রাতের নিস্তব্ধতা ভেঙে ফেলছিল দম্পতির উচ্চস্বরে ঝগড়ার আওয়াজ। ঢাকার মোহাম্মদপুরের একটি ফ্ল্যাটে সদ্য বিয়ে করা রিফাত আর তানজিমার সম্পর্কে চিড় ধরতে সময় লাগেনি। প্রেমের শুরুটা ছিল স্বপ্নিল, কিন্তু দৈনন্দিন জীবনের চাপ, আর্থিক টানাপোড়েন, আর পারস্পরিক অপূর্ণ প্রত্যাশা তাদের সংসারকে করে তুলেছিল যুদ্ধক্ষেত্র। একদিকে রিফাতের অভিযোগ – তানজিমা তার মায়ের সাথে সম্মানজনক আচরণ করে না। অন্যদিকে তানজিমার কষ্ট – রিফাত তাকে ‘প্রথম প্রিয়’ হিসেবে গুরুত্ব দেয় না। এই গল্প কি শুধু রিফাত-তানজিমার? নাকি আজকের বাংলাদেশের অসংখ্য তরুণ দম্পতির প্রতিচ্ছবি? অথচ, ইসলাম যেখানে দাম্পত্য জীবনকে দিয়েছে ‘মীছাকান গালীযা’ বা দৃঢ় অঙ্গীকারের মর্যাদা, সেখানে কেন ভেঙে পড়ছে এই বন্ধন? উত্তরণের পথ কোথায়? উত্তর নিহিত আছে সুখী দাম্পত্যের মূলমন্ত্র-এর গভীরে – কুরআন-সুন্নাহর সেই অমূল্য নির্দেশিকায়, যা শুধু বিধান নয়, বরং হৃদয়কে স্পর্শ করা প্রেম, শ্রদ্ধা আর পারস্পরিক দায়িত্ববোধের সুসমন্বিত রূপ।
Table of Contents
সুখী দাম্পত্যের মূলমন্ত্র: কুরআন-সুন্নাহর আলোকে গভীর বিশ্লেষণ
ইসলাম দাম্পত্য জীবনকে কেবল শারীরিক বা সামাজিক চুক্তি হিসেবে দেখে না; এটিকে দেখে এক পবিত্র সম্পর্ক, এক ঐশ্বরিক নিয়ামত, যার মাধ্যমে মানুষ খোদাপ্রদত্ত প্রশান্তি লাভ করে এবং সমাজের ভিত্তি সুদৃঢ় করে। এই সুখী দাম্পত্যের মূলমন্ত্র এর ভিত্তি স্থাপিত হয় কয়েকটি মৌলিক স্তম্ভের উপর, যেগুলো ছাড়া সম্পর্কের স্থায়ী সুখ অকল্পনীয়। প্রথম ও প্রধান স্তম্ভ হলো ইমান বা আল্লাহভীতি (তাকওয়া)। যখন স্বামী-স্ত্রী উভয়ের হৃদয়ে আল্লাহর ভয় ও জবাবদিহিতার অনুভূতি জাগ্রত থাকে, তখন তাদের প্রতিটি কর্ম, প্রতিটি কথাবার্তা, এমনকি মনোজগতের চিন্তাভাবনাও পরিচালিত হয় ন্যায় ও সততার দিকে। এটি অদৃশ্য একটি শৃঙ্খলা তৈরি করে, যা ঝগড়া-বিবাদের সময়েও পবিত্র সীমারেখা অতিক্রম করতে দেয় না। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে সেই ব্যক্তি সর্বোত্তম যে তার স্ত্রীর নিকট সর্বোত্তম।” (তিরমিজি)। এই ‘সর্বোত্তম’ হওয়ার প্রেরণা আসে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের একনিষ্ঠ প্রচেষ্টা থেকে।
দ্বিতীয় অপরিহার্য স্তম্ভ হল পরস্পরের প্রতি সদাচরণ ও উত্তম আচরণ (মুআশারা বিল মারুফ)। কুরআন মজীদে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে, “আর তাদের (স্ত্রীদের) সাথে সদ্ভাবে সহাবস্থান কর।” (সূরা আন-নিসা, ৪:১৯)। এই ‘সদ্ভাব’ বা উত্তম আচরণের মাঝেই লুকিয়ে আছে সুখী দাম্পত্যের মূলমন্ত্র এর বাস্তব রূপ। এর মাঝে অন্তর্ভুক্ত:
- সম্মান ও মর্যাদা (ইহতিরাম): স্বামী-স্ত্রীর পরস্পরের ব্যক্তিত্ব, মতামত, অনুভূতি ও প্রয়োজনের প্রতি অকৃত্রিম সম্মান প্রদর্শন। কাউকে হেয় প্রতিপন্ন করা, অপমান করা বা তুচ্ছতাচ্ছিল্য করা ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। রাসূল (সা.) নিজেই ফাতিমা (রা.)-এর সামনে দাঁড়িয়ে যেতেন এবং তাকে সম্মান করতেন।
