সকালের কোমল রোদ্দুরে ঢাকার মোহাম্মদপুরের একটি ছোট্ট ফ্ল্যাটে ফারহানা ও আরিফুলের দৈনন্দিন জীবন শুরু হয় এক কাপ চায়ের আড্ডা দিয়ে। দশ বছর পার করেও তাদের চোখে এখনও সেই প্রথম দেখা পাওয়ার উজ্জ্বলতা। প্রতিবেশীরা প্রায়ই জিজ্ঞেস করে, “এত বছরেও এই ভালোবাসা, এই শান্তি কীভাবে ধরে রেখেছো?” ফারহানার উত্তরটি সরল, গভীর: “আমাদের বিয়েটাই তো শুরু হয়েছিল সুন্নতি বিয়ে দিয়ে। রাসূল (সা.)-এর দেখানো পথে একসঙ্গে হাঁটার অঙ্গীকারই তো আমাদের ভিত মজবুত করেছে।” এই অল্প কথায় লুকিয়ে আছে দাম্পত্য জীবনের এক গভীর সত্য – যে বিয়ে ইসলামের বিধান ও সুন্নাহর আলোকে সম্পন্ন হয়, তা শুধু একটি সামাজিক চুক্তি নয়; তা হয় দুটি আত্মার, দুটি পরিবারের, এবং সর্বোপরি আল্লাহর সন্তুষ্টির লক্ষ্যে এক পবিত্র মিলন, যা দুনিয়া ও আখিরাতের সফলতার ভিত্তি স্থাপন করে।
সুন্নতি বিয়ে: ইসলামী দৃষ্টিকোণে একটি অবশ্য কর্তব্য কেন?
“সুন্নতি বিয়ে” শব্দগুচ্ছ শুনলেই মনে হতে পারে এটি নবীজি (সা.)-এর একটি প্রিয় বা অতিরিক্ত আমল মাত্র। কিন্তু ইসলামী শরীয়তের দৃষ্টিতে এর গুরুত্ব অপরিসীম, প্রায় ফরজের কাছাকাছি। কুরআন মজীদে আল্লাহ তাআলা স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “আর তোমাদের মধ্যকার অবিবাহিত নর-নারীদের বিবাহ দাও…” (সূরা আন-নূর, ২৪:৩২)। এই আয়াতটি কেবল বিয়ের অনুমতি নয়, বরং এক ধরনের নির্দেশনা বহন করে। হাদীস শরীফে এর গুরুত্ব আরও স্পষ্ট। প্রিয় নবী হযরত মুহাম্মদ (সা.) ইরশাদ করেন, “হে যুবক সমাজ! তোমাদের মধ্যে যে বিবাহের সামর্থ্য রাখে, সে যেন বিবাহ করে। কেননা বিবাহ দৃষ্টিকে অবনমিত রাখে ও লজ্জাস্থানের হিফাযত করে। আর যে সামর্থ্য রাখে না, সে যেন সাওম (রোজা) পালন করে। কেননা সাওম তার জন্য ঢালস্বরূপ।” (সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম)। এই হাদীসটি সুন্নতি বিয়ের প্রাণকেন্দ্রে যে বিষয়গুলো তুলে ধরে তা হলো:
- শারীরিক ও মানসিক চাহিদার হালাল পূরণ: যৌন চাহিদা মানুষের স্বাভাবিক ও শক্তিশালী প্রবৃত্তি। ইসলাম এটিকে দমন বা অবদমনের পরিবর্তে হালাল পথে পূরণের সুন্দর ব্যবস্থা দিয়েছে বিয়ের মাধ্যমে। এটি ব্যক্তিকে হারাম কাজ (যিনা, ব্যভিচার) থেকে বাঁচায়, সমাজে নৈতিক অবক্ষয় রোধ করে এবং মানসিক স্থিতিশীলতা আনে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদের গবেষণা বারবারই ইঙ্গিত দেয় যে, দাম্পত্য কলহ ও বিচ্ছেদের একটি বড় কারণ হল অবৈধ সম্পর্ক বা সঙ্গীর প্রতি অবিশ্বাস, যা সুন্নতি বিয়ের ভিত্তি ও সততার চর্চা অনেকাংশে প্রতিরোধ করে।
- ধর্মীয় অনুশাসন পালনে সহায়ক: একজন সঙ্গী বা সঙ্গিনী কেবল জীবনসঙ্গী নয়, বরং ধর্মীয় জীবনে উন্নতির সহযাত্রী। তারা একে অপরকে সৎকাজের আদেশ দেয়, অসৎকাজ থেকে নিষেধ করে, নামাজ-রোজা ও অন্যান্য ইবাদতে উৎসাহিত করে। রাসূল (সা.) বলেছেন, “দুনিয়া ভোগের সামগ্রী, আর দুনিয়ার সর্বোত্তম ভোগ্যসামগ্রী হল সতী-সাধ্বী স্ত্রী।” (সহীহ মুসলিম)। একজন নেককার স্ত্রী বা স্বামী অর্জিত হয় সঠিক পন্থায়, সঠিক মানদণ্ডে, অর্থাৎ সুন্নতি বিয়ের মাধ্যমেই।
