জুমবাংলা ডেস্ক: চলতি বছরের ১১ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে সুইডিশ পার্লামেন্টের নির্বাচন। মহিবুল ইজদানী খান ডাবলু একমাত্র বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত সুইডিশ, যিনি সুইডেনের জাতীয় নির্বাচনে বামপন্থী রাজনৈতিক দল ভেনস্টার পার্টি থেকে মনোনয়ন পেয়ে সংসদ সদস্য পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। কালের কন্ঠের প্রতিনিধি সাব্বির খান-এর প্রতিবেদন উঠে এসেছে বিস্তারিত।
৪৫ বছর ধরে সুইডেনে বসবাসরত মহিবুল দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে সুইডেনের মূলধারার রাজনীতির সাথে যুক্ত আছেন এবং সুইডিশ ভেনস্টার পার্টির (লেফট পার্টি) একজন সক্রিয় নেতা হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছেন। তিনি দলের বিভিন্ন উচ্চ পদে দায়িত্বপ্রাপ্ত হয়ে সুনামের সাথে কাজ করেছেন।
মোট ২৬টি কমিউন (কাউন্সিল) নিয়ে গঠিত রাজধানী স্টকহোমের নির্বাচনী এলাকাকে মূলত দুটি নির্বাচনী এলাকায় ভাগ করা হয়েছে। তার মধ্যে ‘স্টকহোম সিটি কাউন্সিল’ হচ্ছে একটি এবং বাকি ২৫টি নিয়ে গঠিত হয়েছে দ্বিতীয় নির্বাচনী এলাকা।
ইজদানী খান কালের কণ্ঠকে বলেন, তিনি দুই নির্বাচনী এলাকা থেকেই সংসদ সদস্য পদের জন্য প্রতিদ্বন্দিতা করছেন।
সুইডেনের নির্বাচন পদ্ধতি কিছুটা জটিল এবং তা সরাসরি বাংলাদেশের মতো নয়। স্টকহোমে বসবাসরত বেশ কয়েকজন বাংলাদেশির সঙ্গে এ প্রসঙ্গে আলাপে তাদের বেশির ভাগই নির্বাচন পদ্ধতির ব্যাপারে অস্পষ্ট ধারণার কথা বলেন।
মহিবুল ইজদানী বলেন, সুইডেনে ভোটাররা ভোট দেয় দলকে, কোনো প্রার্থীকে নয়। পরে সুইডিশ জাতীয় সংসদে এ নিয়মের পরিবর্তন আনা হয় এবং দল যেভাবেই প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করুক না কেন, ভোটাররা চাইলে নিজেদের পছন্দের একজন প্রার্থীর নামের পাশে ক্রস কিংবা টিক চিহ্ন দিয়ে সুনির্দিষ্ট একজন প্রার্থীকে ভোট দিতে পারবেন। এই প্রক্রিয়াকে বলা হয় ‘ব্যক্তিগত ভোট’ বা সুইডিশ ভাষায় পারসনভাল। অর্থাৎ একজন ভোটার প্রার্থী তালিকায় যার নামের পাশে ক্রস চিহ্ন দেবেন, তার নাম তালিকার যত নম্বরে বা যেখানেই থাকুক না কেন, ভোটারের সুনির্দিষ্ট ভোটের (ক্রস বা টিক চিহ্ন) কারণে তাকে তালিকার ‘এক নম্বর’ প্রার্থী হিসেবে গণ্য করা হবে।
এভাবে একটি নির্বাচনী এলাকায় দলের কোনো একক প্রার্থী যদি এককভাবে ওই নির্বাচনী এলাকার মোট ভোটের ৪ শতাংশ বা তার বেশি ভোট পান, তাহলে তিনি সুনিশ্চিতভাবে জয়লাভ করবেন।
দুই নির্বাচনী এলাকার জন্য ভেনস্টার পার্টির প্রার্থীর তালিকা একটাই এবং দুই এলাকার মধ্যে যেকোনো একটিতে যদি কোনো প্রার্থী এককভাবে (ব্যক্তিগতভাবে প্রাপ্ত) সাড়ে তিন থেকে চার হাজার ভোট পায়, তাহলে তার জয়লাভ অবধারিত। অর্থাৎ দুটি নির্বাচনী এলাকার যেকোনো একটিতে ভেনস্টার পার্টির মোট প্রাপ্ত ভোটের ৪ শতাংশ পেলে একজন প্রার্থীর জয়লাভ সম্ভব।
ইজদানী বলেন, সুইডেনে চার বছর পর পর নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে ১১ সেপ্টেম্বর। তবে ২৪ আগস্ট থেকে বিভিন্ন লাইব্রেরি কিংবা কাউন্সিলের নির্ধারিত ভোটকেন্দ্রগুলোতে গিয়ে আগাম ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে। অর্থাৎ ভোট শুরু হবে ২৪ আগস্ট ও শেষ দিন হলো ১১ সেপ্টেম্বর।
মহিবুল ইজদানী খান বলেন, নতুন প্রজন্মের ভোটাররা ছাড়াও ইউরোপের অন্যান্য দেশ থেকে আগত সুইডেনে বসবাসরত বাংলাদেশিরা ঘরে বসে না থেকে ভোটে অংশগ্রহণ করলে ভেনস্টার পার্টি আশাতীত ভালো ফলাফল করবে।
একজন বাংলাদেশি হিসেবে স্টকহোমে বসবাসরত বাংলাদেশিদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, নিপীড়িত, শোষিত, বৈষম্যবাদবিরোধী সমাজতান্ত্রিক নারীবাদী দল ভেনস্টার পার্টিকে ভোট দিয়ে জয়যুক্ত করুন।
ইজদানী বলেন, তুলনামূলকভাবে বড় রাজনৈতিক দলগুলো থেকে ‘ব্যক্তিগত ভোটে’ পার্লামেন্টে জয়লাভ করতে হলে একজন প্রার্থীকে কমপক্ষে সাত থেকে আট হাজারের কাছাকাছি ভোট প্রাপ্তির প্রয়োজন হয়। সেই তুলনায় ছোট দলগুলো থেকে প্রয়োজন হয় মাত্র চার হাজার। তাও নির্ভর করে দলের প্রাপ্ত মোট ভোটের ওপর। অনেক সময় চার হাজার কিংবা তারও কম ভোটে জয়লাভ করার নজিরও রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সুইডেনের বর্তমান পার্লামেন্টে এমন কয়েকজন ব্যক্তিগত ভোট নিয়মে জয়লাভ করে সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
মহিবুল ইজদানী ভেনস্টার পার্টির প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দিতা করে প্রথমবারের মতো স্টকহোম সিটি কাউন্সিলে কাউন্সিলর হিসেবে নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং ২০০২ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত সে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর তিনি ২০০৬-২০১০ এবং ২০১৪-২০১৮ সাল পর্যন্ত দলের কাউন্টি কাউন্সিল (গ্রেটার স্টকহোম অ্যাসেম্বলি) নির্বাচনে জয়লাভ করে আট বছর কাউন্টি কাউন্সিলরের (গ্রেটার স্টকহোম অ্যাসেম্বলি) দায়িত্ব পালন করেছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।