- কোমলতা ও সৌজন্যমূলক আচরণ (আল-লিন ওয়াল কাওল আল-মাইসুর): রাসূল (সা.) বলেছেন, “মুমিনদের মধ্যে ঈমানের দিক দিয়ে সেই উত্তম, যে স্বভাব-চরিত্রে সর্বোত্তম এবং যে তার স্ত্রীর প্রতি সর্বাধিক সদয়।” (তিরমিজি)। কর্কশ ভাষা, রূক্ষ আচরণ, রাগের বশে কটূক্তি – এগুলো সম্পর্কের ভিত্তিকে দুর্বল করে দেয়। কোমল ভাষা, মিষ্টি কথার মাধ্যমে মনোবল বৃদ্ধি, উৎসাহ দেওয়া – এগুলোই সুখের সোপান।
- ধৈর্য্য ও ক্ষমা (আস-সবর ওয়াল আফও): দাম্পত্য জীবনে মতভেদ, রাগ-অভিমান হবেই। সুখী দাম্পত্যের মূলমন্ত্র হল এগুলোকে ধৈর্য্য সহকারে মোকাবেলা করা এবং ক্ষমাশীল হওয়ার মানসিকতা পোষণ করা। রাসূল (সা.) বলেছেন, “বিশ্বাসী পুরুষ কোন নারীকে ঘৃণা করবে না। যদি তার স্বভাবের কোন দিক অপছন্দ হয়, তবে তার অন্য কোন দিক তাকে সন্তুষ্ট করবে।” (মুসলিম)। ক্ষমাই সম্পর্ককে করে তোলে আরও মজবুত।
তৃতীয় স্তম্ভটি হলো সুষ্ঠু ও খোলামেলা যোগাযোগ (হুসনুল বায়ান ওয়াল ইত্তিফাক)। ইসলাম যোগাযোগের গুরুত্ব অপরিসীমভাবে তুলে ধরে। স্বামী-স্ত্রীর মাঝে ভুল বোঝাবুঝির অন্যতম কারণ হল অপরিপক্ব বা অনুপস্থিত যোগাযোগ। একে অপরের চিন্তা-ভাবনা, আশা-আকাঙ্ক্ষা, দুঃখ-বেদনা খোলামেলা ভাগাভাগি করা, মনোযোগ সহকারে শোনা এবং যথাযথ প্রতিক্রিয়া জানানো সুখী দাম্পত্যের মূলমন্ত্র এর অত্যাবশ্যকীয় অংশ। রাসূল (সা.) খাদিজা (রা.)-এর সাথে তাঁর গভীর আস্থা ও নির্ভরতার সম্পর্ক ছিল এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত, যেখানে তিনি সবকিছুই তাঁর সাথে শেয়ার করতেন।
চতুর্থ গুরুত্বপূর্ণ দিক হল ন্যায়সঙ্গত দায়িত্ববোধ ও ভাগাভাগি (আল-আদল ফিল মাসউলিয়াত)। ইসলাম স্বামী-স্ত্রী উভয়ের জন্য কিছু মৌলিক দায়িত্ব ও অধিকার নির্ধারণ করে দিয়েছে, যা সুখী দাম্পত্যের মূলমন্ত্র এর কাঠামো তৈরি করে। স্বামীর দায়িত্বের মধ্যে রয়েছে পরিবারের আর্থিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করা (নাফাকাহ), স্ত্রীর ন্যায্য অধিকার প্রদান করা এবং ন্যায়বিচার ও সুরক্ষা দান করা। স্ত্রীর দায়িত্বের মধ্যে রয়েছে স্বামীর ঘর-সংসার রক্ষণাবেক্ষণ করা, সন্তান প্রতিপালনে সহায়তা করা এবং স্বামীর সম্পদ ও সম্মান রক্ষা করা। তবে এখানে গতিশীলতা ও সহযোগিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। রাসূল (সা.) নিজ ঘরে সাহায্য করতেন, কাপড় সেলাই করতেন, বকরির দুধ দোহন করতেন। আয়েশা (রা.) বলতেন, তিনি ঘরের কাজে নবীজি (সা.)-কে সহযোগিতা করতেন। দায়িত্ব শুধু নির্ধারণ নয়, প্রেম ও শ্রদ্ধার সাথে তা পালন এবং প্রয়োজনে একে অপরের পাশে দাঁড়ানোই আসল কথা। আধুনিক যুগে, যেখানে উভয়ই কর্মজীবী হতে পারেন, সেখানে দায়িত্বের এই ভাগাভাগি আরও বেশি নমনীয় ও সমঝোতাপূর্ণ হতে হবে।
বাস্তব জীবনে ইসলামিক গাইডলাইন: কুমিল্লা থেকে সিলেটের দৃষ্টান্ত
এই সুখী দাম্পত্যের মূলমন্ত্র শুধু তত্ত্বকথা নয়, বাস্তব জীবনে এর প্রয়োগই সত্যিকারের সাফল্য নিয়ে আসে। কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার বাসিন্দা আরিফুল ইসলাম ও ফারজানা আক্তারের গল্পটি উল্লেখযোগ্য। বিয়ের পরের বছরগুলোতে সংসারের চাপ, ছোটখাটো বিষয় নিয়ে মনোমালিন্য তাদের নিয়মিত সঙ্গী ছিল। এক পর্যায়ে তারা স্থানীয় মসজিদের ইমাম সাহেবের কাছে গেলেন পরামর্শের জন্য। ইমাম সাহেব তাদেরকে সুখী দাম্পত্যের মূলমন্ত্র গুলো বুঝিয়ে দিলেন, বিশেষ করে পারস্পরিক সম্মান ও সদাচরণের উপর জোর দিলেন। তিনি পরামর্শ দিলেন:
- দৈনন্দিন ‘ইবাদতের অংশ হিসেবে দোয়া: একে অপরের জন্য এবং তাদের দাম্পত্য জীবনের স্থায়িত্ব ও সুখের জন্য নিয়মিত দোয়া করা শুরু করুন।
- ‘আলোচনা সভা’ নির্ধারণ: সপ্তাহে অন্তত একবার নির্দিষ্ট সময়ে বসে শান্ত মনে সংসার, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা, বর্তমান চিন্তা নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করুন। কোন অভিযোগ থাকলে কোমল ভাষায় বলুন।
- ছোট ছোট ‘ইহসান’ বা অনুগ্রহ: প্রতিদিন ছোট্ট কোন কাজে একে অপরকে খুশি করার চেষ্টা করুন – ফারজানার জন্য প্রিয় খাবার বানানো, আরিফুলের জন্য তার কাজের ফাইল গুছিয়ে রাখা। রাসূল (সা.) বলেছেন, “তোমরা নিজেদের মধ্যে উপহার আদান-প্রদান কর, তাহলে তোমাদের মধ্যে ভালোবাসা বৃদ্ধি পাবে।” (বুখারী, মুসলিম)।
- পরিবার পরিকল্পনা ও সন্তান প্রতিপালনে সম্মিলিত সিদ্ধান্ত: সন্তান কখন নেবেন, তাদের শিক্ষা-দীক্ষা কীভাবে দেবেন, তা নিয়ে আগে থেকেই আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিন।
এই সহজ নীতিগুলো অনুসরণ করে আরিফুল-ফারজানার সম্পর্কে আসে আমূল পরিবর্তন। মনোমালিন্য কমে যায়, পারস্পরিক বোঝাপড়া বাড়ে। ফারজানা বলেন, “ইমাম সাহেবের পরামর্শে আমরা বুঝলাম, সুখী হওয়ার জন্য বড় কিছু লাগে না। একটু সম্মান, একটু দোয়া, আর প্রতিদিনের ছোট ছোট খেয়াল – এগুলোই আমাদের সংসারে শান্তি এনেছে।”
অন্যদিকে, সিলেট শহরের একটি মিডল-ম্যানেজমেন্ট পেশাজীবী দম্পতি, সাকিব আহমেদ ও জারিন তাসনিম। দুজনেই ব্যস্ত চাকরিজীবী। বাচ্চা একটি। প্রাথমিক জীবনে চাকরি, বাচ্চার দায়িত্ব, গৃহস্থালি কাজ নিয়ে প্রচুর চাপ আর তর্কাতর্কি হতো। তাদের জীবনেও সুখী দাম্পত্যের মূলমন্ত্র হিসেবে কাজ করেছে দায়িত্বের ন্যায়সঙ্গত বণ্টন ও আর্থিক স্বচ্ছতা। তারা কী করলেন?
- দায়িত্বের স্পষ্ট তালিকা: বাড়ির কাজ (রান্না, কাপড় ধোয়া, ঘর পরিষ্কার, বাজার), বাচ্চার যত্ন (স্কুলে আনা-নেয়া, পড়াশোনায় সাহায্য, ডাক্তার-হাসপাতাল), আর্থিক বিষয়াদি (বিল পরিশোধ, সঞ্চয়, বিনিয়োগ) – প্রতিটির জন্য কে প্রাথমিকভাবে দায়ী বা কীভাবে ভাগাভাগি হবে, তা লিখিতভাবে ঠিক করলেন। ইসলামে স্বামীর আর্থিক দায়িত্ব থাকলেও স্ত্রীর সচ্ছলতা বা ইচ্ছা থাকলে তার আয় সংসারে যুক্ত করা এবং তা নিয়ে স্বচ্ছ আলোচনা সুখী দাম্পত্যের মূলমন্ত্র এর আধুনিক প্রয়োগ।
- যৌথ ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ও বাজেটিং: একটি যৌথ অ্যাকাউন্ট খোলা হল যেখানে উভয়ের আয়ের একটি নির্দিষ্ট অংশ জমা হয় সংসারের চলতি খরচ, সঞ্চয় ও বিনিয়োগের জন্য। মাসিক বাজেট তৈরি করা হয় এবং তা নিয়ে উভয়ে আলোচনা করেন। আর্থিক স্বচ্ছতা বিশ্বাসকে সুদৃঢ় করে।
- ‘আমার সময়’ ও ‘আমাদের সময়’: সপ্তাহে কিছু সময় শুধু নিজের জন্য (পড়া, বিশ্রাম, বন্ধুদের সাথে দেখা), কিছু সময় শুধু পার্টনারের সাথে (কফি খাওয়া, হাঁটাহাঁটি, গল্প করা), এবং কিছু সময় পরিবারের সাথে কাটানোর জন্য নির্ধারণ করা। এটি ব্যক্তিগত স্পেস ও দাম্পত্য বন্ধন উভয়কেই সতেজ রাখে।