- পরিবার গঠন ও সমাজের ভিত্তি মজবুতকরণ: সুস্থ, সুন্দর ও নৈতিকতাপূর্ণ সমাজ গঠনের একক হল পরিবার। সুন্নতি বিয়ে থেকে যে পরিবারের সূচনা হয়, সেখানে সন্তানদের ইসলামী আদর্শে লালন-পালন, পারস্পরিক সম্মান, দায়িত্ববোধ ও আল্লাহভীতির শিক্ষা দেওয়ার পরিবেশ তৈরি হয়। এটি সমাজে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নৈতিক মূল্যবোধের প্রসার ঘটায়। চট্টগ্রামের হাটহাজারীতে একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব পরিবার সুন্নতি পদ্ধতি ও ইসলামী বিধান মেনে বিয়ে ও দাম্পত্য জীবন পরিচালনা করে, সেসব পরিবারে সন্তানদের মাদকাসক্তি, জঙ্গিবাদে জড়িয়ে পড়ার হার উল্লেখযোগ্যভাবে কম। বাংলাদেশ সরকারের নারী ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ও ইসলামী মূল্যবোধভিত্তিক পরিবার কাঠামোর গুরুত্ব স্বীকার করে বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে থাকে।
- আধ্যাত্মিক প্রশান্তি ও আল্লাহর নৈকট্য লাভ: একটি হালাল সম্পর্কের মধ্যে দাম্পত্য জীবন যাপন করাও ইবাদতের শামিল। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে স্নেহ, মমতা, সহযোগিতা এবং পারস্পরিক অধিকার আদায়ের মধ্য দিয়ে তারা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের পথে এগিয়ে যায়। রাসূল (সা.) বলেছেন, “তোমাদের কেউ যখন তার স্ত্রীর সাথে মিলিত হয়, সে সওয়াবের অধিকারী হয়।”… সাহাবীরা জিজ্ঞেস করলেন, ‘হে আল্লাহর রাসূল! সে কি তার কামভাব চরিতার্থ করার মাধ্যমেও সওয়াব পাবে?’ তিনি বললেন, ‘তোমরা কি মনে কর, সে যদি তা হারাম পথে চরিতার্থ করত, তাহলে কি সে পাপের অধিকারী হতো না? অনুরূপভাবে হালাল পথে চরিতার্থ করলে সে সওয়াবের অধিকারী হবে।'” (সহীহ মুসলিম)। এই দৃষ্টিকোণ থেকে, সুন্নতি বিয়ে শুধু জাগতিক চাহিদা পূরণই নয়, বরং আখিরাতের সফলতারও একটি গুরুত্বপূর্ণ সোপান।
সুন্নতি বিয়ের মৌলিক স্তম্ভ: কুরআন-সুন্নাহর আলোকে অপরিহার্য পদক্ষেপ
একটি বিয়েকে প্রকৃতপক্ষে “সুন্নতি” করতে হলে শুধু নামকাওয়াস্তে ইসলামী রীতি মানলেই চলবে না। এর জন্য প্রয়োজন কুরআন ও হাদীসে বর্ণিত কয়েকটি অত্যাবশ্যকীয় স্তম্ভের কঠোর অনুসরণ:
ইজাব ও কবুল (প্রস্তাব ও গ্রহণ): এটিই বিয়ের মূল ভিত্তি। সুন্নতি পদ্ধতিতে স্বামী-স্ত্রীর পক্ষ থেকে (অথবা তাদের আইনানুগ ওয়াকিলের মাধ্যমে) সুস্পষ্ট শব্দে বিয়ের প্রস্তাব (ইজাব) দেওয়া হয় এবং অপর পক্ষ তা গ্রহণ (কবুল) করে। এই প্রস্তাব ও গ্রহণ এমনভাবে হতে হবে যা শুনে উপস্থিত সাক্ষীরা বুঝতে পারে যে বিয়ে সংঘটিত হচ্ছে। “ফুলান বিনতে ফুলানের সাথে ফুলান ইবনে ফুলানের বিয়ে দিলাম এত দেনমোহরের বিনিময়ে” – এ ধরনের বাক্য ইজাব। এর জবাবে “আমি কবুল করলাম” বলাই কবুল। এই ইজাব-কবুল অবশ্যই একই বৈঠকে, একই স্থানে এবং নির্ধারিত সাক্ষীদের উপস্থিতিতে সম্পন্ন হতে হবে। আজকাল অনেক অনুষ্ঠানে দেখা যায়, ইজাব-কবুলের আগেই দম্পতির হাতে মেহেদি, গায়ে হলুদ এমনকি বরযাত্রার আনুষ্ঠানিকতা শেষ হয়ে যায় – যা সুন্নতের পরিপন্থী। ইজাব-কবুলই হচ্ছে বিয়ের আসল আনুষ্ঠানিকতা; এর আগে অন্য কোনো রসম পালন করা ঠিক নয়। রাসূল (সা.) নিজেই বলেছেন, “সর্বজনবিদিত ঘোষণা ছাড়া কোন বিবাহ নেই।” (সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীসটি হাসান)।
