অনল চৌধুরী : পৃথিবীর সব মানুষ সুখী হতে চায়। মানুষের সব চেষ্টাই সুখী হওয়ার জন্য। কিন্তু সুখের প্রকৃত সংজ্ঞা না জানার কারণেই সুখের সব উপকরণ নিজেদের কাছে থাকার পরও অধিকাংশের মানুষ চরম অসুখী জীবন যাপন করছে। বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষের ধারণা, সুখী হওয়ার একমাত্র পথ হচ্ছে অনেক অর্থ-সম্পদের মালিক হওয়া। জনগণের বড় একটা অংশ চুরি-ঘুষ-দুর্নীতি, সিন্ডিকেটবাজি-বিদেশে টাকা পাচার এবং এবং দেশের জনগণকে তাদের প্রাপ্য থেকে বঞ্চিত করে সুখী হতে চায়। বাস্তবে দেখা যাবে, এভাবে অসত্পথে আয়ের মাধ্যমে তারা বিলাসবহুল জীবন কাটাতে পারলেও তাদের অধিকাংশই মানসিকভাবে চরম অসুখী।
একজন অনাহারী বা গৃহহীন অবশ্যই নিজেকে সুখী ভাবতে পারে না। কিন্তু মৌলিক চাহিদা পূরণের পর অর্থসম্পদ বা বিলাসবহুল জীবনযাপন কাউকে সুখী হওয়ার নিশ্চয়তা দেয় না। একতলা বাড়িতে থেকে যদি কেউ সুখী না হয়, তাহলে অসত্ পথের উপার্জনে ১০ বা ২০ তলা ভবনের মালিকানা বা বসবাস তাকে সুখী করতে পারবে না।
ব্যক্তি অনুযায়ী সুখের মানদণ্ড একেক রকম। বিলাসী জীবনে অভ্যস্ত রাজপুত্র সিদ্ধার্থও মানুষের দুঃখ-কষ্ট দেখে এসব নিবারণের উদ্দেশ্যে রাজপ্রাসাদ, বাবা-মা, সুন্দরী স্ত্রী ও পুত্রকে ছেড়ে গৃহত্যাগী সন্ন্যাসী হয়েছিলেন। ১৯৯৫ সালে গরিব বাংলাদেশের জনগণ পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী বলে গবেষণায় প্রকাশিত হয়েছিল, যদিও সেই সময় এদেশের জনগণের মাথাপিছু আয় ছিল বর্তমানের চেয়ে অনেক কম।
World Happiness Report-এর ২০২৩ সালের জরিপ অনুযায়ী পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী প্রথম ১০টা দেশের তালিকায় ফিনল্যান্ড, নরওয়ে, সুইডেন, ডেনমার্কের মতো উচ্চ আয়ের দেশের নাম যেমন আছে, তেমনই আছে দরিদ্র ভুটানের নাম। কারণ সে দেশের মানুষ বিলাসী জীবনযাপনকে সুখের উপকরণ মনে করে না। আইনের শাসন, অপরাধ ও দুর্নীতি স্বল্পতা, পরিচ্ছন্ন পরিবেশ এবং জনগণের মধ্যে পারষ্পরিক সুসম্পর্ক এসব দেশের সুখী হওয়ার প্রধান কারণ। কিন্তু প্রায় একইরকম বা বেশি প্রাচুর্য ও ধন-সম্পদের দেশ হওয়ার পরও প্রথম ১০ সুখী দেশের তালিকায় যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স এবং কানাডার নাম নেই। কারণ দেশগুলোর জনগণের প্রাচুর্য থাকলেও মানসিক শান্তি নাই। মানবজাতির ওপর অশান্তি সৃষ্টি করে পৃথিবীতে কেউ সুখে থাকতে পারে না। বর্তমানে মাথাপিছু আয় অনেক বৃদ্ধি পাওয়া বাংলাদেশের স্থান ১৪৫ দেশের মধ্যে ১১৮।
প্রবাদই আছে—স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। শরীর সুস্থ না থাকলে পৃথিবীর কোনো কিছুতেই শান্তি পাওয়া যায় না। শত বা হাজার কোটি টাকা থাকার পরও যেসব লোক বড় ধরনের শারীরিক বা মানসিক সমস্যায় ভুগছেন, তারা যে কতোটা অসুখী জীবনযাপন করেন, সেটা তারাই সবচেয়ে ভালো জানেন। মানুষের সুখের অন্যতম শত্রু হচ্ছে লোভ, হিংসা ও পরশ্রীকাতরতা। বিশেষ করে লোভী ও ঈর্ষাপরায়ণ ব্যক্তি জীবনে কোনোদিনও সুখী হতে পারে না। নিজের যোগ্যতা নিয়ে অসন্তুষ্ট ব্যক্তি তাদের চেয়ে যোগ্য ব্যক্তিদের ক্ষতি সাধনের জন্য দিন-রাত চেষ্টা করে শেষ পর্যন্ত নিজেরই চরম ক্ষতি করে—সমাজ ও রাষ্ট্রে এর অগণিত উদাহরণ আছে।
জাগতিক সুখের জন্য ঘুষ-দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদ অর্জন নিজের ও পরিবারের মারাত্মক ক্ষতির কারণ হয়। অসত্ পথে আয় করা একটা পর্যায়ে নেশায় পরিণত হয়। তখন চোখের সামনে নিজের সন্তান ও পরিবার ধ্বংস হয়ে যেতে দেখেও মানুষ এই নেশা থেকে মুক্ত হতে পারে না। এক জীবনে ভোগ করতে পারবে না জেনেও শত বা হাজার কোটি টাকা দুর্নীতি এবং বিদেশে পাচারের ফলে শুধু দেশের জনগণকে প্রাপ্য অধিকার থেকে বঞ্চিত করা ছাড়া আর কোনো লাভ হয় না।
এজন্য সুখী হতে হলে সবার আগে সুখের সংজ্ঞা জানা জরুরি। সুস্বাস্থ্য, জ্ঞানচর্চা, পারিবারিক শান্তি, সত্ সঙ্গ, অন্যায়-অপরাধ থেকে বিরত থাকা, কল্যাণমূলক চিন্তা-কর্ম ও মানবতার সেবা—এসবই সুখী হওয়ার উপায় বলে যুগে যুগে সব দাশনিক, ধর্ম প্রচারক ও জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিরা বলে গেছেন।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।