- শ্বশুরবাড়ি-স্বামীর বাড়ির সাথে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক: উভয় পক্ষের পরিবারের সাথে সদাচরণ ও নিয়মিত যোগাযোগ রাখা, কিন্তু নিজেদের ছোট্ট পরিবারটিকেই প্রাধান্য দেওয়া। রাসূল (সা.)-এর নির্দেশ “মায়ের পায়ের নিচে সন্তানের বেহেশত” (আহমদ, নাসাঈ) এবং স্ত্রীর অধিকারের ব্যাপারে সতর্কবাণী উভয়কেই সমান গুরুত্ব দেওয়া।
সাকিব বলেন, “আগে টাকা-পয়সা আর কে কী করলো না করলো নিয়েই ঝামেলা হতো। এখন দায়িত্ব ভাগ করে নেওয়ায় চাপ কমেছে। যৌথ অ্যাকাউন্ট থাকায় টাকার ব্যাপারে কোন গোপনীয়তা বা সন্দেহ থাকে না।” জারিন যোগ করেন, “আমাদের ‘আমাদের সময়’ খুব গুরুত্বপূর্ণ। সপ্তাহে একদিন বাচ্চাটাকে বাবা-মায়ের কাছে রেখে আমরা বাইরে গিয়ে খাই, গল্প করি। এটা আমাদেরকে আবার কাছাকাছি এনে দেয়।” তাদের অভিজ্ঞতা প্রমাণ করে, ইসলামের মূলনীতিগুলোকে আধুনিক প্রেক্ষাপটে বুদ্ধিমত্তার সাথে প্রয়োগ করাই হল সুখী দাম্পত্যের মূলমন্ত্র কে ধারণ করার সঠিক পথ।
আধুনিক যুগের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ইসলামিক দিকনির্দেশনা
বাংলাদেশের দ্রুত পরিবর্তনশীল সমাজ ব্যবস্থা, নগরায়ন, নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন, প্রযুক্তির প্রভাব এবং পাশ্চাত্য সংস্কৃতির অনুপ্রবেশ দাম্পত্য জীবনে নতুন নতুন জটিলতা ও চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। এই চ্যালেঞ্জগুলোর মাঝেও সুখী দাম্পত্যের মূলমন্ত্র এর আলোকেই খুঁজে নিতে হবে ভারসাম্য ও সমাধানের পথ।
- দুই কর্মজীবী পাত্র-পাত্রী: দায়িত্বের ভারসাম্য ও পারস্পরিক সমর্থন: যখন উভয়েই কর্মজীবী, তখন সংসার, সন্তান লালন-পালন ও ক্যারিয়ার সামলানো বড় চ্যালেঞ্জ। এখানে ইসলামের ন্যায়নীতি ও দায়িত্ববোধই পথ দেখায়। স্বামী-স্ত্রী উভয়ের ক্যারিয়ারকে সম্মান করতে হবে। স্ত্রীর আয় সংসারের সম্পদ, শুধু তার ব্যক্তিগত নয়। গৃহস্থালি কাজ ও সন্তান লালন-পালনের দায়িত্ব উভয়কেই ভাগ করে নিতে হবে সামর্থ্য ও সময় অনুযায়ী। কে কোন দিন রান্না করবে, কে বাচ্চাকে স্কুলে নিয়ে যাবে – এগুলো নিয়ে পূর্ব-সমঝোতা প্রয়োজন। স্ত্রীর ক্যারিয়ারে অগ্রগতির জন্য স্বামীর উৎসাহ ও প্রাতিষ্ঠানিক সহযোগিতা (যেমন, বাচ্চার দেখাশোনার ব্যবস্থা করা) সুখী দাম্পত্যের মূলমন্ত্র এরই অংশ। রাসূল (সা.) খাদিজা (রা.)-এর ব্যবসায়িক সাফল্যে কখনও বাধা হননি, বরং সহযোগিতা করেছিলেন।
- প্রযুক্তির ব্যবহার ও অপব্যবহার: সীমারেখা নির্ধারণ: স্মার্টফোন, সোশ্যাল মিডিয়া দাম্পত্য জীবনে নতুন মাত্রা যোগ করলেও এগুলো সম্পর্কের জন্য হুমকিও বটে। অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম, গোপনীয়তা রক্ষায় ব্যর্থতা, অসৎ উদ্দেশ্যে সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার, অনলাইনে অপরিচিত বিপরীত লিঙ্গের সাথে অতিমাত্রায় যোগাযোগ – এসব বিষয় বিশ্বাস ভেঙে দিতে পারে। ইসলামে বিশ্বস্ততা (আমানত) ও লজ্জাশীলতা (হায়া) অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সুখী দাম্পত্যের মূলমন্ত্র এর দাবি হল:
- একে অপরের গোপনীয়তা (Privacy) সম্মান করা, তবে গোপনীয়তা যেন গোপন আচরণে রূপ না নেয়।