দেনমোহর (মহর): দেনমোহর হল স্ত্রীর অধিকার, স্বামীর উপর ফরজ। এটি বিয়ের চুক্তির একটি অপরিহার্য অংশ। দেনমোহর নির্ধারণ ও আদায় করা সুন্নতি বিয়ের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। আল্লাহ তাআলা বলেন, “আর তোমরা স্ত্রীদেরকে তাদের মোহর খুশি মনে আদায় করে দাও…” (সূরা আন-নিসা, ৪:৪)। দেনমোহরের পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে বিয়ের চুক্তির সময়ই, স্পষ্ট ভাষায়। এটি হতে পারে নগদ অর্থ, সোনা-রূপা, জমি বা অন্য কোনো মূল্যবান বস্তু। দেনমোহর স্ত্রীর আর্থিক নিরাপত্তা ও মর্যাদার প্রতীক। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, বাংলাদেশের অনেক অঞ্চলে দেনমোহরকে নামমাত্র বা প্রতীকী করে রাখা হয়, বা শুধু কাগজে-কলমে লিখে আদায় করা হয় না। এটা সুন্নতের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। রাসূল (সা.) তাঁর কন্যাদের এবং সাহাবীদের কন্যাদের দেনমোহর আদায়ের ব্যাপারে কঠোর নির্দেশ দিয়েছেন। দেনমোহর অবিলম্বে আদায় করা উত্তম। যদি তা সম্ভব না হয়, তবে তা পরিশোধের অঙ্গীকার স্পষ্ট থাকতে হবে এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আদায় করতে হবে। দেনমোহর নিয়ে টালবাহানা বা অস্বীকার করা মারাত্মক গুনাহের কাজ।
সাক্ষী (শাহিদ): ইসলামী শরীয়তে কোনো বিয়েই সাক্ষী ছাড়া বৈধ নয়। কমপক্ষে দু’জন সাক্ষীর উপস্থিতি আবশ্যক। এই সাক্ষীদের হতে হবে প্রাপ্তবয়স্ক, সুস্থ মস্তিষ্কের, মুসলিম পুরুষ, অথবা একজন পুরুষ ও দু’জন নারী (যদি পুরুষ সাক্ষী পাওয়া না যায়)। তাদের বিয়ের ইজাব-কবুল শুনতে হবে এবং বুঝতে হবে যে একটি বিয়ের চুক্তি সম্পন্ন হচ্ছে। সাক্ষীর ভূমিকা শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়; তারা এই পবিত্র চুক্তির সাক্ষ্য বহন করবে। রাসূল (সা.) বলেছেন, “সাক্ষী ব্যতীত কোন বিবাহ নেই…” (সুনানে তিরমিযী, হাদীসটি হাসান)। গোপনে বা সাক্ষী ছাড়া সম্পন্ন বিয়ে ইসলামে অবৈধ। বর্তমানে অনলাইনে বা ফোনে সম্পন্ন বিয়েকে অনেকেই ‘সুন্নতি’ বলে দাবি করেন, কিন্তু সঠিক সাক্ষী ছাড়া এবং উপযুক্ত পরিবেশে ইজাব-কবুল না হলে তা শরীয়তসম্মত হয় না।
ওয়ালি (বর বা কনের অভিভাবক): কনের জন্য একজন ওয়ালির (অভিভাবক) উপস্থিতি বা সম্মতি সুন্নতি বিয়ের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত। সাধারণত কনের বাবাই তার ওয়ালি। বাবা না থাকলে দাদা, ভাই, চাচা প্রমুখ নিকটাত্মীয়রা ধারাক্রমে ওয়ালির দায়িত্ব পালন করবেন। ওয়ালির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিনি কনের সর্বোত্তম স্বার্থে বিয়ে দেওয়ার দায়িত্বে থাকেন, যাতে কনে কোনো প্রলোভন বা চাপে পড়ে তার ক্ষতি করে এমন বিয়েতে সম্মত না হয়। রাসূল (সা.) বলেছেন, “ওয়ালি ছাড়া কোন বিবাহ নেই।” (সুনানে আবু দাউদ, সুনানে তিরমিযী – হাদীসটি সহীহ)। তবে এখানে স্পষ্ট করা দরকার, কনের সম্মতি ছাড়া ওয়ালি তাকে জোরপূর্বক বিয়ে দিতে পারবেন না। কনের পূর্ণ ও স্বাধীন সম্মতিই মুখ্য। ওয়ালির ভূমিকা হল সম্মতি দেওয়া এবং প্রক্রিয়াটি সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা।
