মৃত পর্যায়ে চলে গেলে নক্ষত্রের মধ্যে সামান্যতম কোনো পরিবর্তন ঘটতেও ১০ বিলিয়ন বা তার চেয়েও বেশি সময় লাগে। আসলে সময়ের ব্যবধান যখন কয়েক বিলিয়ন বছর হয়, তখন চূড়ান্ত অবস্থার মধ্যেও কমবেশি পরিবর্তন সম্পন্ন হয়। ব্ল্যাকহোল সাধারণত সবকিছু নিজের মধ্যে টেনে নিয়ে ধীরে ধীরে ভারী হয়।
কিন্তু বিলিয়ন বিলিয়ন বছর সময়ের ব্যবধানে বিবেচনা করলে দেখা যাবে মৃত ব্ল্যাকহোলও বিকিরণ করতে করতে ধীরে ধীরে ভর হারাতে থাকে। এই ধীর প্রক্রিয়ায় বিকিরণের মাধ্যমে আস্ত ব্ল্যাকহোলও নিঃশেষ হয়ে যেতে পারে। হোক সেটা অসীমতুল্য সময়, কিন্তু তারপরও এটি নিঃশেষ হবে। সূর্যের ভরের সমান কোনো ব্ল্যাকহোল এই প্রক্রিয়ায় ১০৬৫ বছরের ভেতর নিঃশেষ হয়ে যাবে (সূর্যের সমান ভরের নক্ষত্র সাধারণত ব্ল্যাকহোল হয় না। হিসাবের সুবিধার জন্য একক হিসেবে মাঝেমধ্যে সূর্যের ভর ব্যবহার করা হয়)।
সময়টা অত্যন্ত বেশি। আস্ত একটি গ্যালাক্সি অত্যন্ত ধীরগতিতে ধুঁকে ধুঁকে একটি কৃষ্ণবিবরে পরিণত হতে অত্যন্ত বেশি সময় লাগে। কিন্তু সূর্যের ভরের সমান ছোট একটি কৃষ্ণগহ্বর বিকিরণের মাধ্যমে নিঃশেষ হতে তার চেয়েও অনেক গুণ বেশি সময় লাগবে। এর বিকিরণের মাত্রা একদমই কম। স্বল্পমাত্রার কারণেই নিঃশেষ হতে এত বেশি সময় লাগে।
গ্যালাক্সির কেন্দ্রে এক বা একাধিক কৃষ্ণগহ্বর থাকে। এ ধরনের কেন্দ্রীয় কৃষ্ণবিবর অতি বৃহৎ ও অতি ভারী (সুপারম্যাসিভ) হয়। কেউ হয়তো প্রশ্ন করতে পারে, এ ধরনের কেন্দ্রীয় ব্ল্যাকহোলের বেলায় কী ঘটবে? এটি কি চিরকাল অস্তিত্ববান থাকবে, নাকি এটিও পরিবর্তনের চক্রে ক্ষয়ে গিয়ে তার রাজসুলভ জৌলুশ হারাবে? হ্যাঁ, এরও ক্ষয় হবে। এ ধরনের কেন্দ্রীয় সুপারম্যাসিভ কৃষ্ণগহ্বর ১০৯০ বছরের ভেতর ক্ষয়ে নিঃশেষ হয়ে যাবে। এর চেয়েও বড় ও ভারী ব্ল্যাকহোল আছে।
সেগুলোকে বলা হয় সুপার গ্যালাকটিক ব্ল্যাকহোল। কোনো ক্লাস্টারে থাকা কয়েকটি গ্যালাক্সি একত্র হয়ে এ ধরনের ব্ল্যাকহোল তৈরি করে। এ ধরনের অতি বৃহৎ ও অতি ভারী ব্ল্যাকহোলও ১০১০০ বছরে বিকিরণের মাধ্যমে ক্ষয়ে নিঃশেষিত ও বাষ্পীভূত অবস্থায় পরিণত হয়ে যাবে।
এই প্রক্রিয়াতে ১০১০০ বছরের মধ্যে গ্যালাক্সিগুলোর সব ব্ল্যাকহোল বিকিরণের মাধ্যমে ক্ষয়ে ক্ষয়ে সম্পূর্ণরূপে উবে যাবে। এরপর মহাবিশ্বে থাকবে শুধু শান্ত–শিষ্ট নিউট্রন নক্ষত্র ও শ্বেতবামন নক্ষত্র। আর থাকবে মহাজাগতিক মাপকাঠিতে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কিছু বস্তু। এই বস্তুগুলো গ্যালাক্সির ঘটনাবহুল সংঘর্ষের মুহূর্তে সেখান থেকে ছিটকে বেরিয়ে গিয়েছিল। এই বস্তুগুলো আর মৃত নক্ষত্রগুলো তখন চির অন্ধকারময় মহাবিশ্বে অনন্তকালব্যাপী একা একা দিন পার করবে।
জুমবাংলা নিউজ সবার আগে পেতে Follow করুন জুমবাংলা গুগল নিউজ, জুমবাংলা টুইটার , জুমবাংলা ফেসবুক, জুমবাংলা টেলিগ্রাম এবং সাবস্ক্রাইব করুন জুমবাংলা ইউটিউব চ্যানেলে।