- সোশ্যাল মিডিয়ায় অপ্রয়োজনীয় বিপরীত লিঙ্গের বন্ধুত্ব এড়িয়ে চলা।
- দৈনিক স্ক্রিন টাইমের সীমা নির্ধারণ করা এবং পার্টনারের সাথে প্রকৃত সময় কাটানোর জন্য নির্দিষ্ট সময়ে ডিভাইস দূরে রাখা।
- অনলাইনে যা পোস্ট করা হয়, তা যেন পার্টনারকে কষ্ট না দেয় বা সম্পর্কের জন্য ক্ষতিকর না হয়।
- সন্দেহের বশে গোপনে ফোন চেক না করা। বরং খোলামেলা আলোচনা করা। রাসূল (সা.) বলেছেন, “সন্দেহ থেকে দূরে থাকো। কেননা সন্দেহই সর্বাধিক মিথ্যা কথা।” (বুখারী)।
- প্রজন্মগত ব্যবধান ও শ্বশুরবাড়ির ভূমিকা: যৌথ পরিবারের প্রথা কমলেও শ্বশুরবাড়ির প্রভাব অনেক ক্ষেত্রেই দাম্পত্য জীবনে প্রভাব ফেলে। ইসলাম উভয় পক্ষের অধিকার ও কর্তব্য স্পষ্ট করেছে।
- স্ত্রীর অধিকার: স্বামীর প্রথম দায়িত্ব তার স্ত্রীর প্রতি। স্ত্রীর নিজস্ব গৃহে স্বাধীনভাবে ও সম্মানের সাথে বসবাসের অধিকার রয়েছে (সূরা আত-তালাক, ৬৫:৬)। স্বামীর উচিত তার স্ত্রীকে তার পরিবারের কাছ থেকে সুরক্ষা দেওয়া এবং তার প্রতি অন্যায় আচরণ করা থেকে পরিবারকে বিরত রাখা। স্ত্রীর উচিত স্বামীর পিতা-মাতা ও পরিবারের সাথে সদাচরণ করা, তবে তা কোনভাবেই তার মৌলিক অধিকার ও স্বাচ্ছন্দ্যের ক্ষতি করে নয়। রাসূল (সা.) বলেছেন, “সর্বোত্তম পুরুষ তারাই যারা তাদের স্ত্রীদের জন্য সর্বোত্তম।” – এটি শ্বশুরবাড়ির লোকজনের জন্যও প্রযোজ্য।
- স্বামীর কর্তব্য: স্বামীকে তার স্ত্রী ও তার নিজের পিতা-মাতার মধ্যে সুন্দর সম্পর্কের সেতুবন্ধন হিসেবে কাজ করতে হবে। স্ত্রীর প্রতি অন্যায় করে পিতা-মাতার আনুগত্য করা ইসলাম সমর্থন করে না। আবার পিতা-মাতার অবাধ্য হওয়াও চলবে না। এখানে প্রজ্ঞা ও ভারসাম্য প্রয়োজন। স্বামীর উচিত স্ত্রীর ন্যায্য অভিযোগ শোনা এবং তার পক্ষে ন্যায্য কথা বলা। ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ প্রকাশিত “ইসলামে পরিবার ব্যবস্থাপনা” শীর্ষক বইটিতে এ বিষয়ে বিস্তারিত দিকনির্দেশনা রয়েছে।
- সন্তান প্রতিপালন: ইসলামিক মূল্যবোধের সমন্বয়: বাবা-মায়ের মধ্যে সুসম্পর্কই সন্তানের জন্য সবচেয়ে বড় শিক্ষা। সুখী দাম্পত্যের মূলমন্ত্র এর ধারাবাহিকতায় সন্তান প্রতিপালনে ইসলামের দিকনির্দেশনা হল:
- ভালোবাসা ও ন্যায়বিচার: সন্তানদের মধ্যে বৈষম্য না করা। রাসূল (সা.) সন্তানদের চুমু খেতে, সাথে নিয়ে হাঁটতে উৎসাহ দিতেন। “যে ছোটদের স্নেহ করে না, সে আমাদের দলভুক্ত নয়।” (তিরমিজি)।
- দ্বীনি শিক্ষা ও চরিত্র গঠন: নামাজ, কুরআন শিক্ষা, সততা, দায়িত্ববোধ, বড়দের সম্মান, ছোটদের স্নেহ করার শিক্ষা দেওয়া। এটি বাবা-মা উভয়ের দায়িত্ব (সূরা আত-তাহরীম, ৬৬:৬)।
- আধুনিক শিক্ষা ও দক্ষতা: দুনিয়াবি জ্ঞান অর্জনে উৎসাহিত করা, যাতে তারা যোগ্য নাগরিক ও মুসলিম হিসেবে গড়ে উঠতে পারে।
- আলোচনা ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক: সন্তানদের কথা মনোযোগ সহকারে শোনা, তাদের সমস্যাগুলো বোঝার চেষ্টা করা এবং ইসলামিক ফ্রেমওয়ার্কের মধ্যে থেকে যৌক্তিক পরামর্শ দেওয়া। এখানে বাবা-মায়ের মধ্যে ঐক্য অপরিহার্য – একজন শাস্তির কথা বললে অন্যজন সান্ত্বনা দেবে না।