- সর্বসাধারণ্যে ঘোষণা (ইলান): বিয়ে একটি সামাজিক চুক্তি। তাই এটিকে গোপন না রেখে প্রকাশ্যে ঘোষণা করা সুন্নত। রাসূল (সা.) বলেছেন, “তোমরা বিবাহকে ঘোষণা কর।” (সুনানে ইবনে মাজাহ)। ওয়ালিমার আয়োজন করা এই ঘোষণারই অংশ। সামর্থ্য অনুযায়ী আত্মীয়-স্বজন, পাড়া-প্রতিবেশীদের দাওয়াত দিয়ে খাওয়ানো রাসূল (সা.)-এর গুরুত্বপূর্ণ সুন্নত। এটি সমাজে সম্পর্কের বন্ধন দৃঢ় করে এবং নতুন দম্পতির জন্য দোয়ার পরিবেশ সৃষ্টি করে। খুলনার এক যুবক শফিকুল ইসলামের অভিজ্ঞতা: “আমার বিয়েতে ওয়ালিমা করেছিলাম খুব সাধারণভাবে, শুধু কাছের আত্মীয়দের নিয়ে। কিন্তু গরিব প্রতিবেশীরা অনেকেই আসতে পারেনি। পরে পাড়ার এক বুজুর্গ আমাকে ডেকে বললেন, ‘বেটা, রাসূল (সা.) তো গরিব-ধনী সবাইকে দাওয়াত দিতে বলেছেন। এতে বরকত হয়।’ পরের বছর আমার ব্যবসায় অকল্পনীয় উন্নতি হয়। আমি এখন বিশ্বাস করি, ওই ওয়ালিমার ঘাটতির কারণে আল্লাহর রহমত পুরোপুরি পাইনি।”
সুন্নতি বিয়ের সুফল: দুনিয়া ও আখিরাতের সফলতা
সুন্নতি বিয়ের পথে পা বাড়ানোর অর্থ শুধু একটি আনুষ্ঠানিকতা সম্পন্ন করা নয়; বরং এর সুদূরপ্রসারী সুফল ব্যক্তিগত, পারিবারিক, সামাজিক ও আধ্যাত্মিক জীবনে পরিব্যাপ্ত:
- আল্লাহর সন্তুষ্টি ও রাসূলের আনুগত্য: এটি সর্বপ্রথম ও সর্বশ্রেষ্ঠ সুফল। বিয়ের মাধ্যমে একজন মুসলিম তার প্রভুর নির্দেশ পালন করেন এবং তাঁর প্রিয় হাবীব (সা.)-এর সুন্নতের অনুসরণ করেন। এই আনুগতিই হল সবচেয়ে বড় সফলতা। কুরআনে বলা হয়েছে, “আর আল্লাহর আনুগত্য কর ও রাসূলের আনুগত্য কর…” (সূরা আল-ইমরান, ৩:৩২)। সুন্নতি বিয়ে এই আনুগত্যেরই একটি বাস্তব প্রকাশ।
- শারীরিক, মানসিক ও আত্মিক সুস্থতা: হালাল উপায়ে যৌন চাহিদা পূরণ মানসিক চাপ, উদ্বেগ, হতাশা এবং বিভিন্ন মানসিক ব্যাধি থেকে মুক্তি দেয়। এটি আত্মসম্মানবোধ বজায় রাখে এবং আল্লাহভীতি বৃদ্ধি করে। হারাম সম্পর্কের ফলে সৃষ্ট অপরাধবোধ, সামাজিক নিন্দা ও স্বাস্থ্যঝুঁকি থেকে মুক্তির নিশ্চয়তা দেয়। ঢাকার সাইকোথেরাপিস্ট ড. সেলিনা হোসেন তার গবেষণায় দেখেছেন, যারা ধর্মীয় অনুশাসন মেনে বিয়ে করে এবং দাম্পত্য জীবন পরিচালনা করে, তাদের মধ্যে বিষন্নতা ও উদ্বেগজনিত সমস্যা অনেক কম দেখা যায়।
- স্থিতিশীল ও সুখী পারিবারিক জীবন: সুন্নতি বিয়ের ভিত্তি হল পারস্পরিক সম্মান, দায়িত্ববোধ, অধিকার আদায় এবং ধৈর্য। স্বামী-স্ত্রী একে অপরের প্রতি তাদের ইসলামী দায়িত্ব (স্বামীর দায়িত্ব, স্ত্রীর দায়িত্ব) সম্পর্কে সচেতন হলে, পারিবারিক কলহ ও বিচ্ছেদের হার কমে আসে। সন্তানরা একটি সুস্থ, সুরক্ষিত ও আদর্শবান পরিবেশে বেড়ে ওঠে, যা তাদের ভবিষ্যৎ জীবনের জন্য অমূল্য সম্পদ। সিলেটের এক স্কুল শিক্ষিকা আয়েশা আক্তার বলেন, “আমার বাবা-মায়ের বিয়ে ছিল সুন্নতি। তাদের মধ্যে ঝগড়া হত, কিন্তু কখনও একে অপরকে অবিশ্বাস করতেন না, ইসলামের সীমা লঙ্ঘন করতেন না। এই নিরাপত্তার অনুভূতিই আমাদের তিন বোনকে আজও শক্তিশালী করে রেখেছে।”
