড়া খাড়া সবুজ টান। লাজুক স্বভাবের পাখি। কণ্ঠস্বর চড়া। ব্যাঙ ও ছোট সাপ পর্যন্ত খায়। খুব সাহসী, শুধু মানুষকে এড়িয়ে চলতে চায়। বাসা করে পাহাড়ের গায়ে। পাহাড়ি ঝিরি থেকে জল পান করে। এদের বাসায় প্রায়ই সাপ ঢুকে ডিম-বাচ্চা খেয়ে ফেলে। ওরা তখন সাপের লেজ ও কোমরে আচ্ছামতন ঠোকরায় ও আঁচড়ায়।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।