এই দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে আমাদের পথ চলা উচিত যে, ‘সুখী দাম্পত্যের মূলমন্ত্র’ কোন গোপন সূত্র নয়, বরং তা উন্মুক্ত রয়েছে কুরআন-হাদিসের পাতায় পাতায়, আমাদের নবীর (সা.) জীবনের প্রতিটি অঙ্গীকারে। এটি প্রেমের অস্থায়ী উন্মাদনা নয়, বরং শ্রদ্ধা, দায়িত্ব, ধৈর্য্য, ক্ষমা এবং সর্বোপরি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একে অপরের সাথে উত্তম আচরণের দীর্ঘস্থায়ী অঙ্গীকার। রিফাত-তানজিমা, আরিফুল-ফারজানা, সাকিব-জারিনের গল্প আমাদের শেখায়, এই মূলমন্ত্রকে আঁকড়ে ধরে, আধুনিকতার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে, প্রজ্ঞা ও ইমান দিয়ে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করলেই কেবল দাম্পত্য জীবন পরিণত হতে পারে জান্নাতের একটি ক্ষুদ্র নমুনায়। আপনার সম্পর্কে যদি ছোটখাটো ফাটলও দেখা দেয়, হতাশ হবেন না। ফিরে যান সেই মৌলিক নীতিগুলোর দিকে। একসাথে বসুন। খোলামেলা আলোচনা করুন। একে অপরের জন্য দোয়া করুন। পেশাদার ইসলামিক কাউন্সেলর বা বিশ্বস্ত আলেমের পরামর্শ নিন। মনে রাখবেন, আল্লাহর রহমতে এবং উভয়ের আন্তরিক প্রচেষ্টায়, ভাঙা সেতুও আবার জোড়া লাগে, শুকনো গাছে আবার ফুল ফোটে। আপনার দাম্পত্য জীবন হোক সুখ, শান্তি ও আল্লাহর নৈকট্যের অনন্ত উৎস।
জেনে রাখুন
-
ইসলামে স্ত্রীর অধিকার কী কী এবং তা সুখী দাম্পত্যের মূলমন্ত্রে কতটা গুরুত্বপূর্ণ?
ইসলামে স্ত্রীর অধিকার অত্যন্ত স্পষ্ট ও সুপ্রতিষ্ঠিত। এর মধ্যে রয়েছে মাহর (বাধ্যতামূলক উপহার), উপযুক্ত বাসস্থান, খাদ্য-পোশাক-চিকিৎসার ব্যবস্থা (নাফাকাহ), ন্যায়সঙ্গত ও সম্মানজনক আচরণ, শারীরিক ও মানসিক নিরাপত্তা, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও স্বাধীনতার প্রতি সম্মান এবং ধর্মীয় অনুশাসন পালনের স্বাধীনতা। এই অধিকারগুলোর প্রতি স্বামীর দায়িত্বশীল আচরণ সুখী দাম্পত্যের মূলমন্ত্র এর অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি। রাসূল (সা.) বলেছেন, “তোমাদের স্ত্রীদের উপর তোমাদের যেমন অধিকার রয়েছে, তেমনি তোমাদের উপরও তাদের অধিকার রয়েছে।” (তিরমিজি)। অধিকার আদায় না হলে সম্পর্কে টানাপোড়েন সৃষ্টি হয়। -
দাম্পত্য জীবনে কলহ বা ঝগড়া হলে ইসলামিক পদ্ধতিতে তা সমাধান করার উপায় কী?
দাম্পত্য কলহ নিরসনে ইসলাম বেশ কিছু কার্যকরী পদ্ধতি দেয়:- ধৈর্য্য ধারণ ও ক্ষমা প্রদর্শন: রাগ নিয়ন্ত্রণ করা এবং ক্ষমাশীল মনোভাব পোষণ করা প্রথম পদক্ষেপ।
- খোলামেলা ও শান্ত আলোচনা: অভিযোগগুলো কোমল ভাষায়, সম্মান রেখে উপস্থাপন করা এবং মনোযোগ সহকারে শোনা।
- পরিবারের বয়োজ্যেষ্ঠ বা অভিজ্ঞজনের পরামর্শ: উভয় পক্ষের আত্মীয় বা সম্মানিত ব্যক্তির পরামর্শ নেওয়া (সূরা আন-নিসা, ৪:৩৫)।
- সাময়িক বিরতি: রাগের মাথায় সিদ্ধান্ত না নিয়ে সাময়িকভাবে আলাদা থাকা (কিন্তু একই ছাদের নিচে)।
- একে অপরের জন্য দোয়া করা: আল্লাহর কাছে সম্পর্কের উন্নতি ও সুখের জন্য প্রার্থনা করা।
এই পদ্ধতিগুলো সুখী দাম্পত্যের মূলমন্ত্র এর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ এবং দীর্ঘস্থায়ী সমাধানের পথ দেখায়।
-
আর্থিক সমস্যা দাম্পত্য জীবনে প্রভাব ফেললে ইসলাম কী পরামর্শ দেয়?