- সামাজিক শান্তি ও নিরাপত্তা: সুন্নতি বিয়ে ব্যভিচার, অবৈধ সন্তান জন্মদান, যৌন নির্যাতন, পারিবারিক সহিংসতা ইত্যাদি সামাজিক ব্যাধি রোধে অত্যন্ত কার্যকর ভূমিকা পালন করে। একটি শক্তিশালী পরিবার কাঠামো সমাজের ভিত্তি মজবুত করে এবং অপরাধ প্রবণতা কমায়। ইসলামী বিধান মেনে বিয়ে করলে যৌতুকের মতো সামাজিক অভিশাপও অনেকাংশে এড়ানো যায়, কেননা ইসলামে যৌতুকের কোনো স্থান নেই, বরং দেনমোহর নারীর অধিকার।
- আখিরাতে মুক্তি ও উচ্চ মর্যাদা: যে দম্পতি পরস্পরের প্রতি তাদের দায়িত্ব পালন করে, হালাল জীবিকা উপার্জন করে, সন্তানদের সৎ ও আল্লাহভীরু হিসেবে গড়ে তোলে, তাদের জন্য রয়েছে জান্নাতের অফুরন্ত নেয়ামত। রাসূল (সা.) বলেছেন, “স্বামী যখন তার স্ত্রীর মুখে এক লোকমা খাবার তুলে দেয়, তাতেও সে সওয়াব পায়।” (সহীহ বুখারী)। সুন্নতি বিয়ের মাধ্যমে গঠিত পরিবারের প্রতিটি সদস্য যদি ইসলাম মেনে চলে, তবে তাদের পুরো পরিবারই জান্নাতে একত্রিত হওয়ার সুসংবাদ রয়েছে হাদীসে।
সুন্নতি বিয়ের চ্যালেঞ্জ ও করণীয়: আধুনিক সমাজে ইসলামী বিধান বাস্তবায়ন
আধুনিক যুগে, বিশেষ করে বাংলাদেশের মতো দেশে যেখানে পশ্চিমা সংস্কৃতি, সামাজিক চাপ এবং অর্থনৈতিক অসাম্যের প্রভাব রয়েছে, সেখানে সুন্নতি বিয়ের পথ মসৃণ নয়। কিছু প্রধান চ্যালেঞ্জ ও তার ইসলামী সমাধান:
- অর্থনৈতিক চাপ ও বিলম্বিত বিয়ে: উচ্চ শিক্ষা, বেকারত্ব, চাকরির অনিশ্চয়তা এবং বিয়ের ব্যাপক ব্যয়ভার (যৌতুক, আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠান) অনেক যুবক-যুবতীকে বিয়ে করতে দেরি করায়। সমাধান: রাসূল (সা.) সামর্থ্যের দিকে লক্ষ্য রেখে সহজ-সরল বিয়েকে উৎসাহিত করেছেন। সাহাবীরা অত্যন্ত সাধারণভাবে বিয়ে করতেন। বর্তমানেও মসজিদে বা ঘরোয়া পরিবেশে মাত্র কয়েকজন নিকটাত্মীয়ের উপস্থিতিতে ইজাব-কবুল সম্পন্ন করে ফাতেহা খানি পড়ে নেওয়া যায়। ওয়ালিমা সামর্থ্য অনুযায়ী ছোট আকারে করা যায়। ইসলামে যৌতুক সম্পূর্ণ হারাম। এ ব্যাপারে সামাজিক সচেতনতা ও আইনের কঠোর প্রয়োগ জরুরি। সামর্থ্যবানদের উচিত গরিবদের বিয়েতে সাহায্য করা। রাসূল (সা.) বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোনো মুমিনের দুনিয়ার কষ্ট দূর করবে, আল্লাহ কিয়ামতের দিন তার কষ্ট দূর করবেন…” (সহীহ মুসলিম)।
- পারিবারিক হস্তক্ষেপ ও অযৌক্তিক শর্ত: কখনও কখনও পরিবার রীতি-রেওয়াজ, গোত্র, আর্থিক অবস্থা বা অযৌক্তিক দাবি (যেমন অতিরিক্ত দেনমোহর, বিলাসী অনুষ্ঠান) নিয়ে বিয়েতে বাধা সৃষ্টি করে। সমাধান: ইসলামে বিয়ের জন্য ধর্মভীরুতা ও চরিত্রই প্রধান মানদণ্ড। রাসূল (সা.) বলেন, “কোনো পুরুষ যখন তার ধর্ম ও চরিত্রে সন্তুষ্ট হয় এমন কাউকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়, তখন তোমরা তাকে বিয়ে দাও। যদি তা না কর, তাহলে পৃথিবীতে বিপর্যয় ও ব্যাপক ফিতনা দেখা দেবে।” (সুনানে তিরমিযী)। পরিবারের উচিত সন্তানের পছন্দকে গুরুত্ব দেওয়া, যতক্ষণ না তা ইসলামের সীমার মধ্যে থাকে। যৌক্তিক আলোচনার মাধ্যমে সমস্যা সমাধান করতে হবে।
- কুসংস্কার ও অপ্রয়োজনীয় রসম-রেওয়াজ: অনেক অঞ্চলে প্রচলিত রসম-রেওয়াজ (যেমন: বরের বাড়ির অতিরিক্ত দাবি, বাহারি সাজসজ্জা, গান-বাজনার নামে অশ্লীলতা, মাদক সেবন) ইসলামী বিধানের পরিপন্থী এবং সুন্নতি বিয়ের মৌলিক স্তম্ভগুলিকে ঢেকে ফেলে। সমাধান: ইসলামী জ্ঞান অর্জন করে কুরআন-সুন্নাহর আলোকে বিয়ের অনুষ্ঠান পরিচালনা করতে হবে। শুধু ইজাব-কবুল, দেনমোহর নির্ধারণ ও আদায় এবং সাক্ষী নিয়েই বিয়ে সম্পন্ন হয়। অন্যান্য অনুষ্ঠানাদি যদি ইসলামের পরিপন্থী না হয় এবং সামর্থ্যের মধ্যে হয়, তবে তা করা যেতে পারে, কিন্তু তা কখনই আসল বিয়ের চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে না। সমাজের বুজুর্গ ব্যক্তি ও আলেমদের এগিয়ে আসতে হবে কুসংস্কার দূর করতে। ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশের মতো সংস্থাগুলোও সহজ-সরল বিয়ের পদ্ধতি প্রচারে কাজ করছে।
- ডিজিটাল যুগে সম্পর্ক ও ‘লিভ-টুগেদার’ সংস্কৃতি: ফেসবুক, ম্যাসেঞ্জার সহজলভ্য হওয়ায় অবাধ মেলামেশা, হারাম সম্পর্ক এবং ‘লিভ-টুগেদার’ (বিবাহবিহীন একত্রে বসবাস) নামক ধ্বংসাত্মক সংস্কৃতি ছড়িয়ে পড়ছে, যা সুন্নতি বিয়ের ধারণাকে দুর্বল করে দিচ্ছে। সমাধান: তরুণ প্রজন্মকে ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে। পর্দা, পরপুরুষ/পরনারী থেকে দূরত্ব বজায় রাখার বিধান এবং হারাম সম্পর্কের ভয়াবহ পরিণতি সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারে সতর্কতা ও আল্লাহভীতিই পারে এই ফিতনা থেকে রক্ষা করতে। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এই বিষয়ে সচেতনতামূলক কর্মসূচি জোরদার করতে হবে। সঠিক সুন্নতি বিয়ের মাধ্যমে হালাল সম্পর্ক স্থাপনের গুরুত্ব তুলে ধরতে হবে।
জেনে রাখুন (FAQs)
প্রশ্ন: সুন্নতি বিয়েতে দেনমোহরের পরিমাণ কত হওয়া উচিত?
উত্তর: দেনমোহরের নির্দিষ্ট কোনো পরিমাণ ইসলামে নেই। এটি নির্ভর করে বর-কনের পারস্পরিক সম্মতি, সামাজিক প্রথা এবং বরের আর্থিক সামর্থ্যের উপর। তবে দেনমোহর হওয়া উচিত ন্যায্য ও পরিশোধযোগ্য। রাসূল (সা.)-এর যুগে দেনমোহর বিভিন্ন পরিমাণে হত। সর্বনিম্ন দেনমোহর হতে পারে রাসূল (সা.) কর্তৃক নির্ধারিত দশ দিরহামের সমমূল্য (যা বর্তমান হিসাবে খুব সামান্য)। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল দেনমোহর স্পষ্টভাবে নির্ধারণ করা এবং তা আদায়ের অঙ্গীকার করা।প্রশ্ন: ওয়ালি ছাড়া সুন্নতি বিয়ে কি বৈধ?
উত্তর: ইসলামী শরীয়তের অধিকাংশ আলেমের মতে, সাধারণত কনের জন্য বৈধ ওয়ালির উপস্থিতি বা সম্মতি ছাড়া বিয়ে বৈধ নয়। ওয়ালি কনের পক্ষ থেকে বিয়ের চুক্তি সম্পন্ন করেন বা অনুমোদন দেন। তবে কনেকে জোর করে বিয়ে দেয়া যায় না, তার সম্মতি আবশ্যক। যদি কনের বৈধ ওয়ালি (যেমন: বাবা, দাদা, ভাই ইত্যাদি) পাওয়া না যায় বা তারা ইসলামী বিধান মেনে বিয়ে দিতে অস্বীকৃতি জানায়, তবে ইসলামী আদালতের বিচারক (কাজী) তার ওয়ালির দায়িত্ব পালন করতে পারেন।প্রশ্ন: ফোন বা ভিডিও কলে সুন্নতি বিয়ে করা যায় কি?