আর্থিক সংকট দাম্পত্য জীবনে বড় চাপ সৃষ্টি করতে পারে। ইসলাম এ ক্ষেত্রে নিম্নলিখিত পরামর্শ দেয়:- সন্তুষ্টি ও ধৈর্য্য (কানা’আহ ওয়া সবর): যা আছে তাতেই সন্তুষ্ট থাকা এবং আল্লাহর উপর ভরসা রাখা। রাসূল (সা.) দারিদ্র্যের মধ্যেও সুখী সংসার পরিচালনার দৃষ্টান্ত রেখেছেন।
- আর্থিক স্বচ্ছতা ও পরিকল্পনা: আয়-ব্যয়ের পূর্ণ স্বচ্ছতা বজায় রাখা। একসাথে বাজেট তৈরি করা এবং অপ্রয়োজনীয় খরচ কমানো।
- উভয়ের অংশগ্রহণ ও সহযোগিতা: স্ত্রী চাইলে এবং সামর্থ্য থাকলে উপার্জনে সহায়তা করতে পারেন। স্বামীকেও গৃহস্থালি কাজে সহযোগিতা করতে হবে। একে অপরের প্রতি দোষারোপ না করে সম্মিলিতভাবে সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করা।
- হালাল রুজি ও দান-সদকা: হালাল পথে আয় নিশ্চিত করা এবং নিয়মিত দান-সদকা করা। আল্লাহ ওয়াদা করেছেন, সদকা সম্পদ কমায় না বরং বাড়ায়।
এই নীতিগুলো অনুসরণ করলে আর্থিক সমস্যা সুখী দাম্পত্যের মূলমন্ত্র কে ভেঙে ফেলতে পারবে না।
-
শ্বশুরবাড়ির লোকজনের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখা সুখী দাম্পত্যের মূলমন্ত্রের অংশ কীভাবে?
শ্বশুরবাড়ির সাথে সুসম্পর্ক সুখী দাম্পত্যের মূলমন্ত্র এর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তবে তা যেন স্ত্রীর অধিকার লঙ্ঘন না করে। ইসলাম স্ত্রীকে স্বামীর পিতা-মাতার প্রতি সম্মান ও সদাচরণের নির্দেশ দেয় (তবে তাদের আনুগত্য নয়)। আবার স্বামীকেও তার স্ত্রীকে তার পরিবারের কাছ থেকে সুরক্ষা দিতে হবে এবং তার প্রতি অন্যায় করা থেকে বিরত রাখতে হবে। স্ত্রীর উচিত সাধ্য অনুযায়ী সাহায্য করা ও ভালো ব্যবহার করা। স্বামীর উচিত তার পরিবারকে স্ত্রীর ভালো ব্যবহারের গুরুত্ব বোঝানো এবং স্ত্রীর প্রতি তাদের সম্মান দেখানো। পারস্পরিক সম্মান ও সীমারেখা রক্ষার মাধ্যমে এই সম্পর্ক সুখী দাম্পত্যের সহায়ক শক্তি হয়ে উঠতে পারে। -
সন্তানদেরকে সুখী দাম্পত্যের মূলমন্ত্র কীভাবে শেখানো যায়?
সন্তানরা বাবা-মায়ের আচরণ থেকেই সবচেয়ে বেশি শেখে। সুখী দাম্পত্যের মূলমন্ত্র এর শিক্ষা দেওয়ার সর্বোত্তম উপায় হল:- রোল মডেল হওয়া: বাবা-মায়ের মধ্যে পরস্পরের প্রতি সম্মান, ভালোবাসা, কোমল ভাষা, ধৈর্য্য, ক্ষমা ও সহযোগিতা দেখলে সন্তানরা স্বাভাবিকভাবেই তা শিখে যায়।
- খোলামেলা আলোচনা: বয়স উপযোগীভাবে তাদের সাথে ইসলামিক দৃষ্টিকোণ থেকে দাম্পত্য জীবনের গুরুত্ব, অধিকার-কর্তব্য নিয়ে কথা বলা।
- ইসলামিক শিক্ষা: সন্তানদেরকে কুরআন-হাদিসের সেই সব বাণী শেখানো যা পারিবারিক বন্ধন, পিতা-মাতার প্রতি সদাচরণ, স্বামী-স্ত্রীর অধিকার সম্পর্কে বলে।
- চরিত্র গঠন: সন্তানদের মধ্যে ন্যায়বোধ, দায়িত্ববোধ, সহানুভূতি, ধৈর্য্য ও ক্ষমার গুণাবলী গড়ে তোলা, যা ভবিষ্যতে তাদের নিজেদের দাম্পত্য জীবনের ভিত্তি হবে।
সুখী দাম্পত্যের মূলমন্ত্রের বীজ বপিত হয় শৈশব থেকেই।
- আধুনিক সমাজে ইসলামিক দাম্পত্য নীতিগুলো প্রয়োগ করার প্রধান বাধা কী কী এবং তা কীভাবে কাটিয়ে উঠা যায়?
প্রধান বাধাগুলোর মধ্যে রয়েছে:- ধর্মীয় জ্ঞানের অভাব: অনেক দম্পতি ইসলামের দাম্পত্য সংক্রান্ত স্পষ্ট নির্দেশনা সম্পর্কে ভালোভাবে জানেন না।
- পাশ্চাত্য সংস্কৃতির প্রভাব: ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যবোধের অতিরিক্ত চর্চা, পারস্পরিক দায়িত্ববোধের অবমূল্যায়ন, ভোগবাদিতা।
- অর্থনৈতিক চাপ: জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধি সম্পর্কে চাপ সৃষ্টি করে।
- প্রযুক্তির অপব্যবহার: সামাজিক মাধ্যম সম্পর্কের বিশ্বাস ও সময়কে ক্ষতিগ্রস্ত করে।
- পরিবারের অত্যধিক হস্তক্ষেপ: শ্বশুরবাড়ি বা নিজ পরিবারের অযাচিত হস্তক্ষেপ।
সমাধানের উপায়: - ইলম অর্জন: দম্পতির উভয়ের ইসলামিক দাম্পত্য অধিকার, দায়িত্ব ও আদব-কায়দা সম্পর্কে জ্ঞানার্জন করা। মসজিদভিত্তিক প্রশিক্ষণ, ইসলামিক সেমিনার, নির্ভরযোগ্য ওয়েবসাইট (ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের ওয়েবসাইটের কিছু রিসোর্স দেখুন)।
- ইসলামিক মূল্যবোধের চর্চা: ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক জীবনে ইসলামিক আদর্শকে অগ্রাধিকার দেওয়া।
- যোগাযোগ ও সমঝোতা: নিয়মিত, খোলামেলা ও সম্মানজনক যোগাযোগের মাধ্যমে সমস্যা চিহ্নিতকরণ ও সমাধান।
- সীমারেখা নির্ধারণ: প্রযুক্তি ব্যবহারের সীমা, পরিবারের সাথে সম্পর্কের সীমারেখা (Boundaries) স্থাপন করা।
- ইসলামিক কাউন্সেলিং সেবা গ্রহণ: প্রয়োজনে অভিজ্ঞ আলেম বা ইসলামিক ফ্যামিলি কাউন্সেলরের সাহায্য নেওয়া।
সচেতনতা, ইচ্ছাশক্তি ও আল্লাহর উপর ভরসা রাখার মাধ্যমেই এই বাধাগুলো অতিক্রম করা সম্ভব।
এই দৃঢ় বিশ্বাস নিয়ে আমাদের পথ চলা উচিত যে, ‘সুখী দাম্পত্যের মূলমন্ত্র’ কোন গোপন সূত্র নয়, বরং তা উন্মুক্ত রয়েছে কুরআন-হাদিসের পাতায় পাতায়, আমাদের নবীর (সা.) জীবনের প্রতিটি অঙ্গীকারে। এটি প্রেমের অস্থায়ী উন্মাদনা নয়, বরং শ্রদ্ধা, দায়িত্ব, ধৈর্য্য, ক্ষমা এবং সর্বোপরি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একে অপরের সাথে উত্তম আচরণের দীর্ঘস্থায়ী অঙ্গীকার। রিফাত-তানজিমা, আরিফুল-ফারজানা, সাকিব-জারিনের গল্প আমাদের শেখায়, এই মূলমন্ত্রকে আঁকড়ে ধরে, আধুনিকতার চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে, প্রজ্ঞা ও ইমান দিয়ে বাস্তব জীবনে প্রয়োগ করলেই কেবল দাম্পত্য জীবন পরিণত হতে পারে জান্নাতের একটি ক্ষুদ্র নমুনায়। আপনার সম্পর্কে যদি ছোটখাটো ফাটলও দেখা দেয়, হতাশ হবেন না। ফিরে যান সেই মৌলিক নীতিগুলোর দিকে। একসাথে বসুন। খোলামেলা আলোচনা করুন। একে অপরের জন্য দোয়া করুন। পেশাদার ইসলামিক কাউন্সেলর বা বিশ্বস্ত আলেমের পরামর্শ নিন। মনে রাখবেন, আল্লাহর রহমতে এবং উভয়ের আন্তরিক প্রচেষ্টায়, ভাঙা সেতুও আবার জোড়া লাগে, শুকনো গাছে আবার ফুল ফোটে। আপনার দাম্পত্য জীবন হোক সুখ, শান্তি ও আল্লাহর নৈকট্যের অনন্ত উৎস।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।