উত্তর: ফোন বা ভিডিও কলে ইজাব-কবুল সম্পন্ন করাকে অধিকাংশ ইসলামী স্কলার বৈধ মনে করেন না সুন্নতি বিয়ের জন্য। কারণ, বিয়ের জন্য প্রয়োজন:- বর, কনের ওয়ালি (বা তাদের ওয়াকিল) এবং সাক্ষীদের একই স্থানে (অথবা এমনভাবে যেখানে তারা পরস্পরকে দেখতে ও শুনতে পায় এবং বুঝতে পারে যে বিয়ে হচ্ছে) উপস্থিত থাকা।
- ইজাব-কবুল সুস্পষ্টভাবে উচ্চারিত হওয়া এবং উপস্থিত সকলের শোনা।
ফোন বা ভিডিও কলের মাধ্যমে প্রায়ই সাক্ষীরা ঠিকভাবে শুনতে বা বুঝতে পারেন না, এবং ‘একই স্থানে উপস্থিতি’র শর্ত পূরণ হয় না। তাই সরাসরি মুখোমুখি উপস্থিতিতে বিয়ে সম্পন্ন করাই নিরাপদ ও সুন্নতসম্মত।
প্রশ্ন: সুন্নতি বিয়ের পরও কি রেজিস্ট্রি (নিকাহ রেজিস্ট্রেশন) করা জরুরি?
উত্তর: হ্যাঁ, অত্যন্ত জরুরি। যদিও ইসলামী দৃষ্টিকোণে সঠিক ইজাব-কবুল, সাক্ষী ও দেনমোহরের মাধ্যমেই বিয়ে শরীয়তসম্মত হয়, কিন্তু রাষ্ট্রীয় আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে এবং ভবিষ্যতে স্বামী-স্ত্রী ও সন্তানদের আইনী অধিকার (উত্তরাধিকার, ভরণপোষণ, পরিচয়পত্র ইত্যাদি) সুরক্ষিত করতে নিকাহ রেজিস্ট্রি বাধ্যতামূলক। বাংলাদেশে মুসলিম বিবাহ ও তালাক (নিবন্ধন) আইন, ১৯৭৪ অনুযায়ী বিয়ের ৩০ দিনের মধ্যে নিকাহ রেজিস্টারে রেজিস্ট্রেশন করা আবশ্যক। এটি সুন্নতি বিয়ের পরিপূরক একটি গুরুত্বপূর্ণ আইনী কর্তব্য। বাংলাদেশ সরকারের আইন মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইট এ সংশ্লিষ্ট আইনের বিস্তারিত পাওয়া যাবে।প্রশ্ন: প্রেমের মাধ্যমে বিয়ে করলে কি তা সুন্নতি বিয়ে হয়?
উত্তর: প্রেম বা ভালোবাসার মাধ্যমে বিয়ে করা ইসলামে নিষিদ্ধ নয়, তবে শর্ত হল সেই সম্পর্ক যেন সম্পূর্ণরূপে শরীয়তের সীমার মধ্যে থেকে গড়ে ওঠে। অর্থাৎ, পর্দা রক্ষা করা, অবাধ মেলামেশা না করা, শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন না করা এবং দ্রুত বিয়ের মাধ্যমে সেই সম্পর্ককে হালালের গণ্ডিতে নিয়ে আসা। যদি প্রেমের সম্পর্ক ইসলামী বিধান লঙ্ঘন করে গড়ে ওঠে, তাহলে তা গুনাহ। তবে সেই দম্পতি যদি পরে তওবা করে এবং ইসলামী বিধান মেনে পূর্ণাঙ্গ সুন্নতি বিয়ে (ইজাব-কবুল, দেনমোহর, সাক্ষী, ওয়ালির সম্মতি) সম্পন্ন করে, তবে তাদের বিয়ে বৈধ হবে। মূল বিয়ের চুক্তিই (আক্দ) মুখ্য, পটভূমি নয়।- প্রশ্ন: সুন্নতি বিয়েতে বর-কনে একে অপরকে দেখতে পারবে কি?
উত্তর: হ্যাঁ, অবশ্যই পারবে এবং করাও উচিত। বিয়ের প্রস্তাব গম্ভীর হওয়ার পর, পর্দার বিধান মেনে, উপযুক্ত পাত্র-পাত্রী একে অপরকে দেখতে পারে। এতে করে পরস্পরের প্রতি আকর্ষণ ও দাম্পত্য জীবনে সন্তুষ্টি বাড়ে। রাসূল (সা.) সাহাবীদেরকে বলতেন, “তোমরা (বিয়ে করার ইচ্ছা থাকলে) দেখে নাও। কেননা এতে তোমাদের মধ্যে স্থায়ী সম্পর্ক গড়ে উঠার সম্ভাবনা বাড়ে।” (সুনানে তিরমিযী, হাদীসটি সহীহ)। তবে এই দেখা-সাক্ষাৎ শালীন পরিবেশে, মাহরাম (যাদের সাথে বিয়ে হারাম) ব্যক্তির উপস্থিতিতে হওয়া উচিত এবং অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা বা আচরণ থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সুন্নতি বিয়ের গুরুত্ব ও আমাদের করণীয়
বাংলাদেশ একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ, যেখানে ইসলামী মূল্যবোধের সাথে আঞ্চলিক সংস্কৃতির মিশ্রণ ঘটেছে। এখানে সুন্নতি বিয়ের ধারণা প্রচলিত থাকলেও বাস্তবায়নে নানা বিচ্যুতি লক্ষ্য করা যায়। যৌতুক প্রথা একটি কুসংস্কার যা ইসলামে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও সমাজে মজবুতভাবে বসে আছে। আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানের চাপে অনেক মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবার ঋণের বোঝা নিয়ে ফেলে। অন্যদিকে, শহুরে জীবনে পাশ্চাত্য সংস্কৃতির প্রভাবে হারাম সম্পর্ক ও ‘লিভ-ইন’ সংস্কৃতি উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। এই অবস্থায় সুন্নতি বিয়ের প্রকৃত শিক্ষা ও অনুশীলনই পারে ব্যক্তিগত পবিত্রতা, পারিবারিক শান্তি ও সামাজিক স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে।
আমাদের করণীয়:
- জ্ঞান অর্জন: সুন্নতি বিয়ের বিস্তারিত নিয়ম-কানুন সম্পর্কে কুরআন, হাদীস এবং নির্ভরযোগ্য ইসলামী স্কলারদের রচনা থেকে জ্ঞানার্জন করতে হবে।
- সচেতনতা বৃদ্ধি: পরিবার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, মসজিদ এবং সামাজিক মাধ্যমে সুন্নতি বিয়ের গুরুত্ব, সহজ-সরল পদ্ধতি এবং কুসংস্কার/অপচয়ের কুফল সম্পর্কে সচেতনতামূলক আলোচনা ও প্রচার চালাতে হবে।
- সহজীকরণ: বিয়ের অনুষ্ঠানকে যতটা সম্ভব সহজ-সরল করতে হবে। অযৌক্তিক দাবি, বাহুল্য বর্জন করতে হবে। দেনমোহর ন্যায্য ও আদায়যোগ্য রাখতে হবে।
- যৌতুক নির্মূল: যৌতুক প্রথার বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে এবং বিদ্যমান আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে।
- তরুণ প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধকরণ: যুবক-যুবতীদের মধ্যে ধর্মীয় মূল্যবোধ, পর্দা ও চরিত্রের গুরুত্ব এবং সুন্নতি বিয়ের মাধ্যমে হালাল জীবনের সূচনা সম্পর্কে অনুপ্রাণিত করতে হবে।
- আইনী রেজিস্ট্রি: শরীয়তসম্মত বিয়ের পর অবশ্যই সরকারি নিকাহ রেজিস্ট্রারে বিয়ে নিবন্ধন করতে হবে।
ফারহানা ও আরিফুলের মতো অগণিত দম্পতির জীবনের শান্তি, স্থিতিশীলতা ও সুখের মূলে রয়েছে সেই অবিচল ভিত্তি – সুন্নতি বিয়ে। এটি কেবল একটি অনুষ্ঠান নয়; এটি ইসলামের পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থার সূচনা, যেখানে দাম্পত্য বন্ধন আল্লাহর নির্দেশিত পথে পরিচালিত হয়। যখন আমরা ইজাব-কবুলের স্পষ্ট উচ্চারণ, দেনমোহরের ন্যায্য নির্ধারণ ও আদায়, যোগ্য সাক্ষীর উপস্থিতি এবং ওয়ালির সম্মতিকে গুরুত্ব দেই, তখনই আমরা আমাদের বিয়েকে রাসূল (সা.)-এর পবিত্র সুন্নাহর আলোকে আলোকিত করতে পারি। এটি শুধু ব্যক্তিগত মুক্তি নয়, বরং একটি নৈতিক, স্থিতিশীল ও আল্লাহভীরু সমাজ গঠনের প্রথম ধাপ। তাই, আসুন, আমরা সবাই আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে, আমাদের আত্মীয়-স্বজনকে এই সহজ-সরল কিন্তু গভীর অর্থবহ পথে পরিচালিত করি। আপনার সন্তান, ভাই-বোন বা নিজের জন্য যখন বিয়ের সিদ্ধান্ত নেবেন, ইসলামিক স্কলার বা আপনার স্থানীয় মসজিদের ইমামের সাথে পরামর্শ করে সুন্নতি বিয়ের সকল শর্ত পূরণের দিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিন। একটি সুন্নতি বিয়ে শুধু দুটি জীবনকে নয়, পুরো একটি প্রজন্মকে আলোকিত করতে পারে।
জেনে রাখুন (FAQs) – [পূর্বে উল্লিখিত FAQs পুনরায় উদ্ধৃত]
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।